কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ধনেখালিতে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করার সময়ে প্রহৃত হলেন প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী নরেন দে। রবিবারের ঘটনা। এক দল যুবক লাঠি, বাঁশ নিয়ে ঢুকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটায় বর্ষীয়ান ওই ফরওয়ার্ড ব্লক (ফব) নেতাকে। তাঁর দু’চোখে আঘাত লাগে। রক্ত ঝরতে থাকে। তিনি জ্ঞান হারান। তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই হামলায় জখম হন ধনেখালির প্রাক্তন বিধায়ক অজিত পাত্র-সহ আরও ১০ জন।
নরেনবাবু ও বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরাই এ দিন ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। ঘটনার কড়া নিন্দা করে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন ফব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। বিধানসভা খুললে আজ, সোমবার থেকে বাম বিধায়কেরা বিষয়টি নিয়ে সরব হতে চান। ঘটনার নিন্দা করেছে সিপিএমও।
প্রবীণতম বাম নেতা অশোকবাবুর বক্তব্য, “দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে কর্মিসভা করতে গিয়ে নরেনবাবুকে যে ভাবে তৃণমূলের বর্বরতার শিকার হতে হল, তার নিন্দার ভাষা নেই! নরেনবাবু বর্ষীয়ান নেতা, দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং সকলের কাছে পরিচিত। তার উপরে এমন হামলার পরে আমরা মুখ বুজে বসে থাকব না! যে যেখানে যেমন ভাবে পেরেছেন, স্থানীয় স্তরে সেই ভাবে আজ থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।” সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “ধনেখালিতে আমাদের দলীয় কার্যালয়টি ওরা (তৃণমূল) দীর্ঘদিন ধরে খুলতে দিচ্ছে না। এখন ফরওয়ার্ড ব্লকের কার্যালয়ে বৈঠকের মধ্যেও হামলা চালাল। একজন বর্ষীয়ান নেতাকে যে ভাবে মারধর করল তার মতো নিন্দনীয় ঘটনা আর হতে পারে না। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।” হুগলি জেলায় ফব-র সম্মেলনও সম্প্রতি তৃণমূলের হুমকিতে কী ভাবে আগে গুটিয়ে ফেলতে হয়েছিল, সেই কথাও এ দিন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ফব নেতারা। |
হাসপাতালে রক্তাক্ত নরেন দে। তাপস ঘোষের ছবি। |
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু তাতে দলের কেউ যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।” পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ধনেখালিতে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এক পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ ধনেখালির সিনেমাতলায় ফরওয়ার্ড ব্লকের দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করতে যান নরেনবাবু। পাশের একটি লজে ওই সময়ে তৃণমূল মহিলা সমিতির বৈঠক চলছিল। বাইরে থাকা কিছু ফরওয়ার্ড সমর্থক তাঁদের মহিলা সমর্থকদের উদ্দেশে কটূক্তি করে, এই অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানান এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে মারামারি বাধে। সেই ফাঁকেই এক দল তৃণমূল সমর্থক ফরয়ার্ড ব্লকের কার্যালয়ে ঢুকে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। কার্যালয়ের বাইরে থাকা নরেনবাবুর গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে।
নরেনবাবু বলেন, “আমরা সুষ্ঠুু ভাবে বৈঠক করছিলাম। হঠাৎ জনা কুড়ি তৃণমূলের ছেলে লাঠি, বাঁশ নিয়ে ঢুকে কিছু বোঝার আগেই মারতে শুরু করে। সমর্থকদের বাঁচাতে গেলে আমার উপরে হামলা চালায়। আমাকে মাটিতে ফেলে বুকে, পেটে লাথি মারে। দু’চোখে ঘুষি চালায়। রক্ত পড়তে থাকে। আমি জ্ঞান হারাই।”
নরেনবাবুর উপরে হামলার খবর দলের রাজ্য দফতরে এসে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই ফব-র রাজ্য নেতৃত্ব পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলম সৈরানিকে আশ্বাস দেন, নরেনবাবুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পুলিশই তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেবে। |