দু’টি বিষয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক ঠিকই, কিন্তু এই দুই দাবিকে কেন্দ্র করেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ গ্রাস করে নিয়েছে পঞ্চদশ লোকসভার একটা বড় সময়। তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন ও লোকপাল বিল পাশ আদৌ ইউপিএ জমানায় হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন কাটেনি।
গতকাল তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন বিল অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভার কাছে পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। আবার অণ্ণা হজারের অনশন ও আম আদমি পার্টির জয়ের বাতাবরণে লোকপাল বিল নিয়ে ফের সক্রিয় হতে বাধ্য হয়েছে কংগ্রেস। আজ তারা জানিয়েছে, সোমবার ফের সংসদে লোকপাল বিল পাশ করানোর চেষ্টা করা হবে।
যদিও এই দুই পদক্ষেপই লোক দেখানো বলে আজ অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, দুটি দাবি পূরণে কোনওরকম সদিচ্ছা নেই সরকারের। তা যদি থাকত, তাহলে অনেক আগেই তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন বিলের খসড়া চূড়ান্ত করে সংসদে পেশ করত সরকার। বিলটি নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভাকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে মত জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভার মত জানার পরেই তা সংসদে পেশ করা হবে। কিন্তু অন্ধ্রে তেলঙ্গানা নিয়ে কংগ্রেস-সহ সব দলেই বিভাজন স্পষ্ট। তাই সর্বসম্মতিক্রমে কোনও মত পাঠানোর সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি বিধানসভাকে বিলটি পাঠানোর পরে ছ’সপ্তাহ অপেক্ষা করা ছাড়া কেন্দ্রের কাছে কোনও পথ নেই। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের আগে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না তারা। অথচ জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে হাতে গোনা কয়েক দিনের জন্য সংসদের বাজেট অধিবেশন হওয়ার কথা।
লোকপাল বিল নিয়েও এখন থেকেই সন্দেহের মেঘ জমতে শুরু করেছে। লোকপাল বিল পাশের দাবিতে মহারাষ্ট্রের রালেগণ সিদ্ধীতে ফের অনশনে বসেছেন অণ্ণা হজারে। সেই পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে এখন পুনরায় লোকপাল বিল পাশ করার কথা তৎপর হয়ে উঠেছেন কংগ্রেস নেতারা।
কিন্তু সরকার যদি লোকপাল বিল পাশ করিয়েই নেয় তাহলে বিজেপির রাজনৈতিক ফায়দা কোথায়?
তাই বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি আজ বলেন, “সরকারের তৈরি লোকপাল বিলে সংশোধন আনার জন্য সংসদীয় সিলেক্ট কমিটি যে সুপারিশগুলি করেছিল তা মানতে হবে।” জেটলির দাবি, সব সুপারিশ কেন্দ্র মানছে না। এমনকী সিবিআই প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার বিষয়টিও তারা মানতে রাজি নয়। এই অবস্থায় বিলটিতে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দেবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। জেটলি এও বলেন, কংগ্রেস না পারলে বিজেপি ক্ষমতায় এসে লোকপাল বিল পাশ করে দেখাবে। আজ অণ্ণা হজারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেও সেই প্রতিশ্রুতি দেন জেটলি।
অনেকের মতে, বিলটির বর্তমান চেহারা যে বিজেপি সমর্থন করবে না তা স্পষ্টই। এই বিল সমর্থনে আপত্তি জানিয়েছে সমাজবাদী পার্টিও। তবে বিলটিতে সমর্থনের কথা আজ খোলাখুলিই জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, যেহেতু লোকায়ুক্ত আইন প্রনয়ণের অধিকার রাজ্যের হাতে ছাড়তে রাজি হয়েছে কেন্দ্র, তাই তারা আর লোকপাল বিলে আপত্তি করবে না। কিন্তু এ বিষয়েও সংশয় নেই যে, শুধু তৃণমূল বা অন্য ছোট রাজনৈতিক দল সমর্থন জানালেই বিলটি পাশ হবে না।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার অবশ্য মত, তেলঙ্গানা গঠনের ভিত পুজো করে ফেলেছে কংগ্রেস। বাজেট অধিবেশনে বিলটি পাশ করানোর জন্য অবশ্যই চেষ্টা করা হবে। তা না হলেও লোকসভা নির্বাচনে তেলঙ্গানায় রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার আশা রয়েছে। আর লোকপাল বিল নিয়ে কংগ্রেসের বক্তব্যও অত্যন্ত স্পষ্ট। দলের তরফে বলা হবে, কংগ্রেস লোকপাল বিল পাশ করানোর চেষ্টা করেছিল। সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপিই সহযোগিতা করেনি। বিজেপির পাশাপাশি সমর্থন করেনি সমাজবাদী পার্টিও।
তবে এই বক্তব্য ভোটাররা মানবেন কি না তা বলবে সময়ই।
|