রাস্তায় ইটের তাপ্পি নয়, অবরোধ-বিক্ষোভে
এলাকাবাসীর সঙ্গে সামিল হলেন যাত্রীরাও
পিচের রাস্তা মেরামতির সময় ইটের খোয়া দিয়ে তাপ্পি দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঠিকভাবে রাস্তা সংস্কার না হওয়ার জন্য সোমবার বসিরহাটের হরিশপুরের কাছে বেলা ১১টা থেকে টাকি রোড অবরোধের জেরে চরম নাকাল হতে হল যানচালক থেকে যাত্রীদের। খারাপ রাস্তার জন্য নিয়মিত দুর্ভোগ এবং রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল হলেন যাত্রীরাও।
হরিশপুরে টাকি রোডে অবরোধ স্থানীয় বাসিন্দাদের। ছবি: নির্মল বসু।
বিক্ষোভকারীরা দাবি জানান, বর্ষার সময়ে রাস্তার গর্ত মেরামত করা হয়েছিল যে ইটের খোয়া দিয়ে তার ফলে এখন তাঁদের ধুলোয় জেরবার হতে হচ্ছে। তাই ইটের খোয়া না ফেলে পাথর, পিচ দয়ে রাস্তার সংস্কার করতে হবে। জনতার প্রবল বিক্ষোভে যান চলাচল আটকে যাওয়ায় ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, পূর্ত দফতরের কর্তাদের মধ্যস্থতায় অভিযোগের বিষয়ে দু’-একদিনের মধ্যে পুলিশ-প্রশাসন ও বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক হবে। এর পরেই বিকেল ৩টে নাগাদ অবরোধ ওঠে।
গোটা বসিরহাট মহকুমাতেই রাস্তার খারাপ অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার মহকুমাবাসী। হরিশপুর, বেলতলা, মৈত্রবাগান, ত্রিমোহিনী, বাগজোলা, কলসুর, বাদুড়িয়া প্রভৃতি জায়গায় কখনও রাস্তা অবরোধ করে, কখনও রাস্তা কেটে দিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। প্রতিবাদে ফলে দু’একটি রাস্তায় মেরামতি কাজ শুরু হলেও তা নিয়েও ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। বর্ষায় খানাখন্দে ভর্তি রাস্তা নিয়ে বিক্ষোভের ফলে বর্ষার পরেই কয়েকটি রাস্তায় ইট ফেলে গর্ত বোজানোর কাজ হয়েছিল। আর সেটাই ওই সব এলাকার মানুষের কাছে আর এক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতের শুকনো হাওয়া এবং গাড়ি চলাচলের ফলে গুঁড়ো হয়ে যাওয়া ইটের ধুলোয় এলাকার বাসিন্দাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এমনই অবস্থা যে ওই সব এলাকায় রাস্তার দু’পাশের বাড়িঘরের জানলা বেলা হলেই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। ধুলো আটকাতে দোকানের সামনে ঝোলানো হচ্ছে সাদা প্লাস্টিকের চাদর। রাস্তায় বেরোনো লোকজন মুখ ঢাকছেন কাপড়ে। বাচ্চাদের মুখে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে মাস্ক।
বসিরহাটের দু’টি অন্যতম প্রধান রাস্তা ইটিন্ডা ও টাকি রোডের অবস্থা এমনই যে গত এক মাসে বহুবারই ক্ষোভ-বিক্ষোভ-প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন বাসিন্দারা। তার জেরে সম্প্রতি বসিরহাটের সংগ্রামপুর থেকে স্বরূপনগরের বিডিও অফিস পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার অংশের মেরামতির জন্য ১২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়। ওই রাস্তার কাজও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বসিরহাটের খোলাপোতা থেকে বাদুড়িয়া এবং কলসুর হয়ে মছলন্দপুর স্টেশন পর্যন্ত রাস্তার কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। একইসঙ্গে বসিরহাটের ত্রিমোহিনী থেকে বেলতলা পর্যন্ত ইটিন্ডা রাস্তায় ইটের ধুলোয় নাকাল হতে হচ্ছে যাত্রী থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সকলকেই। দুর্ঘটনাও ঘটে চলেছে। মহকুমাবাসীর অভিযোগ, বর্ষার বহু আগে থেকেই মহকুমার বেশিরভাগ রাস্তার হাল শোচনীয়। বর্ষার পর তা আরও মারাত্মক ও বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে। রাস্তা সারাই নিয়ে প্রশাসন যে পদক্ষেপ করছে তা হাস্যকর। যেখানে পিচ, পাথর গিয়ে মেরামতির দরকার সেখানে ইটের খোয়া দিয়ে তাপ্পি মারা হচ্ছে। যার পরিণাম, গাড়ি চলাচলের ফলে ইটের খোয়া ভেঙে গুঁড়ো হয়ে এমন ধুলো উড়ছে যে মনে হচ্ছে রাস্তা আগের অবস্থাতেই থাকলে ভাল ছিল। সুকেশ ঘোষাল, প্রশান্ত রায়, বোরিয়া সেনগুপ্ত, বামাচরণ হোগলা বলেন, “আগে গর্তে ভরা রাস্তায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতাম। বর্ষার পরে ইটের খোয়া দিয়ে গর্ত বুজিয়ে আর এক নতুন সমস্যায় আমাদের ফেলে দিয়েছে প্রশাসন। ধুলোর জন্য এখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়াই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” কাকলি মণ্ডল, রত্না ঘোষ দস্তিদার বলেন, “রাস্তায় বেরোলেই বাড়ি ফিরে স্নান করতে হচ্ছে। খারাপ রাস্তার কল্যাণে ধুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে সাবান, শ্যাম্পুর খরচা বেড়ে গিয়েছে।”
যাত্রী তথা বাসিন্দাদের ক্ষোভ যে অমূলক নয় তা স্বীকার করেছেন মহকুমা পূর্ত দফতরের কর্তারাও। হরিশপুর থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত যে ভাবে রাস্তা সংস্কার হচ্ছে, তাতে যে এক বছরও টিকবে না তা পক্ষান্তরে স্বীকার করেছে পূর্ত দফতরও। তবে একই সঙ্গে তাদের বক্তব্য, যে ভাবে কাজ হওয়ার কথা সে ভাবেই কাজ হচ্ছে। পূর্ত দফতরের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুপ্তেন বসু বলেন, “হরিশপুর থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত টাকি রোডের ২ কিলোমিটার অংশের জন্য ২৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ওই রাস্তায় গর্তের গভীরতা অনুযায়ী তিন ইঞ্চি নীচে ইটের খোয়া ও তার উপর পাথর দিয়ে প্রথমে রাস্তা সমান করার কাজ হচ্ছে। তার উপর এক ইঞ্চি কার্পেটিং করার পরে পিচ দিয়ে ৬ মিলিমিটার সিলকোট করা হবে।” আর এখানেই আরও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। রাস্তা সংস্কার নিয়ে সরাসরি পক্ষপাত ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন ওই সব এলাকার মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামপুর থেকে স্বরূপনগরের বিডিও অফিস পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার অংশের জন্য যেখানে প্রায় ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, সেখানে টাকি রোডের মতো মহকুমার প্রধান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দু’ কিলোমিটার অংশের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২৯ লক্ষ টাকা। এতে বোঝাই যাচ্ছে রাস্তা সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও গাফিলতি রয়েছে প্রশাসনের।
তবে পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, মহকুমার অন্য রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হলেও টেন্ডারে কেউ অংশ না নেওয়ায় ত্রিমোহিনী থেকে বেলতলা পর্যন্ত রাস্তার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। খোলাপোতা বিডিও অফিস থেকে হরিশপুর পর্যন্ত টাকি রোডের কাজ এক মাসের মধ্যেই শেষ করে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।”
যদিও মহকুমাবাসীর বক্তব্য, তাপ্পি দিয়ে কোনওমতে দায়সারা কাজ নয়, রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার চান তাঁরা।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.