সোমবার সরানো হয়েছিল শেক্সপিয়র থানার ওসি-কে। শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের জেরে মঙ্গলবার দায়িত্ব ছেঁটে দেওয়া হল এই থানার ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (এসি)-এরও। ওই এসি তাপস বসুর অধীনে ছিল শেক্সপিয়র সরণি, পার্ক স্ট্রিট, কালীঘাট ও ভবানীপুর থানা। শেক্সপিয়র সরণি ও পার্ক স্ট্রিট থানার দায়িত্ব তাঁকে আর সামলাতে হবে না বলে এ দিন লালবাজার থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দুই থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাউথ ডিভিশনের অপর এসি নুরুল আনোয়ারকে। আনোয়ারের হাতে থাকা আলিপুর থানার দেখভাল এ বার থেকে তাপসবাবু করবেন।
লালবাজার সূত্রের খবর, ৯এ শর্ট স্ট্রিটের ওই বাড়িতে ১১ নভেম্বরের আগে একাধিক বার হামলার পরেও শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। সে জন্যই এসি তাপস বসুকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। পুলিশ কর্তারা মনে করছেন, আগের ঘটনা ধামা-চাপা না দিলে ১১ নভেম্বরের মতো ঘটনা ঘটত না। তাই দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অভিযোগে সরিয়ে দেওয়া হল ওসি এবং এসি-কে। গত সপ্তাহে ক্লোজ করে দেওয়া হয় থানারই এক সাব-ইন্সপেক্টর নুর আলিকে।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “থানার পুরো দায়িত্ব ওসি-র হাতে থাকলেও তিনি ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করছেন কি না, তা দেখার কথা এসি-র। শর্ট স্ট্রিটের ওই জমি নিয়ে বিবাদ এবং অভিযোগের কথা জানতেন তাপসবাবু। তবু তিনি ব্যবস্থা নেননি। ওসিকে সতর্কও করেননি।”
পুলিশ জানাচ্ছে, বদলি হওয়া ওসি এবং এসি তাঁদের ডিভিশনার কমিশনারকে (ডিসি-সাউথ) ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমি সংক্রান্ত সঠিক তথ্য সরবরাহ করেননি। লালবাজারের সূত্রের খবর, ১৫ সেপ্টেম্বর ৯এ শর্ট স্ট্রিটে ওই বিতর্কিত জমিতে বহিরাগতরা হামলা চালায় এবং একটি স্কুল ভাঙচুর করে। অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও থানা প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি। পরে পুলিশের এক পদস্থ কর্তার হস্তক্ষেপে প্রায় ১২ ঘণ্টা পরে অভিযোগ নেয়।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন,“শুধু ওসি নয়, এসিও পুরো ঘটনা জেনে তা ধামাচাপা দিতে চাইছিলেন। গত ক’বছর ওই থানায় কাজ করা অফিসারদের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে।” তদন্তে যে সব নাম উঠে আসবে, তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
পুলিশ কতার্রা বলছেন, মমতা অগ্রবালের অভিযোগকে কখনওই গুরুত্ব দেয়নি ওই থানা, বেশির ভাগ সময় অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেই দায় সেরেছেন অফিসাররা। যার জেরেই তিনটি এফআইআর, ২০টি জিডি হওয়া সত্ত্বেও তদন্ত করেনি পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসে ওই হামলার পরে পরাগ মজমুদার-সহ সম্পত্তির কারবারিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মমতা। কিন্তু সেই ঘটনার ঠিক মতো তদন্ত হয়নি। এমনকী ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি অভিযুক্তদের।
শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের তদন্তে নতুন করে কাউকে গ্রেফতার না করতে পারলেও একটি ফোন নম্বর ও তার মালিকের খোঁজ চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ১১ নভেম্বর ঘটনার আগের দিন রবিবার রাতে মমতা অগ্রবালের কাছে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। ওই ফোনে বলা হয়, পরের দিন সোমবার ভোরে তাঁর বাড়িতে হামলা চালানো হবে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওই নম্বরটি থেকে শুধু মাত্র একটি ফোনই করা হয়েছিল। ১০ নভেম্বরই ওই ফোন নম্বরটি অ্যাক্টিভেট করা হয়েছিল। ঠিকানা দেওয়া ছিল ম্যাকলয়েড স্ট্রিটের একটি বাড়ি। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ঠিকানাটি ভুয়ো। ঘটনার পরেই ওই নম্বরটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেওয়া হয়।
তদন্তকারীরা জানান, ধৃত পিনাকেশ দত্তকে জেরা করে জানা গিয়েছে, হামলার জন্য ব্যারাকপুরের এক ব্যাঙ্ক রিকভারি এজেন্টকে তাঁরা কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে নিয়োগ করেছিলেন। ওই রিকভারি এজেন্টই ১১ জনের বেশি যুবককে নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে শর্ট স্ট্রিটে হামলা চালায়। ওই জমি দখলের জন্য পিনাকেশ যে দেড় কোটি টাকা পেয়েছিলেন, তার একটা অংশ দেওয়া হয় ওই রিকভারি এজেন্টকে।
|