জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতীয় টেনিসের কেন্দ্রীয় শিবির হয়ে উঠেছে সানিয়া মির্জা টেনিস অ্যাকাডেমি। হায়দরাবাদের উপনগরী মৈনাবাদ এই মুহূর্তে দেশের জাতীয় টেনিস দলের বাসস্থান। সেখানে এসএমটিএ-তে লিয়েন্ডার পেজ (তিনি এখন সিঙ্গাপুরে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সফরে) বাদে প্রায় গোটা ভারতীয় ডেভিস কাপ টিম এক সপ্তাহ হয়ে গেল অফ সিজন অনুশীলন করছে। সঙ্গে সানিয়া আর তাঁর ২০১৪-র পেশাদার সার্কিটে ডাবলস সঙ্গী জিম্বাবোয়ের কারা ব্ল্যাক-ও। ১৫ ডিসেম্বর অবধি চলবে তারকাখচিত কন্ডিশনিং ক্যাম্প। যার পুরোটার দায়িত্বে ভারতীয় টেনিস প্লেয়ারদের সংস্থা বা, আইটিপিএ। যার বয়সও এখনও এক বছর হয়নি।
গত বছর পর্যন্ত রোহন বোপান্না, সোমদেব দেববর্মন, সানিয়ারা অফ সিজনে এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনুশীলন করতেন। কেউ বেঙ্গালুরুতে তো কেউ হায়দরাবাদে। কেউ আবার মার্কিন মুলুকে। আইটিপিএ-র সৌজন্যে এই প্রথম দেশের সেরা টেনিস প্লেয়াররা নতুন মরসুমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন একই ছাতার তলায়। সোমদেব তো ভার্জিনিয়া ছেড়ে ব্যক্তিগত বিদেশি ট্রেনারকে নিয়ে হায়দরাবাদে সানিয়ার সদ্যোজাত অ্যাকাডেমিতে এসে রয়েছেন। বোপান্না-ও ব্যক্তিগত কোচ সমেত এখন সেখানে। রয়েছেন সাকেত মিনানি, সনম সিংহ, বিষ্ণু বর্ধনরা। সব মিলিয়ে এক ডজন টেনিস তারকা।
ভারতের ডেভিস কাপে এশিয়া-ওশেনিয়া এক নম্বর গ্রুপের প্রথম রাউন্ড চিনা তাইপের বিরুদ্ধে ইনদওরের হার্ডকোর্টে আগামী ৩১ জানুয়ারি-২ ফেব্রুয়ারি। তার আগে ৩০ ডিসেম্বর শুরু হয়ে যাচ্ছে দেশের একমাত্র এটিপি ট্যুরের টুর্নামেন্টচেন্নাই ওপেন। সেখানে শোনা যাচ্ছে লিয়েন্ডার খেললেও মহেশ ভূপতি খেলবেন না। বস্তুত ২০১৪-র যে কোনও সময়ে আন্তর্জাতিক টেনিস থেকে অবসর নিয়ে ফেলবেন মহেশ। যে কারণে বেছে-বেছে টুর্নামেন্ট খেলবেন। আপাতত প্রথম স্টেশন জানুয়ারিতে অস্ট্রেলীয় ওপেন। |
অস্ট্রেলীয় ওপেন যে সারফেসে হয়, হুবহু সেই প্লেক্সিপেভ হার্ডকোর্ট ন’টা পাতা রয়েছে সানিয়ার অ্যাকাডেমিতে। সঙ্গে ইউরোপীয় মানের তিনটে ক্লে কোর্ট। প্লেয়ারদের ফিটনেস চর্চার জন্য অত্যাধুনিক জিম ছাড়াও আছে একটি মিনি ফুটবল গ্রাউন্ড। যার চারপাশে লাগোয়া জগিং ট্র্যাক। সুইমিং পুল তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রতি বছর এগারো মাস পেশাদার সার্কিট চষে বেড়ানোর পর ডিসেম্বরের তিন-চার সপ্তাহ টেনিস প্লেয়ারদের অফ সিজন। এই সময় ফেডেরার-শারাপোভার মতো মেগাতারকারা দুবাইয়ে অফ সিজন ট্রেনিং করে-টরে থাকেন। সোমদেব-বোপান্নাদের এত দিনে অফ সিজন ট্রেনিংয়ের একটা নির্দিষ্ট জায়গা যেন মিলল! যেটা সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থার (এআইটিএ) কাছ থেকে সোমদেবরা পেলে আরও ন্যায্য হত কি না, সেই প্রশ্ন দেশের টেনিসমহলে কোথাও কোথাও উঠছে। উত্তরে এআইটিএ-র অন্যতম শীর্ষকর্তা হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বললেন, “প্রতি বছরই ডিসেম্বরে এআইটিএ দিল্লিতে একটা ন্যাশনাল ক্যাম্প করে। সেখানে কোনও ডেভিসকাপার অফ সিজন ট্রেনিং করতে আসে না। তা ছাড়া, সানিয়ার অ্যাকাডেমিতে এআইটিএ-ও ভারতের ফেড কাপ টিমের কন্ডিশনিং ক্যাম্প এ মাসেই করবে।”
আইটিপিএ প্রেসিডেন্ট জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এ দিন হায়দরাবাদ থেকে মোবাইলে বললেন, “এআইটিএ-র সঙ্গে প্লেয়ার’স অ্যাসোসিয়েশনের কোনও বিরোধের প্রশ্ন নেই। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এ দেশের প্লেয়ারদের বেশি সুযোগসুবিধা দেওয়া। যাতে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভাল করতে পারে। কিন্তু কোন প্লেয়ার জাতীয় দলে নির্বাচিত হবে, সেটা পুরোপুরি এআইটিএ-র নির্বাচকদের ব্যাপার।” সংস্থার অর্থ তহবিল গড়তে আইটিপিএ মুম্বইয়ের খার জিমখানায় ২১-২২ ডিসেম্বর এক প্রদর্শনী টুর্নামেন্ট করছে। পরের লক্ষ্য, ছোটখাটো একটা ঘরোয়া পেশাদার সার্কিট গড়ে সেখানে দেশের জুনিয়র প্লেয়ারদের খেলিয়ে তাঁদের বেশি রোজগারের ব্যবস্থা করা। |