|
|
|
|
সবাই চায় বিরোধী হতে, দিল্লির কী হবে
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি
১২ ডিসেম্বর |
রাজধানী শহর দিল্লিতে প্রথম রাজ্য সরকার গঠন হয়েছে বছর কুড়ি আগে। মদনলাল খুরানা, সাহেব সিংহ বর্মা, সুষমা স্বরাজ থেকে শীলা দীক্ষিত। কিন্তু সরকার গঠন নিয়ে এমন চূড়ান্ত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এই প্রথম।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে হর্ষ বর্ধনকে এ দিনই ডেকে পাঠিয়েছিলেন দিল্লির লেফ্টেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জঙ্গ। হর্ষ বর্ধন সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে দেন, স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সরকার গড়ার চেষ্টা করার থেকে বিরোধী দলে বসে জনতার সেবা করাই পছন্দ বিজেপির। জোড়াতালি দিয়ে, বিধায়ক কেনাবেচা করে সরকার তাঁরা গড়বেন না। হর্ষ বর্ধনের বক্তব্য, জনতা যখন স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেবে, তখনই সরকার গড়বে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ‘আপ’-কে ডেকে পাঠিয়েছেন নাজিব জঙ্গ। কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, শনিবার তিনি লেফ্টেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু তিনি তো গত কালও জানিয়েছেন, কংগ্রেস বা বিজেপির সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার থেকে ফের ভোটে যেতে আপত্তি নেই তাঁর দলের। শনিবার তিনি কী করবেন?
সব মিলিয়ে ফল ঘোষণার পাঁচ দিন পরেও দিল্লিতে রাজ্য সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটল না। তার চেয়েও বড় কথা, অতীতে যেমন দল ভেঙে বিধায়ক কেনাবেচা করে সরকার গঠন করা হতো, এ বার সেই ছবিটাই অনুপস্থিত। অন্তত এখনও পর্যন্ত। লোকসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল মূল্যবোধের রাজনীতির কথা বলে বাজিমাত করেছেন। এই অবস্থায় কেউই তাই কেনাবেচার রাজনীতি করে বিশ্বাসযোগ্যতা খোয়াতে রাজি নয়। দিল্লি সব পক্ষই চাইছে, বিরোধী আসনে বসতে! তা হলে সরকার গড়বে কে?
এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক শিরোমণি অকালি দলের এক বিধায়ককে ধরলে সরকার গড়ার জন্য বিজেপির প্রয়োজন মাত্র চার বিধায়কের সমর্থন। অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ফের ভোট এড়াতে বিজেপিকে বিধানসভার কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ করে দিতে আস্থাভোটের সময় কক্ষত্যাগ করতে পারে আপ। কিন্তু বিজেপির অন্দরে যে আলাপ-আলোচনা চলছে, তা হল, আস্থাভোটে সরকার গড়ার কয়েক দিন পরে অনাস্থা এনে কংগ্রেস এবং কেজরিওয়াল যদি সরকার ফেলে দেয়, তা হলে লোকসভা ভোটের আগে মুখ পুড়বে দলের। ফলে সে পথে না যাওয়াই বাঞ্ছনীয়।
কিন্তু বিজেপির অন্দরে অন্য মতও আছে। এই অংশের বক্তব্য, সরকার গঠনের চ্যালেঞ্জ যদি গ্রহণ করা না হয়, তা হলে জনতা ভাবতে পারে, সরকার গড়ার চেষ্টাই করেনি বিজেপি। সে ক্ষেত্রে ফের ভোট হলে আম-আদমি যদি আসন বাড়িয়ে সরকার গড়ে, তখন কিন্তু বিজেপিরই মুখ পুড়বে। ফলে আবার ভোট ঠেকাতে যেনতেন প্রকারে এখন সরকার গড়াটা প্রয়োজন। এই মহলের বক্তব্য, তর্কের খাতিরে যদি ধরা যায় যে কংগ্রেস অনাস্থা আনল এবং আপ কক্ষত্যাগ করল, তখন বিজেপির সরকার বেঁচে যাবে। পরিষদীয় আইন অনুযায়ী, এক বার অনাস্থা আনলে ছ’মাসের মধ্যে ফের অনাস্থা আনা যাবে না। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের আগে আর সরকার পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে না। লোকসভা নির্বাচন শেষ হলে আবার এ নিয়ে ভাবা যাবে। তখন দরকার হলে বিজেপি নিজেই সরকার ফেলে ভোটে চলে যেতে পারে। এখন সরকার গড়ে অন্তত এই বার্তা দেওয়া হোক যে, আমরা সরকার চালাতে চেয়েছিলাম।
আরও একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে বিজেপির অন্দরে। এখনও পর্যন্ত গররাজি কেজরিওয়াল যদি শনিবার লেফ্টেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়তে রাজি হয়ে যান? বিজেপি মনে করছে, সে ক্ষেত্রে চাবি কিন্তু গেরুয়া শিবিরের হাতেই থাকবে। কারণ আগাগোড়া কংগ্রেসের বিরোধিতা করে ভোটে বাজিমাত করা আপ-এর পক্ষে সরকার গড়ার সময় কংগ্রেসের সমর্থন চাওয়া কঠিন। ফলে আপ-এর সরকার সংখ্যালঘু হওয়ারই পূর্ণ সম্ভাবনা। যার সুযোগ নিতে পারবে বিজেপি।
কিন্তু কেজরিওয়াল কি রাজি হবেন সরকার গড়তে? অনেকে বলছেন, সরকারের নীতির বিরোধিতা করেই এত জনপ্রিয়তা পেয়েছেন কেজরিওয়াল। এখন সরকার গড়লে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে তাঁকে। করতে হবে এমন একাধিক জনমোহিনী পদক্ষেপ, যা যে কোনও সরকারের পক্ষেই যথেষ্ট চাপের। সেই চাপ নিতে চান না বলেই সরকার গড়তে রাজি হচ্ছেন না আপ-নেতা। কেজরিওয়ালের অবশ্য অন্য উদ্বেগও রয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে ঘোষিত ভাবে ২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে তাঁর দল। আবার নির্বাচন হলে আবার বিপুল খরচের ধাক্কা। এমনিতেই বিদেশ থেকে অর্থ আনার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, নামে আম আদমি হলেও তাঁর প্রার্থীদের অনেকেই কোটিপতি। এই অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতি করার কথা ভাবতে হলে কেজরিওয়ালের পক্ষে সরকার গড়ার বল বিজেপি বা কংগ্রেসের কোর্টে ঠেলে দেওয়াই ভাল বলে মনে করছেন অনেকে।
আর কংগ্রেস? মাত্র আট জন বিধায়কের ভরসায় কোনও ঝুঁকিই নিতে নারাজ তারা। এ ভাবে সরকার গড়ার ঘোর বিরোধী শীলা দীক্ষিতও।
ফলে সব মিলিয়ে দিল্লিতে সরকার গড়া এখন সব দলের কাছেই শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। সরকার গড়া নিয়ে অনিশ্চয়তাও একই কারণে। অথচ ভারতের রাজনীতিতে সব সময় ক্ষমতা দখলের জন্যই অস্থিরতা দেখা গিয়েছে। এ বারে নরেন্দ্র মোদী দিল্লি এসে দলের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার গড়ার ব্যাপারে না-না-না। কেজরিওয়ালও বলছেন সেই কথা। আর কংগ্রেসের তো কথাই নেই। সকলেই বুঝতে পারছেন, এখন জনমতের প্রবল চাপ রয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে সরকার গড়লে বিপত্তির আশঙ্কা রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে দিল্লিতে? তা হলে ভোট কবে হবে? ৫ জানুয়ারি ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তার পর লোকসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। সেই সময় থেকে নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের বিষয়টি চলে যাবে নির্বাচন কমিশনের হাতে। দিল্লিতে বিধানসভার নির্বাচন লোকসভার সঙ্গে হবে কি না, সেটি তখন ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন।
ফলে সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তা চরমে। রাজনৈতিক দলগুলির কাছে এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। সরকার গড়ার থেকে বিরোধী আসনে বসতেই বেশি ব্যগ্র সকলে!
|
পুরনো খবর: হটাও নীল পাগড়ি, কংগ্রেসে জোরালো হচ্ছে দাবি |
|
|
|
|
|