লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে এসেছে। তাই অনেকটাই মেঘ না চাইতেই জলের মতো বাংলার জন্য উপুড়হস্ত হল রেলমন্ত্রক। আজ অতিরিক্ত ব্যয়বরাদ্দ বাজেটে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য একশো কোটি টাকা-সহ মোট ৩৪৫ কোটি টাকা রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য মঞ্জুর করল রেলমন্ত্রক।
অথচ, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম আট মাসে কার্যত অর্থের অভাবে ধুঁকছিল ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পটি। চলতি বাজেটে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী পবন বনশল ওই প্রকল্পের জন্য একশো কোটি টাকা দেওয়ার জন্য আশ্বাস দিলেও কার্যত পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে সেই অর্থ অধরাই থেকে যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফলে এক সময়ে নগদ জোগানের অভাবে কার্যত থমকে যায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। এই পরিস্থিতিতে আজ রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর উদ্যোগে পদ্ধতিগত ত্রুটি মুছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প একশো কোটি টাকা বরাদ্দ করল রেলমন্ত্রক। এর ফলে চলতি আর্থিক বছরে অর্থের অভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ আটকে থাকবে না বলে দাবি করেছেন অধীরবাবু। রেল প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, আর্থিক ভাবে দৈন্য রেল বোর্ড ওই টাকা মঞ্জুর করতে এ বারও গড়িমসি করছিল। কিন্তু অধীরবাবু বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পরেই জট কাটে। রেলমন্ত্রক থেকে একশো কোটি টাকা মঞ্জুর হওয়ায় প্রকল্পের লগ্নিকারী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-র পক্ষ থেকে আরও একশো কোটি টাকা ম্যাচিং গ্রান্ট পাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ফলে আপাতত অর্থের সমস্যা মিটেছে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই। |
বর্তমানে ইস্ট-ওয়েস্ট নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে রেল (৭৬%) ও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক (২৪%)। রাজ্যের শেয়ার রেলের হাতে চলে আসার পর থেকেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজে গতি আনতে তৎপর ছিলেন অধীর চৌধুরী। তিনি ওই প্রকল্পটিকে মেট্রো রেল জোনের আওতাতেও নিয়ে আসেন। কিন্তু প্রথমে জমি জট ও পরে অর্থের অভাবে সেই কাজ কার্যত সম্পূর্ণ থেমে যায়। অথচ, মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ মনে করে, কলকাতার অন্য মেট্রোগুলির তুলনায় তুলনামূলক ভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ক্ষেত্রে জমি সমস্যা কম। কেননা সল্টলেক থেকে ফুলবাগান এই লাইনটি পাতা হবে মাটির উপর দিয়ে। সেখান থেকে হাওড়া পর্যন্ত যাবে মাটির নীচ দিয়ে। ফলে জমি জটে কাজ আটকানোর সমস্যা কম।
সেন্ট্রাল স্টেশন ও দত্তাবাদের কাছে যে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা ছিল তা মেটাতে তৎপর হয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই জমি জট মীমাংসায় দফায় দফায় রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক আধিকারিক, স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনায় চালিয়ে সুফল পেয়েছে রেলমন্ত্রক। অধীরবাবুর কথায়, “জমি জট যখন কাটার মুখে তখন দেখা গেল অর্থের অভাব। তাই অর্থের জোগান নিশ্চিত করাই ছিল আমার অন্যতম লক্ষ্য।” মেট্রো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই টাকায় চলতি বছরে যে কাজের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে তা সেরে ফেলা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই ফুলবাগান থেকে লাইন পাতার কাজ শুরু করেছে রেলমন্ত্রক। এখন জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সবুজ সঙ্কেত এলেই পূর্ণমাত্রায় কাজ শুরু করা যাবে বলেই মনে করছেন রেলকর্তারা।
রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য এই বরাদ্দকে আদৌ আমল দিতে রাজি নন। তাঁর বক্তব্য, “১০০ কোটি সিন্ধুতে বিন্দু। ভোটের আগে কী কাজ হবে? তার চেয়েও বড় কথা, কেন্দ্রে সরকার যখন ডুবতে বসেছে তখন এই সব বরাদ্দের টোপ কেন, মানুষ তা ভালই বোঝেন। এ সব করে কোনও লাভ হবে না।”
|