নয়াদিল্লির বদলে নবান্ন।
ঘরে-বাইরে নানা চাপ তো আছেই। সেই সঙ্গে ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ আপাতত নয়াদিল্লিতে গিয়ে আন্দোলনের বদলে নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে, ২০ ডিসেম্বর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুঙ্গের সাক্ষাৎ হতে পারে।
মোর্চার নেতা-কর্তাদের অনেকেরই আশা, প্রায় ৫ মাস ধরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া গুরুঙ্গকে অক্সিজেন জোগাতে পারে ওই সাক্ষাৎকার। তা হলে দলের দাবি মেনে দ্বিতীয় দফায় জিটিএ চিফ পদে বসার কথাও ভাবতে পারেন গুরুঙ্গ। দাজির্লিঙের জামুনিতে তিনি বলেন, “২০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হবে। জিটিএ-র সমস্যাগুলি নিয়েও আলোচনা হবে।” তাঁর কথায়, “আমার পদের লোভ নেই। তবে আমি জিটিএ চিফ না-থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে জানি। আগামীতে কী হবে, সময়ই বলবে।”
মোর্চা সূত্রের খবর, ডিসেম্বরে নয়াদিল্লিতে গিয়ে লাগাতার কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল গুরুঙ্গের। গত অক্টোবরে নিজেই সে কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু গুরুঙ্গের ‘দিল্লি অভিযান’ ঘোষণার পর থেকে পাহাড়ে নানা ঘটনায় মোর্চার অস্বস্তি বাড়তে থাকে। যেমন, নভেম্বরে পাহাড়ে মোর্চার বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দেন। |
মোর্চা বারেবারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দল ভাঙানোর অভিযোগ তুললেও অনেক জায়গায় ভাঙন আটকাতে পারেনি। মুকুল রায়ের বক্তব্য, “পাহাড় থেকে সমুদ্র, মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে সামিল হচ্ছে। যাঁরা আমাদের দলে আসছেন, তাঁদের স্বাগত জানিয়ে মর্যাদার আসন দিচ্ছি।”
এর উপরে চাপ বাড়াচ্ছে জিএনএলএফ। শিলিগুড়িতে বসে থাকলেও আগামী বছরের গোড়ায় পাহাড়ে ফিরে ফের রাজনীতির মঞ্চে নামার কথা ভাবছেন সুবাস ঘিসিংও। অন্তত ঘিসিং-ঘনিষ্ঠরা সেটাই দাবি করছেন। তাই মোর্চার প্রথম সারির কিছু নেতাও স্বীকার করেন, গুরুঙ্গের ঘুম কেড়েছে জিএনএলএফ। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জিএনএলএফ পাহাড়ে যে সব মিছিল, সমাবেশ করেছে, তাতে উপচে পড়েছে ভিড়। ঘটনাচক্রে, গুরুঙ্গ জিটিএ ‘চিফ’ থাকাকালীন নানা ক্ষেত্রে জিএনএলএফ সভা-সমাবেশের অনুমতিই পায়নি। জিএনএলএফ-এর নেতাদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের সভার অনুমতি বাতিলের জন্য মোর্চার তরফে নবান্নে অনুরোধ পাঠানো হয়। কিন্তু রাজ্য তা অগ্রাহ্য করে। অবশ্য ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মোর্চার দাবি।
এর পরে ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলে কংগ্রেসের শোচনীয় ফল দেখে মোর্চা নেতারা তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন। সেখানেই ঠিক হয়, গুরুঙ্গ আপাতত নয়াদিল্লি যাবেন না। বদলে রোশন গিরি ও দাওয়া লামাকে সেখানে পাঠিয়েছেন মোর্চা সভাপতি। এবং তিনি নিজে যে নয়াদিল্লির চেয়ে নবান্নকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন। গুরুঙ্গ-ঘনিষ্ঠ মোর্চার এক নেতা জানান, মুখ্যমন্ত্রী নিজে গুরুঙ্গকে ফের জিটিএ-এর হাল ধরতে বললে বর্তমান পরিস্থিতিতে সে কথা অগ্রাহ্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। দ্বিতীয় দফায় গুরুঙ্গ জিটিএ চিফ পদে বসলে ধীরে ধীরে পাহাড় থেকে সিআরপি প্রত্যাহার করানো, জেলবন্দি মোর্চা নেতা-কর্মীদের ছাড়ানো, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে বিরোধী দলগুলিকে মোকাবিলা করার জায়গা ফের শক্তপোক্ত হবে বলেও মোর্চা নেতাদের অনেকের মত।
সরকারি সূত্রের খবর, গুরুঙ্গের অনুরোধে মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাতের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি মোর্চা প্রধানকে জিটিএ চিফ পদে বসার জন্য আদপে অনুরোধ করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সরকারি তরফেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “আমি কোনও মন্তব্য করব না।” তাই নবান্ন থেকে গুরুঙ্গ কতটা বাড়তি অক্সিজেন পান, সেটাই এখন পাহাড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয়। |