নজর দেয়নি প্রশাসন, পর্যটন কেন্দ্র ধ্বংসস্তূপ
সাজানো-গোছানো পর্যটন কেন্দ্র পাল্টে দেবে এলাকার অর্থনৈতিক চেহারা, ভেবেছিলেন বাসিন্দারা। উষ্ণ প্রস্রবণ কেন্দ্রকে ঘিরে ৩৫ বিঘা জমির উপরে সুদৃশ্য ভ্রমণকেন্দ্র, পর্যটকদের থাকার ঘর, যোগাযোগের সুবন্দোবস্ত— এ সব তৈরিতে তাঁরা আশার আলো দেখেছিলেন। পাঁচ বছর আগে সেই আলো নিভে গিয়েছে। ভ্রমণকেন্দ্র এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বারাবনির পানিফলায়। পর্যটন কেন্দ্রটিকে ফের উন্নত করার ব্যাপারে অবশ্য কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পরিষদের নতুন বোর্ড।
শীত পড়লেই এক সময়ে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়ে যেত পানিফলায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁচিশ আগে পানিফলা ও আশপাশের মানিকডাঙা, কড়রাবাদ ইত্যাদি এলাকার বাসিন্দারা লক্ষ করেন একটি জায়গায় মাটি ফুঁড়ে অনবরত গরম জল বেরিয়ে আসছে। তা মাঠের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে জমা হচ্ছে পাশের পুকুরে। এলাকাবাসী প্রথমে সেই পুকুরে ধোয়া-মাজার কাজ করতেন। উষ্ণ প্রস্রবণের খবর লোকমুখে ছড়াতেই সেখানে স্নান করতে শুরু করেন তাঁরা। অল্পবিস্তর চাষের কাজেও ব্যবহার করতে শুরু করেন সেই জল।
ভেঙে পড়ে রয়েছে পর্যটকদের থাকার জন্য তৈরি ঘর। —নিজস্ব চিত্র।
প্রস্রবণটিকে ঘিরে এলাকার বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক চেহারা বদলানোর ভাবনা-চিন্তা শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি। পর্যটন কেন্দ্র হলে লোকজনের আসা-যাওয়া শুরু হবে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এলাকার আর্থিক হাল-হকিকত পাল্টে যাবে বলে আশা করা হলেও আর্থিক ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির সাধ্য ছিল না সেই কাজ করার। শেষে জেলা পরিষদ আর্থিক অনুদান দেয়। ২০০৪ সালে ভ্রমনকেন্দ্র তৈরি হয়। বার্ষিক ১৮ হাজার টাকায় একটি বেসরকারি সংস্থাকে এই কেন্দ্র চালানোর লিজ দেওয়া হয়। আসানসোল থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে এই পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় জমতে শুরু করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। এলাকায় নতুন নতুন দোকানপাট গড়ে ওঠে। আশপাশের গ্রামের যুবকেরা নানা ভাবে উপার্জন করতে শুরু করেন।
প্রায় পাঁচ বছর পরে হঠাৎই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। নতুন কোনও সংস্থাকে লিজ দেওয়া হয়নি। এখন সেখানে গেলে দেখা যায়, আগাছায় ঢেকে গিয়েছে এলাকা। পর্যটকদের জন্য তৈরি ঘরগুলি ভেঙে পড়েছে। উষ্ণ প্রস্রবণের বাঁধানো অংশটিও ভেঙে পড়েছে। জলাশয়টি আবর্জনা ভরা। শিশুদের খেলার নানা সরঞ্জাম চুরি হয়ে গিয়েছে। পর্যটকেরাও আর আসেন না। কেন্দ্রের গেটের কাছে জটলায় বসে থাকা যুবক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “পাঁচ বছর আগেও এই জায়গা মানুষের ভিড়ে গমগম করত। আজ সুনসান।” আর এক যুবক গোপাল মিশ্র বলেন, “এখানে অনেক খাবারের দোকান দিয়েছিলাম আমরা। পর্যটকেরা আমাদের থেকে জিনিস কিনতেন। ভালই রোজগার হত। এখন সব বন্ধ।” কেন্দ্রটির পাশে একটি বড়সড় জলাশয় আছে। পর্যটকদের জন্য সেখানে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় যুবকেরা। তাঁদেরই এক জন শেখ মুজিবর মোল্লাও বলেন, “নৌকা চালিয়ে বেশ ভালই আয় হয়েছে। এখন সে সব আর নেই।”
প্রতি বছর শীতের শুরুতেই এই পর্যটন কেন্দ্রটি পুনর্নির্মাণের দাবি তোলেন বাসিন্দারা। নানা পরিকল্পনা করে পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদও। কিন্তু কোনও কিছুই বাস্তবায়িত হয় না। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগেও যুব তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের দাবিতে পঞ্চায়েত সমিতি ও বর্ধমান জেলা পরিষদের দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের আশা ছিল, পাঁচ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই পর্যটন কেন্দ্র হয়তো এ বার শীতের আগে পুনর্নির্মাণ হবে। কিন্তু কোনও তরফে কোনও উদ্যোগ না দেখে এ বারও হতাশ ও ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা।
এত দিনেও কেন্দ্রটির হাল ফেরানো গেল না কেন, পঞ্চায়েত সমিতির তরফে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুধন বাউড়ি বলেন, “আমরা একটি খসড়া প্রস্তাব জেলা পরিষদে পাঠিয়েছি।” জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, আগের জেলা পরিষদের বোর্ড কী পরিকল্পনা করেছিল, তা তাঁরা কিছু জানেন না। দেবুবাবু বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বার কয়েক আলোচনা করেছি। পুনর্নির্মাণের খসড়া প্রকল্পও বানানো হয়েছে। আমরা সেটি সাজিয়ে তুলব।” এ বার না হলেও আগামী শীতের আগে সেজে উঠবে পানিফলার পর্যটন কেন্দ্র, আশ্বাস তাঁর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.