রঞ্জি ট্রফির ব্যর্থতা মুছতে ক্রিকেট কাঠামোয় বদলের ডাক মনোজের
রে, উনি কে? মনোজ তিওয়ারি না?
সকাল সাড়ে দশটার ইডেন। লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র বাংলার প্র্যাকটিস চলছে। আর চোখে সানগ্লাস, জ্যাকেট-জিনসে এক বছর সাতাশের যুবককে দেখা যাচ্ছে কখনও কোচ অশোক মলহোত্র-র সঙ্গে বৈঠকে, কখনও বা বঙ্গ ক্রিকেটারদের সঙ্গে ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণে।
ভুল নয়। উনি মনোজ তিওয়ারিই বটে! উত্তরপ্রদেশ ম্যাচের আগে বাংলা সংসারের অপ্রত্যাশিত অতিথি।
বেশ খানিকটা রোগা হয়ে গিয়েছেন। জিজ্ঞেস করলে মুচকি হেসে উত্তর আসছে, “জ্যাকেট তো ওই জন্যই পরলাম। যাতে বোঝা না যায়!” বেঙ্গালুরুর রিহ্যাব-পর্ব শেষে (হাঁটুর চোটে ভুগছেন) বাংলায় ফিরেছেন সবে, বাকিটা হবে এখানে, টিমমেটদের সঙ্গে।
বাংলার জার্সিতে চলতি মরসুমে আর নামতে পারবেন না। সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁর শরীরী উপস্থিতি যখন থাকবে, তখন পেপ-টক নিতেও বা অসুবিধে কোথায়?
যা হল। শনিবার থেকে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন যুদ্ধের আগে সন্দীপন দাস-সুদীপ চট্টোপাধ্যায়দের মতো জুনিয়র সতীর্থদের মনোজ দু’টো কথা বলে গেলেন।
এক) দু’টো ম্যাচে ছ’পয়েন্ট পাওয়া অসম্ভব নয়। মনে রাখবে, তুমি যখন বাংলা টিমে আছো, নিজের যোগ্যতাতেই আছো। কিছু দেখেই তোমাকে নেওয়া হয়েছে।
দুই) ক্লাব ম্যাচে যেমন খেলে থাকো, এখানেও সে ভাবেই খেলো। চাপ নিয়ে কঠিন যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলো না।

বাইশ গজে নেই। তবু বৃহস্পতিবার থেকে বাংলার সংসারে মনোজ।
ইডেনে সঙ্গী অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

“আমি খেলি চাই না খেলি, ক্যাপ্টেন বললে তো আমাকে আসতেই হবে। আজ প্র্যাকটিসে দেখলেন, আমি ম্যাচেও আসব,” প্রায় ঘণ্টা চারেক বাংলা ড্রেসিংরুমে কাটিয়ে ইডেন থেকে বেরনোর পর বলছিলেন মনোজ। যিনি ড্রেসিংরুমে না থেকেও সমপরিমাণ টেনশনে আক্রান্ত। যিনি বরাবরের মতো এ বারও বাংলা রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালের রাস্তা কঠিন করে ফেলায়, দৃশ্যত হতাশ। সত্যি বলতে, উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে বাংলা যদি ইডেনের গ্রিন টপ থেকে ছ’পয়েন্ট না তুলতে পারে, তা হলে এ বারের মতো রঞ্জি অভিযান কার্যত শেষ।
“প্রত্যেক বছর একই ব্যাপার ঘটে চলছে। সবাই আমরা খেটে চলি, রঞ্জিতে ভাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু দিনের শেষে সেই এক ব্যাপার। কখনও ব্যাটিং ডোবাচ্ছে, কখনও ফিল্ডিং,” বলে দিচ্ছেন প্রাক্তন বাংলা অধিনায়ক। আর চূড়ান্ত হতাশায় কি না কে জানে, পরোক্ষে সিএবিকেও রঞ্জিতে টানা ব্যর্থতার জন্য কিছুটা দায়ী করে রাখলেন। বঙ্গ ক্রিকেটের এমন টানা ব্যর্থতার চালচিত্রের পিছনে দু’টো কারণ মনোজ দেখতে পাচ্ছেন।
নিয়ম করে রঞ্জি-প্রস্তুতিতে দেরি।
স্থানীয় ক্রিকেটের পরিকাঠামো।
“বারবার একটা কথা বলেছি যে, রঞ্জি প্রস্তুতিটা আরও আগে থেকে নেওয়া উচিত। সেটা হচ্ছে না,” বলে তাঁর পরবর্তী সংযোজন, “আর একটা কথা। ছোট মাঠে খেলে ভাল রঞ্জি প্লেয়ার উঠবে না। বড় মাঠে খেলতে হবে। ছোট মাঠে যারা ব্যাটের কানা দিয়ে বল বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দেয়, বড় মাঠে তারা মাঠ পার করতে পারছে না। তাই আমাদের ক্রিকেটের রি-স্ট্রাকচার দরকার। তা ছাড়া এ বার শুনলাম প্রচুর ক্যাচও পড়েছে। এ ভাবে রঞ্জি জেতা যায়?”
মনোজ ক্ষুব্ধ। ইডেনের গ্রিন টপ নিয়ে আতঙ্কিত। বলছেন, “অতীতে গ্রিন টপে কিন্তু ব্যাকফায়ার করেছে।” বাংলা কোচ আবার বোঝাচ্ছেন, ছ’পয়েন্টের জন্য সবুজ পিচ ছাড়া তাঁর গতি নেই। বলছেন, টিমের থেকে তিনি তিনটে জিনিস চান এমন চাপের ম্যাচে। দায়বদ্ধতা। দায়িত্ব। আর একজন পেসারে থেকে পাঁচ উইকেট। অশোক মলহোত্রের গলায় আফসোস, “আজ শামি, ঋদ্ধি, মনোজ থাকলে কে বলতে পারে আমরা এখনই কোয়ার্টারে চলে যেতাম না?”
শনিবার থেকেও অশোকের হাতে মনোজ-ঋদ্ধি-শামি, কেউ নেই। বাড়তি যন্ত্রণা মরসুমে দু’টো সেঞ্চুরি করা অরিন্দম দাসের পিঠের চোট। এ দিন নেট করতে পারেননি অরিন্দম।
মহম্মদ কাইফ, আর পি সিংহদের উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে ময়দানের ‘চিনের প্রাচীরের’ নামার সম্ভাবনা শোনা গেল ক্রমশ কমছে।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.