শর্ট স্ট্রিট
আইনজীবীদের চিৎকারে উঠে গেলেন বিচারক
দালতে বাদী ও বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলিদের মধ্যে বিতণ্ডা হয়ই। কিন্তু এ বার আদালতে আইনজীবীদের চিৎকারে এজলাস ছাড়লেন বিচারক! অবস্থা এমনই দাঁড়াল যে, এজলাস থেকে বেরিয়ে যেতে হল সরকারি আইনজীবী এবং মামলার তদন্তকারী অফিসারকেও। মামলাটি শর্ট স্ট্রিটে হামলা নিয়ে। উপলক্ষ ধৃত আইনজীবী সামির রিয়াজের জামিনের আবেদন এবং তাঁকে এজলাসের লক-আপ থেকে বার করে আনা। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটে ব্যাঙ্কশাল আদালতে।
ন্যায়ালয়ে আইনজীবীদের এমন চিৎকার-চেঁচামেচি কেন?
৯এ শর্ট স্ট্রিটে জমি দখলের হামলায় অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে পুলিশ বুধবার সামির রিয়াজ নামে যাঁকে গ্রেফতার করেছে, তিনি এক জন আইনজীবী। প্র্যাক্টিস করেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টেই। পুলিশ জানায়, ১১ নভেম্বর, শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমিতে হামলার দিন ওই আইনজীবী ঘটনাস্থলেই ছিলেন। সেই ঘটনার এক মাসের মাথায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ দিন তাঁকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলে পুলিশ। সকাল থেকেই আদালত কক্ষে ভিড় জমিয়েছিলেন আইনজীবীদের একটি অংশ।
বেলা আড়াইটে নাগাদ রিয়াজকে এজলাসের লক-আপে আনামাত্র আইনজীবীদের অনেকেই সমস্বরে চেঁচাতে থাকেন। তাঁদের সমবেত আর্জি, রিয়াজ ব্যাঙ্কশাল আদালতে ওকালতি করেন। তাই সম্মানের খাতিরে তাঁকে অন্য আসামিদের সঙ্গে একই লক-আপে না-রেখে বাইরে রাখার ব্যবস্থা হোক। সেই আর্জি মঞ্জুরও করেন ভারপ্রাপ্ত মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী। এ দিন আদালতে কোনও মহিলা অভিযুক্ত না-থাকায় রিয়াজকে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট লক-আপের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়।
শুরু হয় আদালতের কাজ। অন্য কয়েকটি মামলার শুনানির পরে বেলা ৩টে নাগাদ শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের মামলাটি ওঠে। রিয়াজের আইনজীবী অনুজ সিংহ আদালতে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল বুধবার দুপুরে লালবাজারের গোয়েন্দাদের কাছে গিয়েছিলেন। সেই সময়েই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ কাগজে-কলমে পুলিশ দাবি করেছে, রিয়াজকে ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনজীবীদের আরও দাবি, রিয়াজ ১১ নভেম্বর শর্ট স্ট্রিটে হামলার দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস পাল্টা দাবি করেন, ঘটনার দিন ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বাড়ির বাইরে সম্পত্তির কারবারি পিনাকেশ দত্তের গাড়িতে বসে ছিলেন রিয়াজ। শর্ট স্ট্রিটের ঘটনায় অন্যতম মূল চক্রী বলে অভিযুক্ত পিনাকেশ এবং অন্য এক আইনজীবী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আদালতে গোপন জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, রিয়াজও ওই হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। এবং তার জন্য তিনি ৩০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন বলেও সরকারি আইনজীবীর দাবি। আদালতে আইনজীবীদের একটা বড় অংশ সরকার পক্ষের এই দাবির বিরোধিতা করে চেঁচাতে থাকেন। একযোগে রিয়াজের জামিনের আর্জি জানাতে শুরু করেন তাঁরা। বলতে থাকেন, “আমরা রিয়াজের জামিনের গ্যারান্টার হব। যখনই প্রয়োজন হবে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরাই ওঁকে লালবাজারে নিয়ে যাব।” আইনজীবীদের এই সম্মিলিত দাবি মানতে চাননি বিচারক।
তিনি বলেন, “আইনে এমন কোনও বিধান নেই।” চেঁচামেচি বেড়ে যায়। সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে ক্রমাগত কটূক্তি ভেসে আসতে থাকে। হট্টগোলের মধ্যে বিচারক এক সময় এজলাস ছেড়ে নিজের চেম্বারে চলে যান। কিন্তু তাতেও আইনজীবীদের চেঁচামেচি থামেনি। এজলাসে হাজির পুলিশের উদ্দেশেও কটূক্তি ভেসে আসে। শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, প্রশ্ন তোলেন আইনজীবীদের একাংশ। এক সময় সরকারি আইনজীবী ও তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরাও এজলাস থেকে বেরিয়ে যান।
খবর যায় লালবাজারে। তার পরেই গোয়েন্দা বিভাগের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে পুলিশের বড় বাহিনী এসে পৌঁছয় ব্যাঙ্কশাল আদালতে। বিচারক এজলাসে ফিরে আসেন। তিনি জামিনের আর্জি খারিজ করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিয়াজকে পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এজলাসে তখন আইনজীবীদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তবে বিচারক যখন রিয়াজকে পুলিশি হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন, তখন আইনজীবীদের আর চেঁচামেচি করতে দেখা যায়নি। আদালতের নির্দেশের পরে রিয়াজকে কড়া পুলিশি পাহারায় লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে লালবাজার সূত্রে দাবি করা হয়, হামলার দিন (১১ নভেম্বর) পিনাকেশের সঙ্গে একই গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন রিয়াজ। ১৫ সেপ্টেম্বর এবং ১১ নভেম্বর শর্ট স্ট্রিটের ওই বাড়িতে হামলা চালানোর জন্য বহিরাগত বাউন্সারদের জোগাড় করার দায়িত্বও ছিল তাঁর উপরে। সেই জন্য সেপ্টেম্বরের শেষে তিনি ৩০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। খড়দহের এক যুবক বাউন্সার জোগাড় করতে রিয়াজকে সাহায্য করেছিল বলে লালবাজারের খবর। পুলিশ জেনেছে, রিয়াজের সাহায্যকারী ওই যুবক খড়দহ এলাকার দুষ্কৃতী। ওই যুবকের খোঁজে বুধবার রাতে তার বাড়িতে হানা দেয় লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখা। কিন্তু তাকে ধরা যায়নি।
রিয়াজের সাহায্যকারীকে ধরতে না-পারলেও শর্ট স্ট্রিটে ১৫ সেপ্টেম্বরের হামলায় পিনাকেশের এক সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা জানায়, ঋত্বিক দে নামে ওই অভিযুক্তও জমি-বাড়ির কারবারি এবং হামলার দিন তিনি পিনাকেশের সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছিলেন। জেরায় পিনাকেশই তাঁর নাম জানান। তাঁর বিরুদ্ধেও হামলা, বন্দুক ছিনতাই-সহ ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.