অভাব দেখেই বড় হয়েছে সে। একে সঙ্গে নিয়ে আরও অনেক পথ পেরোতে হবে সে কথাও সে জানে। তাই মন দিয়ে সে শুধু অনুশীলন করেছে ক্যারাটের। তার ফলও মিলেছে। অল ইন্ডিয়া কিওকুশিন ক্যারাটে অর্গানাইজেশন আয়োজিত ন্যাশনাল ওপেন ক্যারাটে টুর্নামেন্ট ২০১৩’র রানার্স হয়েছে বছর তেরোর পামোলিকা দত্ত। নবদ্বীপের বঙ্গবাণী গার্লসের অষ্টম শ্রেণীর এই ছাত্রী এবার টুর্নামেন্টে যোগদানকারী প্রতিযোগীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নবদ্বীপের বাসিন্দা পামোলিকার বাবা গোপাল দত্ত পেশায় একটি পাওয়ার লুমের কর্মী। মা লক্ষ্মী দত্ত একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে কাজ করেন। অভাবের সংসারে মেয়েকে নিয়ে কোনওরকম বাহুল্য করতে পারেননি তাঁরা। তারই মাঝে মেয়েকে ক্যারাটে শেখার জন্য একটি স্কুলে ভর্তি করেছিলেন গোপালবাবু। পামোলিকার মা লক্ষ্মীদেবী বলেন, “আগে আমরা বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে থাকতাম। বছর চারেক আগে পারুলিয়ায় একটি ক্যারাটে শেখানোর স্কুল চালু হয়। সেখানে আমার মেয়েই ছিল প্রথম ছাত্রী। ওই স্কুলটা এখন নবদ্বীপে। তাই আমার মেয়ে ওখানেই অনুশীলন করে।” |
পুরস্কার নিয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
|
সেই শুরু। তারপর থেকে স্কুল শেষ হলে আর খেলার মাঠ নয়। পামোলিকার গন্তব্য ক্যারাটে ক্লাস। ঝাড়খণ্ডের বোকারোতে সদ্য সমাপ্ত ন্যাশনাল ওপেন ক্যারাটে টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতার আসরে রানার্স হতে গিয়ে কেবল দেশের অনান্য রাজ্যের প্রতিযোগীদের নয়, পামোলিকা হারিয়েছে আশৈশব সঙ্গী অভাবকেও।
ক্যারাটে শিক্ষক সুদীপ ভৌমিকও আশাবাদী পামোলিকার সম্পর্কে। তিনি জানান, ২০১১ সালেও একবার রাজ্য পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল পামোলিকা। কিন্তু যেহেতু জাতীয় স্তরে ওপেন প্রতিযোগিতা হয়, তাই ওয়েস্ট বেঙ্গল কিওকুশিন ক্যারাটে অ্যাসোসিয়েশন তাকে সে বার ন্যাশনাল ওপেনে নামার অনুমতি দেয়নি। এখন পামোলিকার বয়স তেরো। তাতেই কলেজে পড়া ভিন রাজ্যের প্রতিযোগীদের হারিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে সে। তিনি বলেন, “আগামী দিনে পামোলিকার চ্যাম্পিয়ান হওয়া কেউ রুখতে পারবে না। আমার পরবর্তী লক্ষ্য এশিয়ান চ্যাম্পিয়ানশিপ।”
পামোলিমার বাবা গোপালবাবু বলেন, “দুটো কারণে মেয়েকে ক্যারাটে শিখতে ভর্তি করেছিলাম। নিরাপত্তা প্রথম কারণ। আর জানেন তো, আমার নিজের খুব ইচ্ছা ছিল ক্যারাটে শেখার। পারিনি, মেয়ে যদি পারে। আমার বিশ্বাস মেয়ে একদিন সেরা হবে।”
বাবার মনের কথা জানে পামোলিকা। তাই নিজের রানার্স হওয়ায় খুশি নয় সে। জয়ের ট্রফিটা পাশে রেখে নবদ্বীপ টাউন ক্লাবের মাটিতে অনুশীলন করতে করতে বলে, “পরের বার চ্যাম্পিয়ান হতে চাই।” |