অপ্রত্যাশিত উপহার দিলেন রঘুরাম রাজন।
লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটবেন, এ রকম আশঙ্কাই ছিল শিল্প ও শেয়ার বাজার মহলে। কিন্তু তার বদলে ঋণনীতি ফিরে দেখতে গিয়ে বুধবার সব হারই অপরিবর্তিত রাখলেন তিনি। ফলও পেয়েছেন হাতেহাতে। এক দিকে রাজনের এই ‘বিচক্ষণতা’র প্রশংসা করেছে শিল্প ও বণিকমহল। অন্য দিকে, গত সাত দিনে এই প্রথম এক ধাক্কায় ২৪৮ পয়েন্ট বেড়েছে সেনসেক্স। যা রাজনের প্রতি বাজারের আস্থারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। |
এ দিন ঋণনীতির মধ্য ত্রৈমাসিক পর্যালোচনায় রঘুরাম রাজন ৪ শতাংশেই অপরিবর্তিত রেখেছেন নগদ জমার অনুপাত বা সিআরআর (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে তার আমানতের যে-অংশ বাধ্যতামূলক ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে জমা রাখতে হয়)। ৭.৭৫ শতাংশেই রাখা হয়েছে রেপো রেট (স্বল্প মেয়াদে ব্যাঙ্কগুলি যে-হারে আরবিআইয়ের কাছ থেকে ঋণ নেয়)।
ঋণনীতিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ দেখিয়েছেন রাজন। সেগুলি হল:
• মূল্যবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়েও দুর্বল আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে তোলা
• খাদ্যপণ্যের দর না-কমলে ও তার জেরে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি বাগে না-এলে ব্যবস্থা
• সে ক্ষেত্রে ২৮ জানুয়ারি পরবর্তী ঋণনীতি পেশের আগেই সুদের হার পরিবর্তন
• কৃষিতে ভাল ফলন, রফতানি বৃদ্ধি ও থমকে থাকা প্রকল্পেগতি আসার হাত ধরে অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ভাগে ভাল আর্থিক বৃদ্ধির আশা
• পরবর্তী পরিসংখ্যানের দিকে সতর্ক দৃষ্টি শীর্ষ ব্যাঙ্কের
• পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান দেখে তবেই নীতিগত সিদ্ধান্ত
রাজন সুদ না-বাড়ানোয় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে শিল্পমহল। তাদের আশঙ্কা ছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক রেপো রেট অন্তত ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ালে তাদের ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়বে। পাশাপাশি, গাড়ি-বাড়ি ঋণের খরচ না-বাড়ায় খুশি সাধারণ মানুষও। সুদ বাড়লে তাঁদের ইএমআই আরও বাড়ত।
ঋণনীতির পর্যালোচনায় এ বার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে-পথে হেঁটেছে, তা সঠিক বলেই মনে করছেন ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞরা। ইউবিআইয়ের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভাস্কর সেন বলেন, “এখন সুদের হার বাড়ালে অবস্থা আরও ঘোরালো হতে পারত। তাই সেটা না-করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সঠিক পদক্ষেপ করেছে। এ বার ফসল ভাল হওয়ায় বাজারে বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম কমতে পারে, এই ধারণার উপর নির্ভর করেই রঘুরাম রাজন সুদের হার বাড়ানোর পথে এই মুহূর্তে হাঁটেননি। তবে যদি দেখা যায় যে, তিনি যা ভেবেছিলেন, তা ঘটছে না, তা হলে চটজলদি ব্যবস্থা নিতে তিনি দ্বিধা করবেন বলে আমার মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে ঋণনীতির আগামী পর্যালোচনার আগেই পদক্ষেপ করতে পারেন রাজন।”
ভাস্করবাবুর মতো আর এক ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্তও মনে করেন, সুদের হার না-বাড়িয়ে ঠিক কাজই করেছেন রাজন। দত্ত বলেন, “ভাল করে খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, মূল্যবৃদ্ধির হার এখনই আর বাড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এ জন্য অনেকাংশেই দায়ী ছিল বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার মূল্য হ্রাস ইত্যাদি। বর্তমানে ওই বিষয়গুলি অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছে। খাদ্যপণ্যের দামও এখন কমবে বলেই আশা করা যায়। তাই এই অবস্থায় সুদের হার বৃদ্ধি না-করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সঠিক পদক্ষেপই করেছে।” এ দিকে, স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য বলেছেন, এখন তাঁরা আমানতে সুদ কমাচ্ছেন না। কারণ, তাতে গ্রাহক অসুবিধায় পড়েন।
|