|
|
|
|
হটাও নীল পাগড়ি, কংগ্রেসে জোরালো হচ্ছে দাবি |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি
১১ ডিসেম্বর |
হিন্দি বলয়ের ভোটে বিপর্যয়ের পর কংগ্রেসের মধ্যে এখন কার্যত বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কংগ্রেসের অনেক মন্ত্রী ও সাংসদই বলতে শুরু করেছেন, লোকসভা ভোটের আগে যদি কোনও ঝাঁকুনি দিতে হয়, তবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মনমোহন সিংহকে সরিয়ে দেওয়া হোক। এমনকী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ সারির সদস্য আজ এ-ও বলেন, “বিশ্বাস করুন! মনমোহনের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ক্ষতি হচ্ছে কংগ্রেসের।”
চার রাজ্যে দলেরর ভরাডুবির পর একমাত্র মণিশঙ্কর আইয়ার কাল প্রকাশ্যে মুখ খোলেন মনমোহনের বিরুদ্ধে। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর মতকে ব্যক্তিগত তকমা দেওয়া ছাড়া ঘরোয়া আলোচনাতেও কিন্তু কেউ এর বিরোধিতা করেননি। উল্টে মহাবল মিশ্র, সন্দীপ দীক্ষিতের মতো কংগ্রেস সাংসদরা দলের ঘরোয়া আলোচনায় আজও বলেছেন, কংগ্রেসের সমস্যা আম আদমি পার্টি বা গেরুয়া ব্রিগেড নয়। আসল সমস্যা হল নীল পাগড়ি।
অনেকে মনে করছেন, ক্ষোভের এই প্রকাশের পিছনে গাঁধী পরিবারেরই ইন্ধন রয়েছে। রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষ্কারই বলেন, “দশ জনপথের এমন কোনও কৌশল থাকলে খুশিই হব। তবে এটুকু বলতে পারি, মহাবল বা সন্দীপের মতো নেতারা মনমোহনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছেন মানে বুঝতে হবে, শীলা দীক্ষিতও তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন।” একই কথা বলছেন কংগ্রেসের মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের নেতারাও। লালচাঁদ কাটারিয়া, জিতেন্দ্র সিংহের মতো সাংসদ ও মন্ত্রীদের মতে, মনমোহনের নেতৃত্বের দুর্বলতায় রাজ্যস্তরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দু’হাত তুলে ভোট দিয়েছে মানুষ। নইলে অশোক গহলৌত এতটাও খারাপ কাজ করেননি যে, রাজস্থানে কংগ্রেস প্রান্তিক শক্তিতে পৌঁছে যাবে।
অথচ এই ‘সিং’-ই কিন্তু দলের কাছে ‘কিং’ ছিলেন এক সময়? একাধিক মন্ত্রী আজ বলেন, সেটা প্রথম ইউপিএ সরকারের শেষ দিকে পরমাণু চুক্তি করার সময়। দ্বিতীয় দফার সরকারে এক বার সংস্কার নিয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া ছাড়া সিংহগর্জন আর শোনা যায়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশ যখন দৃঢ় নেতৃত্ব চাইছে, তখন মনমোহন সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন কংগ্রেসের এক নেতা এ-ও বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, কারণ তিনি মানুষের সঙ্গে যোগস্থাপন করতে পারছেন। মনমোহন সিংহের নীরবতা নিয়ে মানুষ এখন কৌতুক করছেন। এই অবস্থায় কিছু একটা পরিবর্তন করতেই হবে সনিয়া গাঁধীকে।”
প্রশ্ন উঠছে, এত দেরিতে কেন বোধোদয়? দলের বহু সাংসদেরই বক্তব্য, সমস্যার শিকড় ১০ জনপথেই। মেয়াদের মাঝখানে দায়িত্ব নিতে চাননি রাহুল গাঁধী। চিদম্বরম বা অ্যান্টনিকেও দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব ছিল না সনিয়ার পক্ষে। প্রথম জনের ক্ষেত্রে কারণ যদি হয় বিশ্বাসের ঘাটতি, তবে দ্বিতীয় জনের রক্ষণশীলতা সনিয়ার চিন্তার বিষয় ছিল বরাবর। গাঁধী পরিবারের বাইরে কাউকে দায়িত্ব দিলে আবার গোষ্ঠী কোন্দল তুঙ্গে উঠত দলে।
কিন্তু মনমোহনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কি প্রকাশ্যে আসবে এ বার? এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করলে দলের বিড়ম্বনা বাড়বে। তবে দলের নেতারা সনিয়া-রাহুলকে বার্তা দিচ্ছেন, মনমোহন প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলে দলের ক্ষমতায় ফেরার সামান্য সম্ভাবনাও নেই। তাতেও কাজ না হলে, প্রকাশ্যে মণিশঙ্করের মতো আরও কেউ গর্জে উঠতেই পারেন! সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। |
|
|
 |
|
|