নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
ছয় বাম কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সোমবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে আরামবাগ পুরসভার ক্ষমতাও চলে এল রাজ্যের শাসক দলের হাতে। টানা ২৮ বছর পরে ক্ষমতা হারাল বামফ্রন্ট। পদত্যাগ করলেন পুরপ্রধান গোপল কচ।
এ দিন কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে নতুন দলে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিলেন আরামবাগের ছয় বাম কাউন্সিলর। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক সরকার এবং সিপিএম কাউন্সিলর শিবনাথ মালিক (১১ নম্বর ওয়ার্ড), সুজিত বেরা (১৭ নম্বর ওয়ার্ড), সঞ্চিতা মণ্ডল (১ নম্বর ওয়ার্ড), রফিকুল ইসলাম (১৬ নম্বর ওয়ার্ড) এবং অসিতবরণ লায়েক (১৮ নম্বর ওয়ার্ড)। প্রথম পাঁচ জন রবিবারই তৃণমূল ভবনে গিয়ে ওই দলে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সোমবার ওই দলে ভিড়ে যান অসিতবরণবাবুও।
রবিবারই দীপকবাবু দাবি করেছিলেন, তাঁর দল রাজ্যে বিরোধী বিরোধী হওয়ায় পুরসভায় কোনও কাজ করা যাচ্ছিল না। নতুন দলে যোগ দেওয়ার পরে এ দিন তিনি বলেন, “মুকুল রায় (তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক) আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলে থেকে কাজের অনেক সুযোগ পাব। মর্যাদা নিয়েই কাজ করতে পারব। কে কোন রাজনৈতিক দল থেকে এসেছি সেটা ধর্তব্য নয়। এখন আমার প্রথম কাজ শহরে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করা যায়। মানুষকে বোঝাতে হবে, তৃণমূল ক্ষতিকারক নয়।” একই ভাবে শান্তি স্থাপন এবং উন্নয়ন জারি রাখার কথা বলেছেন দলত্যাগী অন্য কাউন্সিলররাও। জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের আশ্বাস, “সাত দিনের মধ্যে আরামবাগ পুরসভার নতুন বোর্ড গঠন হবে।”
ওই ছয় কাউন্সিলর এ দিন নতুন দলে যোগ দেওয়ার আগেই পুরপ্রধান সিপিএমের গোপাল কচ পুরসভা এবং মহকুমাশাসকের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। তাতে তিনি জানান, বামফ্রন্টের পুরবোর্ড সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায় তিনি পদত্যাগ করছেন। গোপালবাবু বলেন, “আমাদের কাউন্সিলররা দলত্যাগ করায় পুরবোর্ডে আমরা সংখ্যালঘু হয়ে গেলাম। তাই পদত্যাগ করলাম। গত ২৮ বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে সার্বিক উন্নয়নের সুযোগ দিয়েছেন মানুষ। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কতটা পেরেছি মানুষ বিচার করবেন।”
মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “পুরসভার চেয়ারম্যানের পদত্যাগ পত্র ডাকযোগে পেয়েছি,খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
২০১০ সালের পুরভোটে হুগলির ১৩টি পুরসভার মধ্যে আরামবাগেই ক্ষমতা ধরে রেখেছিল বামফ্রন্ট। ১৮ আসনের ওই পুরসভায় বামেরা পায় ১২টি এবং তৃণমূল ছ’টি আসন। সম্প্রতি এক সিপিএম কাউন্সিলর পদত্যাগ করেন। সোমবার ৬কাউন্সিলর দলত্যাগ করায় ওই পুরসভায় তৃণমূলের সদস্যসংখ্যা ছয় থেকে বেড়ে হল ১২। সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে তৃণমূল চলে এল পুরসভার ক্ষমতায়।
শহরের বাসিন্দাদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক গোলমালের জন্য যে ভাবে উন্নয়নের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, এ বার কি তার সুরাহা হবে? নতুন বোর্ডের কাছে এখন সেটাই দেখতে চান তাঁরা।
চিত্র প্রদর্শনী। রিষড়ার মীরা স্মৃতি শিশু অঙ্কন শিক্ষা কেন্দ্রের বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনী সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এ বার ছিল প্রাক রজতজয়ন্তী বর্ষ। উদ্বোধন করেন অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন পর্বতারোহী বসন্ত সিংহরায়, জাগলার অবয়পদ মিত্র প্রমুখ। উদ্যোক্তারা জানান, পাঁচ দিন ব্যাপী ওই উৎসবে প্রদর্শনী ছাড়াও শিশুদের অঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়। গান, মুকাভিনয়, ম্যাজিক শো, পুতুল নাটক-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। বিভিন্ন কর্মশালারও আয়োজন করা হয়েছিল। বিভিন্ন দিনে এসেছিলেন ভাষাবিদ পবিত্র সরকার, প্রাক্তন ফুটবলার সুধীর কর্মকার, হোসে রামিরেজ ব্যারেটো, ইংলিশ চ্যানেল জয়ী সাঁতারু রিচা শর্মা। সংগঠনের তরফে দুঃস্থ শিশু সংস্থাকে অর্থসাহায্য করা হয়। অনুষ্ঠানের পঞ্চম তথা শেষ দিনে ছিল সাইকেলে বিশ্বভ্রমণকারী রামচন্দ্র বিশ্বাসের অনুষ্ঠান। |
নজরে আরামবাগ |
• ২৮ বছর পরে পুরসভায় ক্ষমতা হারাল বামফ্রন্ট।
• ২০১০ সালের ভোটে হুগলির ১৩টি পুরসভার মধ্যে এখানে ক্ষমতা ধরে রাখে তারা।
• ১৮টি আসনের মধ্যে বামেরা পায় ১২টি।
• সোমবার ৬ বাম কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় শাসক দলের সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে বেড়ে হল ১২।
• বামেদের সদস্য সংখ্যা কমে দাঁড়াল ৫। |
|