শ্বাসনালীতে সেফটিপিন নিয়ে গোসাবার বৃদ্ধ কাটালেন ৯০ দিন
কটি সেফটিপিন রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দুরবস্থাকে আরও এক বার সামনে এনে দিল।
গোসাবার একটি দ্বীপের প্রত্যন্ত গ্রাম পূর্ব রাধানগর। সুন্দরবনের জঙ্গলঘেঁষা এই গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ ওমর আলি মোল্লা। মাস তিনেক আগে ৬৫ বছরের এই বৃদ্ধ খাওয়াদাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে সেফটিপিন দিয়ে দাঁত খোচাচ্ছিলেন। আচমকা সেই খোলা সেফটিপিন চলে যায় তাঁর গলার মধ্যে। শ্বাসনালীতে পৌঁছে তা আড়াআড়ি ভাবে ফুটে খাদ্যনালীকে ছুঁয়ে ফেলে। ৯০ দিনের বেশি শ্বাসনালীতে ফুটে থাকা ওই সেফটিপিন নিয়েই দিনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন ওমর আলি। কারণ, তাঁর গ্রামে ত্রিসীমানায় এমন কোনও হাসপাতাল নেই যেখানে অস্ত্রোপচার করে ওই সেফটিপিন বার করা যায়। সবচেয়ে কাছের যে সরকারি হাসপাতালে সার্জারি ও ইএনটি বিভাগ রয়েছে সেটি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল। গ্রাম থেকে সেখানে পৌঁছতেই প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা আর দু’-দু’টো নদী পার হতে হয়। ভ্যান, ভটভটি, ট্রেকার তার পর ওষুধপত্র মিলিয়ে প্রায় চারশো-পাঁচশো টাকার ধাক্কা। ওই সব দ্বীপের অতি দরিদ্র কৃষিজীবী মানুষের সেই টাকা বার করার ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা ছিল না ওমর আলির-ও। বুকের মধ্যে খোলা সেফটিপিন ফুটে থাকার যন্ত্রণা নিয়ে দিন পর দিন কাটিয়েছেন তিনি।
টাকা জোগাড় করে শেষপর্যন্ত তিনি যখন কলকাতায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছতে পেরেছিলেন, তখন সেফটিপিন থেকে সংক্রমণ হয়ে ফুলে তাঁর শ্বাসনালী প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ন্যাশনালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন, আর চার দিন দেরি হলে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতেন ওমর আলি।
ওমর আলি মোল্লা।—নিজস্ব চিত্র।
কিম্বা কোনও ভাবে রক্তের মাধ্যমে ফুসফুসে গিয়ে সেফটিপিন ফুটে গেলে সঙ্গে-সঙ্গে মারা যেতেন। গত ৩০ নভেম্বর ন্যাশনালে চিকিৎসক অতীশ হালদারের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার করে সেই খোলা সেফটিপিন বার করা হয়েছে। বরাত জোরে এ বারের মতো বেঁচে গিয়েছেন। হাসপাতালের ভর্তি থাকলেও কথাবার্তা বলা, খাওয়াদাওয়ায় সমস্যা নেই। হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের ১৪ নম্বর শয্যায় বসে ওমর আলি বললেন, “আমাদের গ্রামে প্রায় সবারই একই অবস্থা। বড় কোনও রোগ হলে, দুর্ঘটনা ঘটলে, তক্ষুণি অপারেশন দরকার হলে মরাটাই ভবিতব্য। হাতুড়ে ডাক্তার কিছু করতে পারল তো ভাল। না হলে কিচ্ছু করার নেই গরিব মানুষের।” তিনি জানান, তাঁদের গ্রামের ছয় কিলোমিটার দূরে ছোট মোল্লাখালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখানে একজন ডাক্তার আছে। কিন্তু স্বাভাবিক প্রসব ছাড়া কিছু হয় না। অপারেশনের জন্য ক্যানিং যেতে হলে প্রথমে ভ্যান তার পর ভটভটিতে চুনোখালি নদী আর মাতলা নদী পার হতে হয়। টাকার জোগাড় যদি বা অতিকষ্টে হয়, পথ পেরোতেই রোগীর প্রাণ বেরিয়ে যায়।
স্বাস্থ্যঅধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীও বলেছেন, “ওমর আলির কথা মিথ্যা নয়। গোসাবা এলাকার প্রায় ৪৮টি গ্রামে যোগাযোগ ও স্বাস্থ্যপরিষেবা তেমন নেই। সেখানে কিছু কমিউনিটি ডেলিভারি সেন্টার গড়ে প্রসবের কিছু ব্যবস্থা করা গিয়েছে মাত্র। কিন্তু জরুরি অস্ত্রোপচারের দরকার পড়লে মানুষকে প্রচুর পথ উজিয়ে হয় ক্যানিং হাসপাতালে, নইলে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে আসতে হয়।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্যস্বাস্থ্য অধিকর্তা অসীম দাস মালাকারও জানান, গোসাবা এলাকার ৬টি দ্বীপে নৌকোর মোবাইল হেলথ ইউনিটে আউটডোর করা হয় সপ্তাহে ৬ দিন। সেখানে এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা হয়। কিন্তু অপারেশনের ব্যবস্থা নেই। তাঁর কথায়, “ হঠাৎ অস্ত্রোপচার দরকার হলে কিছু করার থাকে না।” তা হলে কী হবে রাজ্যের এই প্রান্তিক হতদরিদ্র মানুষগুলির? একটি সেফটিপিন সেই প্রশ্নই তুলে দিল নতুন করে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.