|
|
|
|
বয়ান ও সাক্ষ্যে অমিল সারদার দ্বিতীয় সাক্ষীরও
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সারদা-মামলার প্রথম সাক্ষীর লিখিত বয়ানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আদালতে দেওয়া সাক্ষ্য মেলেনি। শুক্রবার দ্বিতীয় সাক্ষীর ক্ষেত্রেও তার পুনরাবৃত্তি হল। ফলে বিড়ম্বনা আরও বাড়ল বিধাননগর পুলিশের।
বৃহস্পতিবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সারদা গোষ্ঠীর একটি অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বিমল গিরি। এ দিন সাক্ষ্য দিলেন সারদা গোষ্ঠীর এক সংবাদপত্রের পদস্থ কর্তা তথা কর্মচারী সংগঠনের সভাপতি উজ্জ্বল পাল। উজ্জ্বলবাবু এপ্রিলে বিধাননগর পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র পেশ করে জানিয়েছিলেন, সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন কী ভাবে তাঁদের ঠকিয়েছেন। এমনকী, সুদীপ্তবাবুর নির্দেশে অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বলেও তাঁর অভিযোগ।
কিন্তু সেই অভিযোগকারীই এ দিন মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে যা বললেন, তাতে দু’টো ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এক, তিনি অভিযোগপত্রটি লিখেছেন যে কম্পিউটারে সেটি সারদার সেই অফিসেরই, যেখানে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর দাবি। দুই, অভিযোগপত্রটি যখন লেখা হয়, তখন অফিসে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল।
এ দিন বিধাননগর আদালতে উজ্জ্বলবাবু তাঁর সাক্ষ্যে বলেন, চলতি বছরের এপ্রিলে এক দিন সংবাদপত্রের অফিসে গিয়ে তিনি দেখেন, সকলের হাতে-হাতে ঘুরছে একটা ই-মেলের কপি। তাতে বলা হয়েছে, সারদার সমস্ত অফিস বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, এবং কর্মীদের বকেয়া প্রাপ্য জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়া হবে। মেলের প্রেরক স্বয়ং সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। তাঁর কাছ থেকে এ হেন বার্তা পেয়ে কর্মীরা সকলে মিলে সারদা-কর্তার বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিলের সিদ্ধান্ত নেন। বিধাননগর পাঁচ নম্বর সেক্টর থানায় গিয়ে তাঁরা এফআইআর লিপিবদ্ধ করেন। প্রসঙ্গত, সারদা-কাণ্ডের এই মামলাটিতে মূল অভিযোগ সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত-তালিকায় রয়েছেন দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও মনোজ নাগেলও।
অভিযোগপত্রটিতে অবশ্য উজ্জ্বলবাবু ছাড়া আরও এক জনের সই ছিল, যা পরে কেটে দেওয়া হয়েছে। তাতে কম্পিউটারে ছাপা অক্ষরের সঙ্গে হাতের লেখাও ছিল একাধিক জায়গায়। অভিযুক্তপক্ষের কৌঁসুলি উজ্জ্বলবাবুকে অভিযোগপত্র দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, এখানে অনেকের হাতের লেখা রয়েছে। সেগুলো কাদের?
উজ্জ্বলবাবু এই প্রশ্নের উত্তরে কিছু বলতে পারেননি। তিনি শুধু নিজের সইটিই চিনতে পেরেছেন তিনি। তিনি সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সংবাদপত্রে মাস দশেক কাজ করলেও ওই সংস্থায় নিয়োগপত্র কিংবা কর্মী-পরিচিতির কোনও প্রমাণ এ দিন দেখাতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, উজ্জ্বলবাবু আদালতে সুদীপ্ত সেনকে শনাক্ত করেছেন বটে, কিন্তু সুদীপ্তবাবুর ছায়াসঙ্গিনী দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে চিনতে পারেননি। কেন?
উজ্জ্বলবাবু যুক্তি দেন, তিনি দেবযানীকে আগে কোনও দিন দেখেননি, তাঁর সম্পর্কে কোনও দিন কোনও অভিযোগও করেননি। যদিও এ বিষয়ে পুলিশ দাবি করেছে, তাদের কাছে জমা দেওয়া লিখিত বয়ানে তিনি দেবযানীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছিলেন। এ বিষয়ে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা, সৌম্যজিৎ রাহা প্রশ্ন করলে উজ্জ্বলবাবু দাবি করেন, এফআইআর দাখিল করার পরে তিনি কাউকে কোনও বয়ান দেননি।
বস্তুত বিপক্ষের কৌঁসুলিদের লাগাতার প্রশ্নের মুখে উজ্জ্বলবাবুকে এ দিন রীতিমতো হিমসিম খেতে হয়েছে। মাঝে এক বার তিনি বিচারকের অনুমতি নিয়ে কাঠগড়া থেকে নেমে ঢকঢক করে জল খান। সুদীপ্ত-দেবযানীর কৌঁসুলি অনির্বাণবাবু আদালতের বাইরে বলেন, “এফআইআর হল মামলার ভিত্তি। দ্বিতীয় সাক্ষীর বয়ানের পরে সেই ভিত্তিতেই ফাটল ধরে গেল!”
সরকারপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি শেখর চক্রবর্তী এ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |
পুরনো খবর: বেতন পেতাম, বয়ান বদল সারদা-সাক্ষীর |
|
|
|
|
|