পরিস্থিতি প্রতিকূল। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা বাস্তব কম, স্বপ্ন বেশি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া টিমের অবস্থাটা ক্রিকেটীয় ভাষায় ‘অন দ্য ব্যাকফুট’।
আর এখানেই আপত্তি লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র। বাংলা অধিনায়ক বলে দিচ্ছেন, “জীবনে কোনও দিন আমি ব্যাকফুটে যাইনি। টিমকেও যেতে দেব না।” আর তাই আজ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলার ড্রেসিংরুমে অদৃশ্য একটা ‘টিম থিম’ লেখা থাকতে চলেছে। টিমের উদ্দেশে ক্যাপ্টেনের বার্তা: যা-ই হোক, এখন থেকে আমরা ফ্রন্টফুটে যাব। তিন পয়েন্টের গল্প আর নয়। উল্টো দিকের টিমের নাম উত্তরপ্রদেশ হোক বা তামিলনাড়ু, শেষ দুটো ম্যাচে বারো পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাতে হবে। বাংলা অধিনায়ক নিজেও সেই ‘মোড’-এ ঢুকে গিয়েছেন। দিল্লির মাঠে তিন পয়েন্ট ফেলে আসার টাটকা হতাশা ইতিমধ্যেই তাঁর কাছে অতীত। রেলওয়েজের বিরুদ্ধে তিনটে পয়েন্ট নিশ্চিত করার লড়াইয়ে উল্টো দিকে একের পর এক উইকেট পড়ার নীরব, অসহায় সাক্ষী থাকতে হয়েছে তাঁকে। বাংলা অল আউট হয়ে যাওয়ার মুহূর্তটায় প্রচণ্ড হতাশ লাগছিল না? মনে হচ্ছিল না লোয়ার অর্ডার থেকে একটু সাহায্য পেলে ছবিটা অন্য রকম হতে পারত? “না। ওদের দোষ নেই। বাংলার অবনমন বাঁচানোর সেই ম্যাচটায় আমাদের প্রায় একশো রান দরকার ছিল। আমার সঙ্গে ক্রিজে কারা ছিল জানেন? রণদেব বসু আর শিবশঙ্কর পাল। ওরা ঠিক পার করিয়ে দিয়েছিল।” একটু থেমে আবার বললেন, “বছর তিনেক আগে দিল্লি ম্যাচের কথাও মনে আছে। ওরা ফুল টিম নিয়ে খেলছিল। ইশান্ত শর্মা ছিল। আমার সঙ্গে ব্যাট করে দিন্দা গোটা চল্লিশ রান করেছিল। সে দিন ও না থাকলে আমার সেঞ্চুরিটা হত না। দরকারের সময় ওরা টিমকে যে ভাবে টেনেছে, সেটা আজ ভুলে যাই কী করে?”
রেলওয়েজ ম্যাচে বাংলার পয়েন্ট খোয়ানো শুধু নয়, শিরোনামে উঠে এসেছে মুরলী কার্তিক বিতর্কও। রেল অধিনায়কের সঙ্গে ঝামেলাটা না হলে টিমের ফোকাসের বারোটা বাজত না, ম্যাচের পরিণতি অন্য রকম হতে পারত এই ধরনের আলোচনাও তো কম হচ্ছে না। লক্ষ্মী কান দিচ্ছেন না। নিজের টিমকে আড়াল করে বলছেন, “কার্তিক যেটা করেছে, সেটাকে কোনও ভাবেই ভদ্রতা বলা যায় না। আমি এত জন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে খেলেছি। কাউকে এ রকম ব্যবহার করতে দেখিনি। আর ওরা যে হ্যান্ডশেক করার ব্যাপারটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করল, ওটা কোনও ঘটনাই নয়। ম্যাচের পরে আমরা যখন স্ট্রেচিং করছিলাম, তখন ওরা মিডিয়ার লোকজনকে দেখিয়ে আমাদের সঙ্গে হাত মেলাতে এসেছিল। আমরা তখন নিজেদের মধ্যে ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করছিলাম। ওরা এলেই হাত মেলাতে হবে, এ রকম কোনও নিয়ম আছে কি?”
কার্তিক-বিতর্ককে হারের অজুহাত হিসেবে দেখছেন না লক্ষ্মী। মনোজ-ঋ
দ্ধি-শামি নেই, সে সবকেও নয়। বরং হাতে যে ক’জন যোদ্ধা আছে, তাদের উপর আস্থা রাখছেন। মহাসঙ্কটেও বলে দিচ্ছেন, “আমার টিম কিন্তু খারাপ খেলেনি।”
অধিনায়কের অটল বিশ্বাস পারবে বাকি দশ জনের মধ্যে যুদ্ধের আগুন জ্বালাতে?
দেখার অপেক্ষায় বঙ্গক্রিকেট। এক নয়, উত্তরপ্রদেশ ম্যাচে এগারো জন ‘লক্ষ্মীরতন শুক্ল’-কে দেখার আশা নিয়ে। |
বাংলা এখন
৬ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে
গ্রুপ ‘বি’-তে পাঁচ নম্বরে। |
পরের দুই প্রতিপক্ষ
• ৫ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থাকা উত্তরপ্রদেশ।
• বরোদাকে ন’উইকেটে হারিয়ে ওঠা তামিলনাড়ু। |
কেন এই ব্যর্থতা
• অরিন্দম দাস (৫ ম্যাচে ৪৪৬ রান) এবং লক্ষ্মীরতন শুক্ল (৫ ম্যাচে ৩২৮ রান) ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা রানের মধ্যে নেই। এই দু’জন ছাড়া এ মরসুমে সেঞ্চুরি পেয়েছেন একমাত্র সৌরাশিস লাহিড়ী।
• পেসাররা বিপক্ষের উপর টানা চাপ রাখতে পারছেন না। শুরুর দিকে উইকেট পেলেও বিপক্ষের লোয়ার অর্ডারে নিয়মিত বড় পার্টনারশিপ হয়ে যাচ্ছে।
• পরের পর ক্যাচ ফস্কাচ্ছে বাংলা। সার্বিক ফিল্ডিং খারাপ না হলেও গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফস্কানোর মাশুল দিতে হচ্ছে টিমকে। |
|