বহিষ্কৃত সিনিয়ররা, উঠে এল স্বার্থপর ব্যাটিংয়ের অভিযোগ
ত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে মহাগুরুত্বপূর্ণ রঞ্জি ম্যাচের বাকি আর ঠিক তিন দিন। রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকবে কি না, বোঝা যাবে ওই ম্যাচ শেষে। বোঝা যাবে, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পর। তিন পয়েন্টও নয়, সেই সম্ভাবনা শুধু সৃষ্টি হবে ইডেন থেকে লক্ষ্মীরতন শুক্লরা ছ’পয়েন্ট পেলে। কিন্তু এমন চরম প্রেক্ষাপটেও এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন বঙ্গ ক্রিকেট কর্তারা।
মঙ্গলবার থেকে চলতি রঞ্জি মরসুমে সিনিয়ররা ‘ব্রাত্য’। শুভময় দাস বাদ। অনুষ্টুপ মজুমদার বাদ। টিমে ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক ঘোষ (সবাই সৃষ্টি অ্যাকাডেমির)। সায়নশেখর মণ্ডল, অভিমন্যু ঈশ্বরণের মতো তরুণ রক্ত!
বাংলার নির্বাচনী বৈঠকের যে সিদ্ধান্তকে আপাত-দৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ দেখালেও সময়-উপোযোগী বলেই মনে হচ্ছে বাংলার ক্রিকেটমহলের।
দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এ দিনের বৈঠকের অধিকাংশই খরচ হয়ে গেল একটা প্রশ্নের মীমাংসায়— কী করা হবে? রেলওয়েজের বিরুদ্ধে শম্বুক-গতিতে ব্যাট করে যাওয়া সিনিয়রদের কি উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধেও রাখা হবে? নাকি সিনিয়র-নীতির বিসর্জন ঘোষণা করে টিমে আনা হবে জুনিয়রদের? বৈঠকে ঢুকেও কোনও কোনও নির্বাচকের প্রথমে মনে হচ্ছিল, শুভময়-অনুষ্টুপের মতো সিনিয়রদের একেবারে বর্জন করাটা বোধহয় ঠিক হবে না। কিন্তু সার্বিক ভাবে পরে ঠিক হয়, যা হয় হবে। বাংলা হারলে, হারবে। তবু সামনে তাকানো হবে। পিছনে হাঁটা বন্ধ।

নির্বাচনী বৈঠকে চেয়ারম্যান দীপ দাশগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।
সন্ধের দিকে এক নির্বাচককে পাওয়া গেল, যিনি দুপুরের নির্বাচনী বৈঠকের উত্তজেনা থেকে বেরোতে পারেননি। উত্তপ্ত ভাবে তখনও বলে চলেছেন, “অভিজ্ঞতা যখন তিনশো রান তুলতে পারে না, পঁয়তাল্লিশ ওভারে পঁয়ষট্টি রান তোলে, তখন টিমে তার কীসের দরকার?” রাগারাগি স্বাভাবিক। রেলওয়েজের বিরুদ্ধে শুধু ৪৫ ওভারে ৬৫ ওঠাই তো নয়, দু’জন ব্যাটসম্যানের বল পিছু রানের হিসেব দেখলে চোয়াল ঝুলে যেতে পারে।
শুভময় দাস— ১২১ বল, রান ২০!
গীতিময় বসু— ২৫৯ বল, রান ৫৬!

প্রথম জন সিনিয়র এবং ছাঁটাই। দ্বিতীয় জন জুনিয়র এবং রেল ম্যাচটাই মরসুমের প্রথম বলে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেলেন। অনুষ্টুপ মজুমদারের (৫ ম্যাচে ১৫৬ রান, গড় ২২) পারফরম্যান্স নিয়ে শুধু নির্বাচকরা নন, টিমেও যথেষ্ট অসন্তোষ। বাংলা টিমের পক্ষ থেকে এ দিন বৈঠকে বলা হল, রেলের বিরুদ্ধে অত ঢিকির-ঢিকির করে রান ওঠার কারণ, বিপক্ষ বোলারদের বাইরে বাইরে বল ফেলে যাওয়া। যা নিয়ে নির্বাচকদের পাল্টা প্রশ্ন— লক্ষ্মীরতন শুক্ল তা হলে কী ভাবে ১৪৩ বলে ৯৫ ন:আ: থেকে গেলেন? নাকি অধিনায়ক অন্য পিচে, ভিন্ন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে খেলছিলেন? ব্যর্থ সিনিয়রদের নিয়ে অসূয়া কতদূর পৌঁছেছে, টের পাওয়া গেল যখন টিমের সঙ্গে প্রবল ভাবে জড়িত একজন বলে দিলেন, “নিজের জায়গা বাঁচানোর জন্য খেললে তো একশো বলে কুড়িই হবে। দেড়শো বলে পঁচানব্বই ব্যাটিং পাবেন না!”
আর বিরক্তি একটা নয়, বহু ব্যাপার নিয়ে আছে। বৈঠকে যেমন বাংলা কোচ অশোক মলহোত্রকে জিজ্ঞেস করা হল, মুরলী কার্তিকের সঙ্গে ঝামেলা টেনে বাড়িয়ে লাভ কী হল? লাভ হত, তিন পয়েন্ট পেলে। কার্তিকদের কাছে পাল্টা গালাগালের চেয়েও বেশি যোগ্য উত্তর হত। একাংশের মত, কার্তিক যেটা করেছেন, সেটা নিশ্চয়ই ক্রিকেটের স্পিরিট-বিরোধী। কিন্তু আইন মেনে করা। তা ছাড়া সন্দীপন দাসকে একবার সতর্কও করেছিলেন কার্তিক। তাই দায় পঞ্চাশ ভাগ কার্তিকের হলে বাকিটা সন্দীপনেরও। যাঁকে নিয়েও বিরক্তি বাড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ফেলছেন, ব্যাটে রান নেই এ দিন তাঁর নামটা টিমলিস্টে ঢুকল শেষে।
নির্বাচক কমিটি থেকে বলা হচ্ছে, ক্রিকেটারদের ছ’টা ম্যাচ দেওয়া হয়েছিল। পারেনি। ধাক্কাটা তাই অবশ্যসম্ভাবী ছিল। যাঁদের নেওয়া হল, তাঁরা জুনিয়রদের মধ্যে সেরা প্রতিভা। উত্তরপ্রদেশকে ইডেনে সবুজ পিচে ফেলা হবে। সেখানে জুনিয়ররা পারফর্ম করতে পারলে ভাল, নইলে কিছু করার নেই। প্রতিভার কথাবার্তা শুনে টিমের কেউ কেউ আবার বললেন, প্রতিভাবান নিশ্চয়ই। কিন্তু প্রতিভা আর পারফরম্যান্স, এক নয়। তফাত আছে।
অর্থাৎ— কিছুটা হলেও যেন টিমে সিনিয়র-জুনিয়র টেনশনের ইঙ্গিত। শুধু টেনশনও নয়। কলঙ্কও আছে।
পেসার মনোজিৎ ঘোষকে ইচ্ছে থাকলেও টিমে নেওয়া গেল না। কারণ সোমবার রাতে বোর্ড সিএও রত্নাকর শেট্টি জানিয়ে দিয়েছেন, বঙ্গ পেসারের অ্যাকশন ঠিক নয়। যতটা নিয়ম-নির্দিষ্ট, তার চেয়ে অনেক বেশি কনুই ভাঙছে। তাঁকে রিহ্যাবে পাঠাতে হবে, ক্লাব ম্যাচে তার পর চলবে তাঁর মনিটরিং। কোচ অশোক মলহোত্রর তত্ত্বাবধানে।
তত দিন বাংলার জার্সি দূরের কথা, বোর্ডের একটা ম্যাচও মনোজিৎ খেলতে পারবেন না।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.