মেরামতির অভাবে হাওড়া জেলা জুড়ে বেহাল হয়ে পড়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ প্রকল্পের বহু রাস্তা। রাস্তাগুলির অধিকাংশই কার্যত চলাচলের অযোগ্য। এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বেহাল রাস্তার কারণে যাতায়াতে যেমন সমস্যা বেড়েছে, তেমনই শোচনীয় অবস্থা গ্রামীণ পরিবহণেরও। সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলা পরিষদের কর্তাদের দাবি, রাস্তাগুলি মেরামতির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ প্রকল্পে তৈরি জেলার যে সব রাস্তার হাল অত্যন্ত খারাপ, তার মধ্যে রয়েছে পাঁচলার জয়নগর বাজার ও গঙ্গাধরপুর কালীতলার মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার অংশ। এটি তৈরি হয়েছিল ২০০৫ সাল নাগাদ। ঝাঁ চকচকে পিচ ঢালা সেই রাস্তা এখন খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। একই হাল ২০০৩ সালে তৈরি আমতা থানার সামনে চৌরাস্তার মোড় থেকে বালিচক পর্যন্ত প্রায় ন’কিলোমিটার রাস্তার। এটি তৈরি হয়েছিল ২০০৩ সাল নাগাদ। আমতার রসপুর থেকে বালিচক পর্যন্ত রাস্তার হালও এমনই। |
পাঁচলার জয়নগর থেকে কালীতলা পর্যন্ত ৩ কিমি রাস্তার অবস্থা।—নিজস্ব চিত্র। |
গ্রামীণ পরিবহণের ক্ষেত্রে ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ প্রকল্পে তৈরি এই রাস্তাগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অটোরিকশা, ট্রেকার থেকে ছোট গাড়ি চলাচল করে ওই সব রাস্তায়। ব্যবসায়ীরা সহজেই মিনি ট্রাকে করে সব্জি আমদানি করায় গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে বাজার। পাশাপাশি ইমারতীর জিনিসপত্রও মিনি ট্রাকে করে গ্রামের ভিতরে আনা সহজ হওয়ায় পাকা বাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে ওই সব এলাকায়। কিন্তু বর্তমানে ওই সব রাস্তার যা হাল তাতে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। পাঁচলার জয়নগর বাজার থেকে গঙ্গাধরপুর-কালীতলা পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তায় চলাচল করে অসংখ্য অটোরিকশা, ছোট গাড়ি এবং মোটরবাইক। গঙ্গাধরপুর, জুজারসাহা এবং দেউলপুর এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন ওই রাস্তায় যাতায়াত করেন। কিন্তু গোটা রাস্তাই খানাখন্দে বেহাল। ফলে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয় যাত্রীদের।
গঙ্গাধরপুরের বাসিন্দা ঝন্টু মাল এবং পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গাড়িতে চড়লে ভয় লাগে। পালকির মতো দুলতে থাকে গাড়ি।” গঙ্গাধরপুরের বাসিন্দা তথা পাঁচলার ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ দাসের প্রশ্ন, “ঠিকা সংস্থার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই রাস্তার মেরামতির দায়িত্ব জেলা পরিষদের। কিন্তু তাদের বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি। ফলে রাস্তা নিয়ে মানুষের দুর্দশা কাটেনি।” ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ প্রকল্পে রাস্তা তৈরি হলে নিয়মানুযায়ী যে ঠিকা সংস্থা রাস্তা তৈরি করে, কাজ শেষ হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতির দায়িত্ব তাদেরই। ওই সময়ের পরে রাস্তা মেরামতির দায়িত্ব বর্তায় জেলা পরিষদের উপরে। এ জন্য কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জেলা পরিষদকে টাকাও দেয়। হাওড়ায় যে সব রাস্তার মেরামতির দায়িত্ব ইতিমধ্যেই জেলা পরিষদের হাতে এসেছে মূলত সেই সব রাস্তারই হাল সবচেয়ে খারাপ।
কেন্দ্র টাকা দিলেও তা হলে রাস্তা মেরামতি কাজ হচ্ছে না কেন?
জেলা পরিষদের এক কর্তা জানান, ওই টাকা অনিয়মিত ভাবে আসে। ফলে ঠিক সময়ে মেরামতির কাজে হাত দেওয়া যায় না। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “ঠিকা সংস্থার রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন রাস্তাগুলির সংস্কারে হাত দেওয়া হচ্ছে। যেগুলির হাল সবচেয়ে খারাপ সেই সব রাস্তা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হবে।” |