প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির টোপ, ‘আত্মসাৎ’ লক্ষাধিক টাকা
বিমানসেবিকা, পাইলট ও অন্যান্য চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে এক মহিলার বিরুদ্ধে। বিমানবন্দর থানায় ওই অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই বেপাত্তা তিনি। তাঁর বারাসতের বাড়িতে তালা ঝুলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার নাম শতাব্দী চট্টোপাধ্যায়। অভিযোগকারীদের বক্তব্য, তিনি নিজেকে পাইলট পরিচয় দিয়ে বিমানসেবিকা হওয়ার প্রশিক্ষণকেন্দ্র খোলেন। ভর্তির জন্য কাগজে নিয়মিত বিজ্ঞাপনও দিতেন। প্রার্থীদের অভিযোগ, ভর্তির সময়ে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে বলা হয়েছিল, প্রশিক্ষণের পরে চাকরি মিলবে। প্রশিক্ষণ যখন শেষের মুখে, তখন চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে আরও টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু, কারও চাকরি হয়নি।
দমদমের বাসিন্দা অর্পিতা দত্ত ২০১০-এর মে মাসে শতাব্দীর কেন্দ্রে ভর্তি হন। দক্ষিণ কলকাতায় একটি বাড়িতে এই কেন্দ্রটি চলত। পরে নিজের অফিস দমদমে সরিয়ে আনেন শতাব্দী। অর্পিতার অভিযোগ, প্রথমে তাঁকে ৫৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বলা হয়, দেশের নামজাদা বিমানসংস্থায় বিমানসেবিকার চাকরি পাবেন। অভিযোগ, সাড়ে পাঁচ মাস প্রশিক্ষণের পরে বলা হয়, চাকরি পেতে হলে আরও ৭০ হাজার লাগবে।
অর্পিতার বাবা প্রদ্যোৎ দত্ত বলেন, “আমি অবসর নিয়েছি। দ্বিতীয় বার টাকা চাওয়ার পরে আমি বলি, এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তখন ওঁরা দরদাম শুরু করেন। ফোন করে বলেন, ‘আপনার মেয়ের প্রতিভা কেন নষ্ট করবেন?’ চাপে পড়ে ২৫ হাজার টাকা দিই।” কিন্তু সেই চাকরি অর্পিতা পাননি।
বেকার যুবকদেরও প্রতারিত করার অভিযোগ উঠেছে শতাব্দীর বিরুদ্ধে। দীপককুমার রাম নামে এক যুবক বলেন, “বিমানসংস্থায় শিফ্ট ম্যানেজার-এর চাকরি দেবেন বলে আমার থেকে ৭০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। আমি দিল্লি পর্যন্ত ছুটেছি। চার দিন নিজের টাকা খরচ করে দিল্লিতে থাকার পরে বুঝতে পারি, প্রতারিত হয়েছি।” প্রতারিত হন দুর্গাপুরের যুবক সৌম্য চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি জানান, তাঁকে প্রথমে বলা হয়, বিমানসেবকের কাজ দেওয়া হবে। পরে বলা হয়, চাইলে তিনি পাইলটের চাকরিও পেতে পারেন। সৌম্যর অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে ২ লক্ষেরও বেশি টাকা নিয়েছিলেন শতাব্দী। সৌম্য জানান, টাকার রসিদে শতাব্দী নিজের হাতে লিখে দিয়েছিলেন চাকরি না পেলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু টাকা আর ফেরত মেলেনি বলে অভিযোগ।
অভিযোগের বিষয়ে শতাব্দীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। বারাসতে যে বাড়িতে তাঁর বাবা থাকতেন, ঘটনার পর থেকে তাঁর বাবাও সেখানে নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সত্যিই কি এ ধরনের কোনও প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে চাকরি হয়? দেশের প্রধান দুই বিমানসংস্থা জেট এবং ইন্ডিগোর কর্তারা জানিয়েছেন, এ ভাবে কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সরাসরি প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয় না। তাঁরা খবরের কাগজে সরাসরি বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রার্থীদের ডেকে নেন। ইন্টারভিউ হয়। যাঁরা পাশ করেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তবেই কাজে নিয়োগ করা হয়। এক বিমানসংস্থার কর্তা বলেন, “কখনও কখনও দেশের নামকরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়েও আমরা প্রার্থীদের নিয়োগ করি। কিন্তু, সেখানেও ওই কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ বাড়তি কোনও কাজে আসে না। ইন্টারভিউ-এর ফলাফলের উপরেই প্রার্থীর নিয়োগ নির্ভর করে।”
তা হলে কেন এত টাকা দিয়ে এ ধরনের নানা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি হচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা? কলকাতার এমনই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এক কর্তা বলেন, “প্রার্থীকে কখনই বলি না, তাঁকে স্থায়ী চাকরি করে দেওয়া হবে। বলা হয়, ইন্টারভিউ দেওয়ার মতো তৈরি করে দেওয়া হবে। যাতে ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পান, সে জন্যও চেষ্টা করা হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.