|
|
|
|
আর বিশেষ সুবিধা নয় কলকাতাতেও |
নিজস্ব প্রতিবেদন
১৮ ডিসেম্বর |
দিল্লির বার্তা এল কলকাতায়। ফলে এখানেও আপাতত মার্কিন দূতাবাস-কর্তাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে গেল।
দেবযানী খোবরাগাড়েকে নিয়ে দিনভর বিস্তর নাটকের মধ্যে এই ভাবে ঢুকে পড়ল রাজ্যও।
তবে এ সবের পাশাপাশি কেন্দ্র একটি বিষয় এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছে। তা হল, চাপ বাড়াতে যতই সুযোগ-সুবিধা তুলে নেওয়া হোক, মার্কিন কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও রকম আপস করবে না ভারত। বস্তুত, কাল দিল্লি একের পর এক কড়া কদম নেওয়ার পরে আজ আমেরিকার মূল চিন্তাও এই বিষয়টি নিয়েই। এ দিন মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মারি হর্ফ জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করেন ভিয়েনা কনভেনশন মেনেই নিরাপত্তার দিকটি সুরক্ষিত রাখবে ভারত। কেন্দ্রও বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা এই ব্যাপারে কোনও ঝুঁকি নেবে না।
কাল দিল্লি যে সব পদক্ষেপ করেছে, রাজ্যের কাছে এ দিন সেই সংক্রান্ত প্রায় সব নির্দেশই এসেছে দিল্লি থেকে। দিল্লিতে দূতাবাসের সামনের ব্যারিকেডও সরানো হয়েছে। এখানে অবশ্য তা হয়নি। নির্দেশ আসার পরে দিল্লির মতোই রাজ্য এ বার দূতাবাসে চাকরিরত ভারতীয়দের স্যালারি স্লিপ, পরিচারকদের বেতন সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাইতে পারবে। তলব করতে পারবে মার্কিন কূটনীতিক, কর্মী ও পরিবারের পরিচয়পত্র। বাতিল হবে উপ-দূতাবাসের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের বিশেষ সুবিধাও। যদিও কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, এখানে উপ-দূতাবাসের সামনে পার্কিংয়ের কোনও ব্যবস্থাই নেই। সুতরাং সুবিধা বাতিলেরও প্রশ্ন উঠছে না। |
|
নিউ ইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে দেবযানী খোবরাগাড়ে। —ফাইল চিত্র। |
একই সঙ্গে নির্দেশিকা এসেছে কলকাতা বিমানবন্দরেও। সেখানে বলা হয়েছে, আপাতত বাতিল করতে হবে দূতাবাসের কর্তাদের বিশেষ ‘প্রোটোকল পাস’। সেখানেও পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবেন না মার্কিন উপ-দূতাবাস কর্তারা।
সাধারণত বিমান মন্ত্রকের ব্যুরো অব সিভিল অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (বিসিএএস) এই ধরনের পাস ব্যবহারের অনুমতি দেয়। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এত দিন সুসম্পর্কের খাতিরে মার্কিন উপ-দূতাবাসের দুই অফিসার বিশেষ পাস ব্যবহার করতেন। এই ‘প্রোটোকল পাস’ থাকলে কী সুবিধা?
টার্মিনালের যত্রতত্র ঘোরাফেরা করার সুবিধা তো আছেই। পাস থাকলে আরও একটি বিশেষ সুবিধা মেলে। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, “কলকাতা থেকে উড়ান ধরতে হলে মার্কিন উপ-দূতাবাসের কর্তারা আগে এই পাস নিয়ে লোক পাঠিয়ে দেন। তিনিই বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ থেকে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে রাখেন। কর্তা এসে পৌঁছন বিমান ছাড়ার মিনিট কুড়ি আগে। এবং এসে সোজা বিমান যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানে চলে যেতে পারেন।”
পাস তুলে নেওয়ার পরে এ বার থেকে আর পাঁচ জন সাধারণ যাত্রীর মতোই বিমানবন্দরে ঠিক সময়ে পৌঁছতে হবে। গাড়িও রাখতে হবে সাধারণের যাত্রীদের জায়গায়। লাইন দিয়ে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ থেকে যাবতীয় কাজ নিজেকেই সারতে হবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই পাস তুলে নেওয়ার ফলে রাষ্ট্রদূত-সহ ভিআইপিদের বসার জন্য যে সেরিমনিয়াল লাউঞ্জ রয়েছে, সেখানে ঢোকা থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন ওই অফিসারেরা।
তবে কূটনৈতিক শিবিরের লোকজনেরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ বিশেষ নেই। এটাকে বরং দূতাবাসের কর্তাদের সম্মানহানি বলা যেতে পারে। আর হ্যাঁ, বিমানবন্দরে যাতায়াত অবাধ না হওয়ার ফলে কাজের ক্ষেত্রে বিস্তর অসুবিধা হবে তাঁদের। একই সঙ্গে কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দিল্লি আসলে এ ভাবেই ওয়াশিংটনের উপরে চাপ তৈরি করতে চাইছে। বোঝাতে চাইছে, ভারতের কূটনীতিকদের সঙ্গে অনুচিত ব্যবহার করা হলে এ ভাবেই পাল্টা পাটকেল দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হবে।
কেন এই চাপ? কারণ বিদেশ মন্ত্রকের সন্দেহ, আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয় ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী কোনও ষড়যন্ত্র শিকার। সেই নিয়ে যাতে যথাযথ তদন্ত হয়, তাই চাপ জারি রাখতে হবে।
কীসের থেকে মনে হচ্ছে, পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে?
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, যে পরিচারিকাকে কম বেতন দেওয়ার অভিযোগে দেবযানীকে রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হয়, সেই সঙ্গীতা রিচার্ড জুন-জুলাই মাসে নিউ ইয়র্কেই নিখোঁজ হয়ে যান। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও ফল হয়নি। বিদেশ মন্ত্রক জানতে পেরেছে, দেবযানীর গ্রেফতারের মাত্র দু’দিন আগে ওই সঙ্গীতার স্বামী ফিলিপ ও দুই সন্তান নিউ ইয়র্কে যান। মার্কিন দূতাবাসই তাঁদের ভিসার বন্দোবস্ত করে। প্রথমে ফিলিপ দেবযানীর বিরুদ্ধে কম মজুরি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, “এর মধ্যে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ, পরিচারিকার পাকাপাকি মার্কিন নাগরিকত্বর বিনিময়ে রফার চেষ্টাও করা হয়। এর থেকেই স্পষ্ট যে এটা ষড়যন্ত্র।” কিন্তু কারা এই ষড়যন্ত্র করেছে, পরিচারিকাই বা এখন কোথায়, বা তাঁর স্বামী-সন্তানদের কেন ভিসা দিল মার্কিন প্রশাসন এ সব নিয়ে দিল্লি এখনও ধোঁয়াশায়।
বিদেশ মন্ত্রকের পোড়খাওয়া কূটনীতিকরা বলছেন, ভারতীয় কূটনীতিকরা দেশ থেকেই পরিচারক-পরিচারিকা নিয়ে যান। সরকারি কর্মী হিসেবে পাসপোর্ট তো বটেই, বেতনের বাইরেও তাঁদের নানারকম সুযোগ-সুবিধা দেয় সরকার। কিন্তু গোলমাল বাঁধে আমেরিকা-ইউরোপে যাওয়ার পরে। পাকাপাকি ভাবে থেকে যেতে পারলে অনেক সুযোগ-সুবিধা এ কথা বোঝার পরে তাঁরা প্রথমে উধাও হয়ে যান। তখন তাঁদের পাসপোর্ট বাতিল হয়। তার পরে উদয় হয়ে সেই পরিচারক-পরিচারিকা অভিযোগ করেন, তাঁদের মজুরি কম বা তাঁরা পাচারের শিকার। মানুষ পাচারের শিকার প্রমাণ হলে আমেরিকার বিশেষ ভিসা পেয়ে যান এঁরা। আর কয়েক বছর এই নিয়ে কাটাতে পারলেই মিলতে পারে নাগরিকত্বও।
এ ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে বলেই সন্দেহ দিল্লির। খুরশিদ এ দিন বলেন, “দেবযানী নির্দোষ। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা আমার দায়িত্ব।” প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও এই ঘটনাকে নিন্দনীয় বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এর মধ্যে দেবযানীকে পুরোপুরি কূটনৈতিক রক্ষাকবচের আওতায় আনতে তাঁকে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতীয় স্থায়ী মিশনে নিয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে তাঁকে ফের পুলিশি হেনস্থার মুখোমুখি হতে হবে না (তাঁকে যে নগ্ন করে তল্লাশি করা হয়েছিল, তা মেনে নিয়েছেন মারি হর্ফ। এই গ্রেফতারির পিছনে মার্কিন বিদেশ দফতরের ভূমিকা থাকলেও পাকড়াওয়ের পরে মার্শালরা তাদের আইন মেনে তল্লাশি করেছে বলেই দাঁর দাবি)। কিন্তু পুলিশি অভিযোগ থাকায় এবং পাসপোর্ট
দিল্লি দ্রুত কঠিন পদক্ষেপ করায় কিছুটা হলেও চাপে আমেরিকা। তা বোঝা গিয়েছে মার্কিন উপবিদেশসচিব নিশা দেশাই-বিসওয়ালের এ দিনের কথাতেও। তিনি জানান, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দু’দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই ঘটনা দিয়ে মাপা যাবে না। কিন্তু আজ সংসদের দুই কক্ষেই দাবি উঠেছে, দেবযানীর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তুলে নিতে আমেরিকার উপর চাপ তৈরি করা হোক। নেওয়া হোক আরও কড়া কদম। |
দিনভর দেবযানী |
• কঠোর পদক্ষেপ করতে রাজ্যকেও নির্দেশ দিল্লির।
• তবে কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে আপস নয়।
• নিরাপত্তা নিয়েই উদ্বিগ্ন আমেরিকার বার্তা ভারতকে।
• কূটনৈতিক সুরক্ষাকবচ পেতে রাষ্ট্রপুঞ্জে বদলি দেবযানী।
• গ্রেফতারির পিছনে ষড়যন্ত্র দেখছে ভারত।
• দেবযানীকে নগ্ন করে তল্লাশি হয়েছে, মানল আমেরিকা।
• শিবশঙ্কর মেননকে ফোনে দুঃখপ্রকাশ জন কেরির। |
|
কেরির দুঃখপ্রকাশ |
নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা নয়, দেবযানী খোবরাগাড়ের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করল আমেরিকা। বুধবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। দেবযানীর সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন কেরি। দিল্লির অবশ্য দাবি ছিল, নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে আমেরিকাকে। এ দিন ভারতের বিদেশসচিব সুজাতা সিংহের সঙ্গে কথা হয় মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরমানের। কথোপকথন ইতিবাচক হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
|
পুরনো খবর: মার্কিন কূটনীতিকদের সুরক্ষা ও সুবিধা ছেঁটে পাল্টা জবাব দিল্লির |
|
|
|
|
|