আপ থেকে শিক্ষা নিতে চাইছে সিপিএম
চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ধরাশায়ী হলেও বিজেপি-র পক্ষে প্রবল কোনও হাওয়া ছিল না, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলকে দেখিয়ে সে কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তাঁর রাজ্যেরই সিপিএমের শীর্ষ নেতা বিমান বসু বললেন, ‘আম আদমি পার্টি’র (আপ) কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে বামপন্থীদেরও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে উঠে আসবে আপ-এর শিক্ষার প্রসঙ্গ।
দিল্লিতে ভেলকি দেখিয়ে কেজরিওয়ালই এক বিন্দুতে এনে ফেলেছেন বাংলার রাজনীতির দুই যুযুধান শিবিরকে!
লোকসভা ভোটের আগে কৌশলগত অবস্থান ঠিক করতে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতির রূপরেখা বাঁধতে আজ, শুক্রবার থেকে সিপিএমের তিন দিনের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। তার জন্য আগরতলায় পৌঁছে বৃহস্পতিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবুর মুখে উঠে এসেছে আপ-প্রসঙ্গ। রাজস্থানে যেখানে বিজেপি-ঝড়ের দাপেটে তিন আসনই খুইয়ে বসেছে সিপিএম, দিল্লিতে সেখানে নরেন্দ্র মোদীর দলের সরকার গড়ার স্বপ্ন আটকে দিয়েছে আপ। এই সূত্রেই বিমানবাবুর ব্যাখ্যা, “লোকপাল বিলের সময় থেকে দুর্নীতি-বিরোধী একটা অবস্থান নিয়ে লড়াই শুরু করেছিল আপ। তার পরে দুর্নীতি এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্ন চিহ্নিত করে ওরা বাড়ি বাড়ি গিয়েছে। দিল্লির বিধানসভা ভোটে তার ফলে ২৮টা আসন পেয়েছে। প্রথম বার বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে নেমে ২৮টা আসন মুখের কথা নয়!” এই সঙ্গেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিমানবাবুর সংযোজন, “এর থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে। আমাদের দলকেও প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে হবে।” কেন্দ্রীয় কমিটির কাঁটাছেড়ায় আপ-প্রসঙ্গ যে আসবেই, তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিমানবাবু। সামগ্রিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও ম্যাজিক-বটিকা অবশ্য কেন্দ্রীয় কমিটির ঝুলিতেও নেই!
আগরতলায় প্রকাশ কারাট, বিমান বসু ও ত্রিপুরায় দলের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
বিমানবাবু, সীতারাম ইয়েচুরির মতো শীর্ষ সিপিএম নেতারা মনে করছেন, কংগ্রেস দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। কিন্তু বিজেপি-র পক্ষে তেমন কোনও স্রোত নেই। বরং, গ্রহণযোগ্য বিকল্প পেলে মানুষ তাকে সমর্থন করতে তৈরি আছে। যে ব্যাখ্যা একেবারেই মিলে যাচ্ছে তৃণমূল নেত্রীর মতের সঙ্গে! তবে মজার বিষয় হল, তৃণমূল নেত্রী যে বিকল্প ভাবছেন, সেখানে বামেদের ঠাঁই নেই! আর বামেরা যে বিকল্পের পরিকল্পনা করছেন, তা তৃণমূলের ছোঁয়া বর্জিত! বাকি লড়াই তোলা থাকছে ভোটের পরের পরিস্থিতির জন্য।
তবে জনমানসে প্রশ্ন উঠছে, দুর্নীতি রোখা বা আম জনতার মনের কাছাকাছি কিছু বিষয় নিয়ে ময়দানে নেমে আপ-এর মতো আনকোরা দল বাজিমাত করতে পারলেও বামেদের ঝুলি কেন শূন্যই থাকছে? সিপিএমের একাংশের মত, শহুরে মানুষের মধ্যে মূল স্রোতের রাজনীতির প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণা কাজ করছে। তুলনায় ‘অরাজনৈতিক’ চেহারার আপ যে কথা বলে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে, একই কর্মসূচি নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দল জনদরবারে উপেক্ষিত হয়েছে! পাশাপাশিই, সিপিএমের বিশ্লেষণ, দিল্লি আর বাংলার রাজনীতি এখনও এক নয়। বিমানবাবুর কথায়, “দিল্লিতে যা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে হুবহু তা-ই হতে পারে এটা মনে করার কারণ আছে বলে মনে হয় না!”
আগরতলা পৌঁছে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এ দিন জানিয়েছেন, লোকসভার প্রস্তুতির পাশাপাশি পার্টি কংগ্রেসে ঠিক হওয়া সাংগঠনিক কাজের অন্তর্বর্তী পর্যালোচনা হবে এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। যা এই প্রথম। আর বিমানবাবু সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বাংলায় শাসক দলের ‘সন্ত্রাসে’র রিপোর্ট। দেশের একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানীর রাজপথও আপাতত বাংলায় ‘সন্ত্রাস’ বন্ধের দাবিতে সরব। বিমানবাবুর আশা, শাসক দলের দাপটে বাংলায় লোকসভা ভোটের আগে তাঁদের কর্মসূচি লাটে উঠবে, এমন হবে না। রাজ্য সম্পাদকের কথায়, “চির কাল এমন হবে না! মানুষের উপলব্ধি হচ্ছে। প্রতিবাদ থেকেই প্রতিরোধ হবে!” পরপর ভোটের ফলে যদিও তার কোনও পূর্বাভাস নেই!

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.