হাসপাতালের এক বিভাগ থেকে আর এক বিভাগ সরজমিনে ঘুরে দেখছিলেন তিনি। হাতে রয়েছে পেন, ছোট একটি নোটবুক। সঙ্গে রয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, সুপার-সহ চিকিৎসক, নার্সরা। মহিলা বিভাগ থেকে বেরোতেই তাঁকে শুনতে হল, “স্যার, ডাক্তারকে একটু বলে দিন যেন আমাদের রোগীটাকে ভাল করে দেখে।” হরিহরপাড়ার পিঞ্জরা বিবিকে দেখে এক এক করে এগিয়ে আসেন জলঙ্গির কৃষ্ণপদ মণ্ডল, নবগ্রামের আরমান শেখরাও। তাঁদের কারও অভিযোগ, ‘‘নার্সরা এমন খারাপ ব্যবহার করে যে মনে হয় রোগী ও তার বাড়ির লোকজন যেন মানুষই নয়।’’ কেউ বললেন, “জানেন, আয়ারাও কিছু কম যান না। কিছু বলতে গেলেই এমন মুখ ঝামটা দেয় যে দরকারি কথা বলতেও কেমন যেন ভয় লাগে।”
সোমবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে রোগীর বাড়ির লোকজনের মুখে এমনই সব অভিযোগ শুনতে হল বিধানসভার পরিষদীয় দলের সদস্য তথা পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি তৃণমূলের বিধায়ক নির্মল মাজিকে। নির্মলবাবু বলেন, “গত তিন দশক ধরে হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছিল। আমরা তা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। সময় লাগবে। এক দিনে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। তবে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের রোগীদের স্বার্থে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে পরিণত করব।” |
এ দিন মেডিক্যাল কলেজে এসে ‘ফেয়ার প্রাইস শপ’-এ সমস্ত রকমের ওষুধ-স্যালাইন মজুত আছে কি না খতিয়ে দেখার পাশাপাশি মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনও ওষুধ বা স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে কিনা জানতে নিজেই তা যাচাই করেন। হাসপাতালের রান্নাঘরে ঢুকে তিনি রোগীদের খাবার নিয়েও খোঁজখবর নেন। সম্প্রতি সদর হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়েছে শিশু বিভাগও ঘুরে দেখেন তিনি।
সাংসদ অধীর চৌধুরীর ‘খাস তালুক’ বহরমপুরে এসে নির্মলবাবুর অভিযোগ, “এখানকার বিধায়ক বা সাংসদ কেউ এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকে হাসপাতালের স্বার্থে কোনও অর্থ অনুদান করেননি। বহরমপুরের সাংসদ তথা রেল দফতরের প্রতিমন্ত্রীও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে তাঁর তহবিল থেকে কোনও অর্থ হাসপাতালে দেননি।” এ প্রসঙ্গে জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের কটাক্ষ, “উনি তো আধিকারিক নন। তাই তাঁর পক্ষে সব কিছু জানা অসম্ভব। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের কাছে প্রশ্ন করলেই ঠিক তথ্য জানা যাবে। আসলে মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ জেলা সফরে আসার আগে ভুল তথ্য পরিবেশন করে জেলাবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আখেরে লাভ হবে না।” আর বহরমপুরের সাংসদ তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলছেন, “তৃণমূলের ওই বিধায়ক তাহলে তো স্বীকার করেই নিলেন যে গত আড়াই বছরে তৃণমূলের সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবায় কোনও অর্থ মঞ্জুর করেনি। ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন হয়েছে বলে মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে। তাই এখন সাংসদ বিধায়কদের এলাকা উন্নয়নের টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। ওই টাকা তো গ্রামের মানুষের রাস্তাঘাট, পানীয় জলের মতো জরুরি পরিষেবায় খরচ করা হয়। স্বাস্থ্য দফতরের প্রয়োজন হলে ওরা প্রস্তাব আকারে পাঠাক। আমরা ভেবে দেখব।” |