যেমনটা মনে করা হয়েছিল, তেমনটাই ঘটল। চার রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচনকে সাধারণ নির্বাচনের সেমি-ফাইনাল হিসাবেই দেখছিলেন বিশেষজ্ঞরা। বিধানসভা ভোটে বিজেপির পালে হাওয়া লাগলে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠবে, এমনটাই ধারণা করেছিলেন তাঁরা। সেই ধারণাকেই সত্য প্রমাণিত করে নির্বাচনে চার রাজ্যে কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে বিজেপি ভাল ফল করায় তেতে উঠল বাজার। সোমবার ৩২৯.৮৯ পয়েন্ট বেড়ে বাজার বন্ধের সময়ে ২১,৩২৬.৪২ অঙ্কে পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করে ফেলল সেনসেক্স।
তবে এই উত্থান কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে বাজার মহলে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তেজী ভাব আরও কিছু দিন বজায় থাকবে। তবে সূচকের পারা যে উঠতেই থাকবে, এটা তাঁরা মনে করছেন না। অবশ্য লোকসভা নির্বাচনের আগে বড় কোনও পতনের সম্ভাবনাও তাঁদের চোখে পড়ছে না। যদি না আন্তর্জাতিক বা জাতীয় ক্ষেত্রে বড় মাপের কোনও অঘটন ঘটে।
এ দিন বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে আরও যে-বিষয়টি কাজ করেছে তা হল, গত শুক্রবার আমেরিকার শেয়ার বাজারেও সূচক সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছয়। পাশাপাশি, সোমবার ডলারে টাকার দামও গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অঙ্ক ছুঁয়েছে। এগুলিও সূচকের উত্থানে ইন্ধন জুগিয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ডলারে টাকার দাম এ দিন ২৮ পয়সা বাড়ার ফলে দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬১.১৩ টাকা।
বাজার অবশ্য চাঙ্গা হতে শুরু করে গত বৃহস্পতিবার থেকেই, যে দিন বুথ ফেরত সমীক্ষায় আঁচ পাওয়া গেল, বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যগুলির সিংহভাগেই কংগ্রেসের হাল খারাপ হতে পারে, পাল্লা ভারী হবে বিজেপির। ওই ইঙ্গিতে বৃহস্পতিবারই সেনসেক্স বেড়ে যায় ২৪৯ পয়েন্ট। |
তবে যে-প্রশ্নটি এখন বিশেষ ভাবে আলোচিত হচ্ছে তা হল, বাজারের এই উত্থান কি স্থায়ী হবে? প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, “অন্তত এটা বলা যেতে পারে যে, লগ্নিকারীদের মনে কেন্দ্রীয় সরকারকে ঘিরে যে-হতাশার সৃষ্টি হয়েছিল, তার অনেকটাই কেটে গিয়েছে। কংগ্রেস সরকারের ব্যপারে লগ্নিকারীদের ধারণা হয়েছিল, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই দল পঙ্গুত্বে ভুগছে। নতুন দল ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় সেই হতাশা কিছুটা যে-কেটেছে, তাতে সন্দেহ নেই।”
অবশ্য, ভোটের ফলাফলের জেরেই বাজার স্থায়ী ভাবে চাঙ্গা থাকবে, তা মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত খন্ডেলওয়াল বলেন, “এটা মনে রাখতে হবে যে, বাজারের মৌলিক উপাদানগুলির কিন্তু কোনও উন্নতি হয়নি। আমার মনে হয়, সেনসেক্স আরও ৪০০ পয়েন্টের মতো উঠে ফের কিছুটা পড়বে। তবে বড় মাপের পতনের সম্ভাবনা নেই বলেই আমার বিশ্বাস। যদি না হঠাৎ কোনও অঘটন ঘটে। তা ছাড়া বিজেপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠার সঙ্গে তাল রেখে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলিও ভারতে তাদের লগ্নি বাড়াবে বলে মনে হয়। যা সূচককে উপরের দিকে ঠেলে তুলবে।” উল্লেখ্য, চলতি বছরে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে এ পর্যন্ত ১ লক্ষ কোটি টাকা ঢেলেছে বলে সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের খবর।
অবশ্য লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পরে বাজার ফের কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অজিতবাবুদের মতো বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের ধারণা, “কেন্দ্রে খিচুড়ি সরকার হতে পারে, এমন সম্ভাবনার সৃষ্টি হলে বাজার কিন্তু চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।” |