রাজ্য সরকার তার আর্থিক দায় সামলাতে যে-পদক্ষেপ করছে, তার দিশা সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। আর্থিক ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ অর্থনীতির পাঠ মেনে হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে রাজন ওই মন্তব্য করেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার তিনি কলকাতায় আসেন।
একই সঙ্গে অবশ্য অত্যাবশ্যক জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রাজ্য সরকারের নীতিই দায়ী বলে ইঙ্গিত দেন রাজন। শীতকালেও শাক-সব্জির দাম এত বেশি হওয়ার কারণ কী, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এর জন্য বিভিন্ন রাজ্যের কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ন্ত্রণ (এপিএমসি) আইনের কিছু শর্তই দায়ী। কারণ, এর ফলে কৃষিপণ্য বণ্টনের খরচ বেশি পড়ছে।” কৃষির বিষয়টি রাজ্য সরকারের অধীন। তাই রাজ্যই এ ব্যাপারে আইন তৈরির অধিকারী। কিন্তু ক’বছর আগে কেন্দ্র একটি মডেল এপিএমসি আইন তৈরি করে বিভিন্ন রাজ্যের কাছে পাঠায়। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট বা তৃণমূল সরকার-সহ অনেক রাজ্যই তা গ্রহণ করেনি। বিভিন্ন রাজ্যের এ পি এম সি আইন খতিয়ে দেখে এ ক্ষেত্রে একটি মডেল আইন তৈরি করা হলে ভাল ফল হতে পারে বলে এ দিন মন্তব্য করেন রাজন।
প্রসঙ্গত, এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর যখন সাংবাদিক বৈঠক করছেন, তার কিছুক্ষণ আগেই খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়ার পাশাপাশি শিল্পোৎপাদন কমার খবর প্রকাশিত হয়। সার্বিক ভাবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানান রাজন। তবে চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে আগামী ঋণ -নীতিতে সুদের হার ফের বাড়ার সম্ভাবনা আছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য রাজন এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি শুধু বলেন, “পাইকারি মূল্য সূচক-সহ আরও কিছু তথ্যের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। সেগুলি জানার পরই এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নেবে।”
নতুন ব্যাঙ্ক-লাইসেন্স মঞ্জুর করার ব্যাপারে পুরনো সময়সূচি মেনে চলার সম্ভাবনা কম বলেই এই দিন ইঙ্গিত দেন রাজন। তিনি বলেন, নতুন বছরের গোড়ার দিকেই লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কতগুলি লাইসেন্স দেওয়া হবে, তা-ও এখনও ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি।
রাজন বলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিষয়টি নিয়েও বিশেষ উদ্বিগ্ন। তাঁর আশঙ্কা ওই সব সংস্থা এমন ভাবে টাকা তুলছে যে, অনেক ক্ষেত্রেই তা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অথবা অন্য কোনও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এক্তিয়ারের বাইরে। আর্থিক ক্ষেত্রের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যৌথ ভাবে এ ব্যাপারে কিছু করার কথা ভাবলে সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
|