ব্যাঙ্কের ধর্মঘটে যুক্ত এটিএম-ও, ভোগান্তি দিনভর
ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের কথা অনেকেই জানতেন। কিন্তু এটিএম বন্ধ থাকবেতা প্রায় কেউই জানতেন না! বুধবার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে জরুরি প্রয়োজনে এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে হাজার হাজার গ্রাহককে তাই ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ধর্মঘটীরা জানান, ব্যাঙ্কের সঙ্গে এ বার প্রায় পুরো এটিএম পরিষেবাই বন্ধ ছিল। তবে ব্যতিক্রম হাসপাতালের এটিএম। সেগুলি খোলা ছিল সারা দিনই।
দেশব্যাপী এক দিনের প্রতীকী ব্যাঙ্ক ধর্মঘট ডেকেছিল ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়নস। অন্যান্য বার এমন দিনে ব্যাঙ্কের শাখা বন্ধ থাকলেও অনেক এটিএম-এর দরজা খোলা থাকত। ফলে তেমন অসুবিধায় পড়তে হত না গ্রাহকদের। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এ বারও তেমনটাই হবে ধরে নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এ দিন সকাল থেকেই ব্যাঙ্কের সঙ্গে এটিএম-এর ঝাঁপও বন্ধ ছিল।
বন্ধ এটিএম। বুধবার, ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।
কেন? ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মঘটীদের বক্তব্য, ব্যাঙ্ক ধর্মঘটে বরাবরই এটিএম অন্তর্ভূক্ত থাকে। তবু অনা্যন্য বার নিরাপত্তারক্ষীরা এটিএম খোলা রাখতেন। তাই সাধারণ মানুষকে তেমন অসুবিধায় পড়তে হত না। এ বার এটিএম-এর নিরাপত্তাকর্মীরা নতুন ইউনিয়ন তৈরি করে ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। তাই প্রায় সব এটিএম-এর দরজাই ছিল বন্ধ। তবে ব্যাঙ্ক পরিষেবায় যুক্ত অন্য একটি অংশের বক্তব্য, এমন দিনে এটিএম চালু থাকলে ধর্মঘটের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। এ বারে তাই এটিএম বন্ধ রাখার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে, যার জেরে নাকাল হতে হয়েছে বহু মানুষকে। উদ্যোক্তারা অবশ্য অধিকাংশ ব্যাঙ্ক এবং এটিএম-এর দরজা বন্ধ থাকায় জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এটিএম বন্ধ থাকার কথা না জেনেই এ দিন বেলায় নিউমার্কেট চত্বরে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন বহু মানুষ। সেখানে কলকাতা পুরসভার গায়েই লাগোয়া পরপর আটটা এটিএম। সকাল থেকেই প্রত্যেকটির হয় পুরো, অথবা অর্ধেক ‘শাটার’ নামানো। প্রবল জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে অনেকেই অর্ধেক খোলা শাটারের সামনে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তাকর্মীর কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘‘টাকা তোলা যাবে?” উত্তর গিয়েছে বিনীত ভাবে, “আজ বন্ধ। আগামী কাল আসুন।” চোখমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফিরতে হয়েছে সকলকে।
যেমন, চেতলার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা সাউ। বন্ধুর সঙ্গে বড়দিনের কেনাকাটা করতে বেরিয়েছিলেন। পুরসভার ওই এটিএম বন্ধ থাকায় সব ‘প্ল্যান’ ভেস্তে গিয়েছে। পড়াশোনার কারণে কলকাতায় থাকেন দুর্গাপুরের অনীক বিশ্বাস। খবর এসেছে, বাড়ির এক জন অসুস্থ। কিছু টাকা নিয়ে দ্রুত ফিরতে হবে বলে এটিএম-এ গিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ। বাধ্য হয়ে এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে রওনা দেন তিনি। এটিএম থেকে টাকা তুলতে না পেরে এক দিনেই ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে বলে জানান বেলগাছিয়ার দেবপ্রিয় মৈত্র। ধর্মঘটীদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “কেন এ ভাবে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলা হয়?” জরুরি কারণে টাকার জন্য এক জায়গায় এটিএম-এর দরজা বন্ধ দেখে শহরের অন্য প্রান্তে ছুটেছেন কেউ কেউ। তাঁদেরও ফিরে যেতে হয়েছে খালি হাতেই।
ব্যাঙ্কের সঙ্গে এটিএম পরিষেবাও পুরোপুরি বন্ধ থাকায় মানুষের অসুবিধার কথা জানেন ধর্মঘটী নেতারা। তাঁদের যুক্তি, এ বার যে এটিএম বন্ধ থাকবে, তা আগে থেকেই প্রচার করা হয়েছিল। গ্রাহকেরা অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, “যে কোনও কাজেই টাকার প্রয়োজন। তার উৎসমুখ বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ, মানুষকে বিপদে ফেলে দেওয়া। দাবি আদায়ে ব্যাঙ্কের শাখা বন্ধ রাখলেই চলে। মানুষের স্বার্থেই এটিএম খোলা রাখা উচিত ছিল।
দুর্ভোগ যা-ই হোক, ধর্মঘট সফল বলে দাবি করেছে ইউনাইটেড ফোরাম। তাদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ-সহ অধিকাংশ রাজ্যে ব্যাঙ্কের ঝাঁপ খোলেনি। এটিএম পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “কর্মীদের নতুন বেতন-চুক্তি স্বাক্ষর হতে আড়াই-তিন বছর লাগছে। এর পরিবর্তন চাই।” অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, “আশা করি, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন আইবিএ এ বার নড়েচড়ে বসবে। দাবি না মানলে বড় মাপের আন্দোলন হবে।”

এটিএমেও কোপ
পুরনো বেতন চুক্তি ২০১২-র অক্টোবরে শেষ হয়েছে। নতুন চুক্তি নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন আইবিএ উদাসীন। এই দাবিতে বুধবার ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সংগঠন ইউএফবিইউ। এর জেরে এটিএমও বন্ধ ছিল। নিরাপত্তাকর্মীরা ধর্মঘটে সামিল হন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.