|
|
|
|
ছাউনিতে অবাধ গতির জোরেই চরবৃত্তি প্রাক্তন সেনার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মী হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন ছাউনিতে অবাধ যাতায়াত ছিল সুবেদার মদনমোহন পালের। অভিযোগ, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীর গোপন তথ্য সংগ্রহের কাজে তাঁকে ব্যবহার করত পাক গুপ্তচর সংস্থা। বেশ কয়েক মাস ধরে নজর রাখার পর মদনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
৫৩ বছরের মদনের বাড়ি ব্যারাকপুরের দেবপুকুর এলাকায়। তাঁর বাড়ি থেকে বিভিন্ন সেনা ছাউনির মানচিত্র, সেনাবাহিনীর প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ নথি, ল্যাপটপ ও বেশ কয়েকটি সিমকার্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর মোবাইলে নিয়মিত বিদেশ থেকে ফোনও আসত। বাড়িতে বহিরাগতদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এ দিন আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১৩ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মদনের গ্রেফতার চিন্তা বাড়িয়েছে গোয়েন্দাদের। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, একই ভাবে সেনাবাহিনীর অন্য প্রাক্তনীদেরও চরবৃত্তির কাজে ব্যবহার করে থাকতে পারে বিদেশি গুপ্তচর সংস্থা। যাঁরা অবসর নিয়েছেন, সেনা ছাউনির ভিতরে তাঁদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিয়েও এ বার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের মুখপাত্র গ্রুপ ক্যাপ্টেন তরুণ সিংঘা বলেন, “সেনা ছাউনির গোপন এলাকায় এঁদের প্রবেশাধিকার থাকে না। কেবল ক্যান্টিন-সহ কয়েকটি সাধারণ এলাকায় তাঁরা যাতায়াত পারেন। এই সব এলাকায় ঘুরে যে সব তথ্য এঁরা জোগাড় করতে পারেন, সেই তথ্য পাচার করলেও দেশের বা সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা কোনও ভাবে বিঘ্নিত হওয়ার কথা নয়।”
স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার মদনের। এক মেয়ে অসমের সেনা-স্কুলে পড়াশোনা করেন। অন্য মেয়ে বি-টেক-এর ছাত্রী। মদন সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন সিপাই পদে। পরে পদোন্নতি হয়ে সুবেদার হন। পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরায় মদন জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ইন্টারনেটে চাকরির খোঁজ করছিলেন। ২০১১ সালে নভেম্বর মাসে একটি ওয়েবসাইটে দেখেন প্রাক্তন সেনা-কর্মীদের চাকরির জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। তিনি আবেদন করেন। কিছু দিনের মধ্যেই মোবাইলে ফোন আসে। মদনের দাবি, নিজেকে মেজর বিক্রম সিংহ পরিচয় দিয়ে অন্য প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি বলেন, ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র)-এর হয়ে তাঁকে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন সেনা ছাউনি সম্পর্কে বিস্তারিত খবর, কোন রেজিমেন্ট কোথায় পাঠানো হচ্ছে, নতুন কোনও উইং খোলা হচ্ছে কি না, নতুন কোনও ছাউনি বানানো হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কে বিশদে খবর জানাতে হবে তাঁকে।
পুলিশকে মদন জানান, চাকরিদাতাদের তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, সেনাবাহিনী সম্পর্কে তো সমস্ত তথ্য ভারত সরকারের কাছে রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই সব তথ্যের প্রয়োজন কী? তখন তাঁকে বলা হয়, সেনাবাহিনী যে তথ্য দেয়, তা যাচাই করে দেখতেই এই সমান্তরাল তথ্য জোগাড়ের প্রয়োজন।
পুলিশ সূত্রের খবর, মদন জানিয়েছেন, এই কথা বিশ্বাস করেই পাঁচ হাজার টাকা মাসোহারায় তিনি কাজ শুরু করে দেন। কখনও হাসিমারা, কখনও পানাগড়, কখনও উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও সেনা ছাউনিতে ঘুরে ঘুরে তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করতেন তিনি। প্রাক্তন সেনা-কর্মী হওয়ায় এই সব সেনা ছাউনির ভিতরে তাঁর অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল। তিনি ক্যান্টিনে গিয়ে বসে থাকতেন। গল্প করতেন চেনা-পরিচিতদের সঙ্গে। এই সময়ে তাঁর কানে যা আসত, লিখে পাঠিয়ে দিতেন ই-মেল মারফত।
তবে মদনের দাবি, প্রায় ৮ থেকে ১০ মাস কাজ করার পরে তাঁর ধারণা হয়েছিল, তাঁকে ভুল বোঝানো হয়েছে। বিদেশের কোনও সংস্থা তাঁর কাছ থেকে এই সব তথ্য নিচ্ছে বলে সন্দেহ করেছিলেন তিনিও। পুলিশকে তিনি এও জানিয়েছেন, চাকরিদাতাদের তরফে যে সমস্ত নম্বর থেকে ফোন আসত, সেগুলি সবই চার বা পাঁচ সংখ্যার। নম্বরগুলিতে পাল্টা ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফোন করলে বলা হতো, ওই নম্বরগুলির কোনও অস্তিত্ব নেই। ইতিমধ্যে সে রকমই এক বার ফোন এলে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর অফিসটা ঠিক কোথায়। মদনের দাবি, তাঁকে বলা হয়েছিল, তিনি দু’বছরের জন্য অস্থায়ী পদে রয়েছেন। চাকরি স্থায়ী হয়ে গেলেই দিল্লিতে গিয়ে সকলের সঙ্গে তিনি দেখাসাক্ষাৎ করতে পারবেন।
এই ঘটনার পরে তিনি বেশ কয়েক দিন কাজ বন্ধ রেখেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন মদন। কিন্তু পরে আবার শুরু করেন। কেন কাজ বন্ধ করলেন, কেন ফের শুরু করলেন, সদুত্তর দিতে পারেননি মদন। তবে গোয়েন্দারা জেনেছেন, এই সময়ে তাঁর মাসোহারা বেড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা হয়ে গিয়েছিল। অনেকগুলি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টও রয়েছে তাঁর। কখনও কলকাতা, কখনও কালিয়াচকের কোনও ব্যাঙ্ক থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসত। |
|
|
|
|
|