|
|
|
|
জয়ের স্মৃতি ও দুর্ঘটনার ক্ষত রেখে বিদায় মিগের |
কুন্তক চট্টোপাধ্যায় • কলাইকুন্ডা |
ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা।
কলাইকুন্ডা বিমান ঘাঁটি টারম্যাকে অস্থায়ী মঞ্চে উঠলেন বিমানবাহিনীর বিদায়ী প্রধান, এয়ার চিফ মার্শাল নরম্যান অনিলকুমার ব্রাউন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আকাশ চিরে উড়ে গেল চারটি মিগ-২১ এফএল যুদ্ধবিমান। বিদায়ী বায়ুসেনা প্রধানকে জানিয়ে গেল শেষ অভিবাদন।
বুধবার এই অভিবাদনেই ৫০ বছরের ‘চাকরিজীবন’ শেষ করল মিগ যুদ্ধবিমান। শেষ হল ইতিহাসের এক অধ্যায়। ভারত-পাক যুদ্ধে যেমন শত্রু নিধন করেছে এই বিমান, তেমনই বারবার দুর্ঘটনায় পড়ে প্রাণ নিয়েছে বায়ুসেনার বহু পাইলটের। তাই এক সময় এর নামই হয়ে গিয়েছিল ‘উড়ন্ত কফিন’। আমির খানের ‘রং দে বসন্তি’ ছবিতে মিগের কথা না-থাকলেও যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ায় এক তরুণ পাইলটের মৃত্যুকে ঘিরে টানটান গল্পের চলচ্চিত্রায়ণ দেখা গিয়েছিল।
বারবার দুর্ঘটনায় পড়ায় মিগ বাতিলের দাবি তুলছিল নানা মহল। বায়ুসেনার কাজ থেকে সরিয়ে নতুন পাইলটদের প্রশিক্ষণে মিগ ব্যবহার করা হচ্ছিল। কিন্তু তখনও বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনা ঘটে। ঝুঁকি না-নিয়ে কলাইকুন্ডায় সেগুলিকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ দিনের অনুষ্ঠানে অবশ্য মিগের সুখস্মৃতিই উঠে এল। ব্রাউন বললেন, “এক সময় আমিও এই বিমান চালিয়েছি। আমরা বিপদে-আপদে মিগের উপরেই ভরসা রেখেছিলাম।” কেন এত আবেগ?
পূর্বাঞ্চলীয় সেনার প্রধান মুখপাত্র, গ্রুপ ক্যাপ্টেন তরুণকুমার সিঙ্ঘা বললেন, “বায়ুসেনার প্রতি চার জন পাইলটের মধ্যে তিন জনই কোনও না কোনও সময় মিগ-২১ চালিয়েছেন। তাই তার চিরবিদায়ে প্রত্যেকেই ভারাক্রান্ত।” গলা ধরে এল তাঁর। বস্তুত, ১৯৮৫ সালে বায়ুসেনায় যোগ দেওয়ার পরে তরুণকুমারের বিমান চালানোর হাতেখড়ি হয় মিগে বসেই। এ দিন শেষ বারের মতো মিগ উড়ল মানব কুমারিয়া, এ এ কানমিন্দে, দেবপ্রিয় মিত্র এবং ভি আর রাকেশের হাতে। তাঁরা বললেন, “উড়তে উড়তে মিগের সঙ্গে অনেক সময়েই কথা বলতাম আমরা। কথা শুনত ও!”
বায়ুসেনার সব কর্মী-অফিসারই এ দিন বারবার কুর্নিশ করেছেন মিগ-২১-কে। বেলা সাড়ে ১০টায় ব্রাউনের বক্তৃতা শেষ। রীতি মেনে একটি মিগকে গাড়িতে টেনে নিয়ে যাওয়া হল হ্যাঙ্গারের দিকে। বিমানের দায়িত্বে থাকা ‘অপারেশনাল কনভার্সন ইউনিট’-এর কনিষ্ঠতম সদস্য ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এল নাগরাজন মিগের লগবুক তুলে দিলেন ব্রাউনের হাতে। বায়ুসেনার খাতায় কর্মজীবন শেষ হয়ে গেল মিগের। ভারতে তাদের উড়ান বন্ধ হয়ে গেল চিরকালের মতো। ’৬৩ সালে রাশিয়া থেকে এসে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত বায়ুসেনার কাজে দাপিয়ে বেড়িয়েছে মিগ। ’৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে ভারতের আকাশে তার আত্মপ্রকাশ। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় তাকে দেখা গিয়েছিল ’৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধে। ঢাকার রাজভবনে চূড়ান্ত হানা দিতে মিগকেই বেছে নেন বায়ুসেনা-কর্তারা। বায়ুসেনার মুখপাত্র জানান, ঢাকার রাজভবনে সফল হামলার পরেই পাক সেনার পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই ব্রাউন বলেন, “আজকের পরে মিগ আর উড়বে না। তবে বিভিন্ন যুদ্ধে তার অবদান মনে রাখবে ইতিহাস।”
বায়ুসেনার খবর, কলাইকুন্ডার ১৫টি মিগকে দেশের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে স্মারক হিসেবে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। দেওয়া হতে পারে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা আইআইটি-র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। |
|
|
|
|
|