আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছিল তাঁর নামে। দুর্নীতির প্রতিবাদে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল।
বছর দেড়েক ধরে সেই অপবাদ মাথায় নিয়ে সপরিবার কোনও মতে কাটিয়েছেন আরামবাগ গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ সাজিদুল ইসলাম। আইনের পথেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন, এমনটা জেদ ধরেন। সেই মতো ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন সাজিদুল। গত ২৯ নভেম্বর হুগলি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি মিলেছে অধ্যক্ষের। যে রেফ্রিজারেটর কেনার ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে, সেই কোম্পানিকে দোষী সাব্যস্ত করে আর্থিক জরিমানা করেছে আদালত। সাজিদুল বলেন, “ক্ষতিপূরণের টাকার অঙ্কটা ধর্তব্য নয়। যে অপমান, মিথ্যা অপবাদ বয়ে বেড়াতে হচ্ছিল তার অবসান হল।”
কলেজ সূত্রের খবর, গত বছরের গোড়ায় ইউজিসি তহবিলের ২১ লক্ষ টাকা মেলে। তা থেকে একটি বিইই ৫ স্টার রিফ্রিজেরেটার কেনার জন্য বরাত দেওয়া হয় কলকাতার একটি সংস্থাকে। সেই সংস্থা বিইই ৫ স্টার রেফ্রিজারেটরের দাম বাবদ ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা নেয়। কিন্তু কলেজে পাঠানো হয় বিইই ৩ স্টার রেফ্রিজারেটর। কলেজ থেকে সংস্থাটিকে বারবার সেটি বদল কিংবা টাকা ফেরতের কথা বলা হলেও প্রথমে তারা সময় নেয়। পরে কোনও যোগাযোগ করেনি বলে অভিযোগ।
কিন্তু এই ঘটনায় দায় চাপে সাজিদুলের মাথায়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করেন কলেজ পরিচালন কমিটির সরকার মনোনীত সদস্য তৃণমূল নেতা স্বপন নন্দী। পুলিশ গিয়ে অধ্যক্ষকে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ ওঠে। |
যে মিথ্যা অপবাদ বয়ে বেড়াতে
হচ্ছিল, এ বার তার অবসান হল।
সাজিদুল ইসলাম
অধ্যক্ষ |
কিছু একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।
সে সব এখন মিটে গিয়েছে।
স্বপন নন্দী
পরিচালন কমিটির সভাপতি |
|
গত বছর এপ্রিল মাসে হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করেন সাজিদুল। তাঁর আইনজীবী রামচন্দ্র দাস জানান, গত ২৯ নভেম্বর এক রায়ে বিচারক জানিয়েছেন, বেশি টাকা নিয়ে কম দামের মাল সরবরাহের দায় সংশ্লিষ্ট সংস্থারই। এই ক’দিনে অধ্যক্ষকে যে মানসিক যন্ত্রণা, উদ্বেগ এবং হয়রানি ভোগ করতে হয়েছে, সে জন্য ওই সংস্থার তরফে সাজিদুলকে এক মাসের মধ্যে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ছাড়া, দিতে হবে মামলা চালানোর খরচ হিসাবে আরও ৫ হাজার টাকা। তা বাদেও এই রায় বের হওয়ার এক মাসের মধ্যে কলেজ যে ক্ষমতাসম্পন্ন রেফ্রিজারেটরের টাকা মিটিয়েছিল, তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুবা সেই ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা ওই সময়ের মধ্যেই ফেরত দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমস্ত টাকা পরিশোধ করা না হলে ৯ শতাংশ হারে সুদ দিয়ে তা মেটাতে হবে।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত বছর ২১ মে থানায় অভিযোগ করেন স্বপনবাবু। ২১ এপ্রিল কলেজ পরিচালন সমিতির ওই সরকার মনোনীত প্রতিনিধির বিরুদ্ধে উন্নয়নমূলক কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন আরামবাগ গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ। স্বপনবাবুকে ডেকে সতর্ক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালন কমিটির বর্তমান সভাপতি স্বপনবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, “কিছু একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সে সব এখন মিটে গিয়েছে।”
|