শেষ পর্যন্ত নিজেদের পাটনীতি তৈরির পথে হাঁটছে পশ্চিমবঙ্গ।
এ দেশে পাট চাষ ও চটকলের কেন্দ্র এই রাজ্য। কেন্দ্রীয় পাট কমিশনারের সদর দফতর কলকাতায়। জুট কর্পোরেশন এবং জাতীয় পাট পর্ষদের সদর দফতরও এখানে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাম আমল কিংবা বর্তমান তৃণমূল সরকারের জমানায় পাট উৎপাদন এবং তা থেকে পণ্য তৈরি কখনও শিল্পের মর্যাদাই পায়নি এ রাজ্যে। বরাবর থেকেছে শ্রম দফতরের অধীনে। শুধু তা-ই নয়। চিনি বা অন্যান্য খাদ্যশস্য প্যাকেজিংয়ে বাধ্যতামূলক ভাবে চটের বস্তা ব্যবহারের যে কেন্দ্রীয় আইন আছে, তা-ও কখনও মানেনি রাজ্য। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, নয়া পাটনীতি তৈরি হলে, এই সব সমস্যা মিটবে।
১৯৮৭ সালে জেপিএম আইন (জুট প্যাকেজিং মেটিরিয়ালস্ (কম্পালসরি ইউজ ইন প্যাকিং কমোডিটিজ অ্যাক্ট) চালু করে কেন্দ্র। আইন অনুযায়ী, চিনি, চাল-সহ নানা খাদ্যশস্য প্যাকিংয়ে বাধ্যতামূলক ভাবে চটের বস্তা ব্যবহার হওয়ার কথা। কিন্তু গত ২৬ বছরে রাজ্য কখনও সেই নিয়ম মানেনি।
কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক (পাটশিল্প যার অধীনে) যখনই জেপিএম আইন লঙ্ঘন করে খাদ্যশস্য ও চিনিতে চটের বস্তার বাধ্যতামূলক ব্যবহার কমায়, তখনই হইচই শুরু করে রাজ্য। সরকারে থাকার সময় এ নিয়ে সরব হয়েছে বামফ্রন্ট। একই পথে হেঁটেছে তৃণমূলও। সম্প্রতি চিনি ও খাদ্যশস্য প্যাকিংয়ে চটের বস্তার বাধ্যতামূলক ব্যবহার যথাক্রমে ২০% ও ১০% কমিয়েছে কেন্দ্র। তা নিয়েও আজ মঙ্গলবার বিধানসভায় আলোচনার নোটিস দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এ প্রসঙ্গে বাম আমলের খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বক্তব্য, “অস্বীকার করছি না যে, আমরা সচেতন হতে পারিনি। তবে ফরওয়ার্ড ব্লকের অগ্রগামী কিসান সভা এ নিয়ে হরতাল করেছে। স্লোগান দিয়েছি, প্লাস্টিক হটাও-পাট বাঁচাও। কিন্তু আলাদা পাটনীতি তৈরি করতে পারিনি।” বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আবার এই দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন শিল্প-বাণিজ্য দফতরের উপর। তিনি বলেন, “আমার দফতরের জন্য চাল সংগ্রহ করে চালকলগুলি। তারা প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে চটের বস্তা ব্যবহার করাই যে দেশের আইন, তা তো শিল্প-বাণিজ্য দফতরের বলার কথা। ওরা নির্দেশ দিলে, চটের বস্তাই ব্যবহৃত হত।” শিল্পমন্ত্রী আবার পাল্টা দায় চাপিয়েছেন বাম জমানার উপর। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “পাট যে শিল্প, সেই স্বীকৃতিই তো বাম সরকার দেয়নি। মানেনি কেন্দ্রীয় আইনও।”
কিন্তু এত দিন ওই কেন্দ্রীয় আইন মানা হয়নি কেন?
সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, হরিয়ানা, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্য রবি ও খরিফ শস্যের মরসুম শুরুর আগেই কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের কাছে চটের বস্তার চাহিদা লিখিত ভাবে জানিয়ে দেয় সকলেই। একই ভাবে মহারাষ্ট্র চাহিদা পাঠায় চিনির বস্তার জন্য। কিন্তু চাহিদা জানানোর ওই পদ্ধতিই এতদিন এড়িয়ে গিয়েছে রাজ্য।
|