আসি-আসি করেও প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ক্যালেন্ডারে আটকে ছিল শীত। বাস্তবে তার উপস্থিতি সে-ভাবে মালুম হয়নি। তবে বুধবার রাত থেকে ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে উত্তুরে হাওয়া। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতায় এক ধাক্কায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে প্রায় দু’ডিগ্রি সেলসিয়াস! আজ, শুক্রবার তা আরও কমবে বলে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস। আবহবিদেরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মাদি’ দুর্বল হয়ে যাওয়াতেই উত্তুরে হাওয়ার দাপট বাড়ছে। তাপমাত্রার দ্রুত পতন বলে দিচ্ছে, শীত এ বার জাঁকিয়ে বসতে চলেছে দক্ষিণবঙ্গে।
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, কয়েক দিন ধরেই কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় রাতের তাপমাত্রা ১৭-১৮ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছিল। বুধবারেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রি বেশি। মাদি দুর্বল হতেই এক লাফে পারদের পতন হয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৪ ডিগ্রি, যা এই সময়ে স্বাভাবিক। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “শুক্রবারেই কলকাতার তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তা ১০-১১ ডিগ্রিতে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
ডিসেম্বরের গোড়াতেই শীতের আগমন-বার্তা দিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মাদি-র প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ফের বেড়ে যায়। তার ফলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি উপরে উঠে গিয়েছিল। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে উঠেও দিশাহীন হয়ে পড়ে মাদি। শক্তি হারিয়ে ফেলে সে। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদি-র প্রভাব কাটতেই জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমেছে। তার ফলে ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে শীত।
শুধু দুর্বল হয়ে যাওয়া মাদি নয়, দক্ষিণবঙ্গের শীতের দাপট বাড়ানোর পিছনে উত্তর ভারতের কনকনে ঠান্ডারও ভূমিকা আছে। দিল্লির মৌসম ভবন জানাচ্ছে, জম্মু-কাশ্মীরে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আছড়ে পড়ায় উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পঞ্জাবের বিস্তীর্ণ এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রয়েছে ১০ ডিগ্রির নীচে। এ দিন দেশের সমতলে সব থেকে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের নাজিবাবাদে, ৪.৬ ডিগ্রি। মৌসম ভবন সূত্রের খবর, জম্মু ও কাশ্মীরে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা রয়েছে। সেটি উত্তর ভারতের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। ওই হাওয়া পূর্ব ভারতের দিকে এলে দক্ষিণবঙ্গে কনকনে শীত পড়তে পারে বলে আবহবিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
|