পুরুলিয়া
দশ ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগই নেই
প্রতি ব্লকে অন্তত একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু রাখতে হবে। রাজ্য সরকারের এমন নির্দেশিকা বামফ্রন্ট সরকারের আমলে চালু হয়েছিল। কিন্তু পুরুলিয়া জেলায় অনেক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই অন্তর্বিভাগ চালু করা হয়নি।
পুরুলিয়া জেলায় বর্তমানে ৫৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (পিএইচসি) রয়েছে। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী জেলার ২০টি ব্লকে অন্তত ২০টি পিএইচসিতে অন্তর্বিভাগ চালু থাকার কথা। বাস্তবে কিন্তু তা হয়নি। জেলার অর্ধেক ব্লকেই পিএইচসিতে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্য পরিষেবা মেলে না। ফলে জেলার গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিষেবা সঙ্কটে। রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের কথায়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষ যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে পারেন, সেই লক্ষে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দূরবর্তী এলাকা, যেখানে অনেক বেশি মানুষের বাস, তেমন এলাকার পিএইচসি-তে অন্তর্বিভাগ চালু রাখা দরকার। তা হলে সাধারণ জ্বর, পেট খারাপের মতো ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের সেখানে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করার সুবিধা হয়। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসব করানোও সম্ভব। এতে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চাপ কমবে।
কিন্তু পুরুলিয়ায় ১০টি ব্লকে এখনও পিএইচসিগুলিতে অন্তর্বিভাগ চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। ফলে সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা। সামান্য অসুখেও তাঁদের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটতে হচ্ছে। অথচ নিকটবর্তী পিএইচসি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলে তাঁদের হয়রান হওয়া কমত।
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মাধক্ষ্য উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার পুরুলিয়ায় স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। জেলায় স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে সম্প্রতি খবর নিয়ে জেনেছি পুরুলিয়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এখন ৯৩ জন চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়াও ফার্মাসিস্ট ও টেকনিশিয়ান মিলিয়ে ২৮ জন, ১৭৯ জন নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ৪৫৮টি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। ওই ঘাটতি পূরণের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানাচ্ছি।” মানবাজার ব্লকের কথা ধরলে, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব কমবেশি ৫০ কিলোমিটার। এই ব্লকের পায়রাচালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’বছর আগে অন্তর্বিভাগ চালু করা হয়েছিল। প্রথম ছ’মাস রাতেও সেখানে চিকিৎসকের দেখা মিলত। কিন্তু তারপরে চিকিৎসকের অভাবে অন্তর্বিভাগটি বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য দফতর। মানবাজারের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অরুনাংশু ঘোষ বলেন, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মাত্র চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁকে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দিতে বলা সম্ভব নয়।” পুঞ্চার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম। স্থানীয় বাগদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্ত চিকিৎসক অমিল হওয়ায় তা বেশি দিন চালানো যায়নি।” কোটশিলা ব্লকের বেগুনকোদর পিএইচসিতে অন্তর্বিভাগ চালু করার কয়েক মাসের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বলরামপুরের বাঁশগড় গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর এলাকার দেড় লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। এই ব্লকের কেরোয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগে সব সময়ের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা মিলত। কিন্তু তাও চালানো যায়নি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “জেলায় চিকিৎসকের ঘাটতি থাকায় কয়েকটি ব্লকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু করা যায়নি। চিকিৎসক পাওয়া গেলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ফের ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’’ কবে মিটবে এই সমস্য? জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “বেশিরভাগ চিকিৎসক প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে চান না। আবার যে সব চিকিৎসক ছুটি নিয়ে পড়তে যান, তাঁদের বেশিরভাগই আর ফিরে আসেন না।” তাই এই ঘাটতি কবে মিটবে, কবে ফের ওই পিএইচসিগুলোয় রাতেও চিকিৎসা মিলবে সদুত্তর নেই জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.