সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা প্রথম অভিযোগ ছিল, কর্মীদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা পড়ছে না। বৃহস্পতিবার সেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের শুরুতেই পুলিশের প্রথম সাক্ষী বিমল গিরি আদালতে দাঁড়িয়ে জানালেন, তিনি সুদীপ্তের একটি সংস্থায় কাজ করতেন। নিয়মিত বেতনও পেতেন। সংস্থার কর্ণধার তাঁর সঙ্গে ভাল ব্যবহারও করতেন।
গত এপ্রিলে সুদীপ্তের বিরুদ্ধে কর্মীদের বেতন না-দেওয়া, প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা না-করার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সারদা সংস্থার অধীন দেবকৃপা ব্যাপার লিমিটেডের এক কর্মী বিধাননগরের পাঁচ নম্বর সেক্টর থানায় এই অভিযোগ করেন। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে প্রথম অভিযোগ সেটিই। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়। ন’মাসের মাথায়, বৃহস্পতিবার বিধাননগর এসিজেএম আদালতে সেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। আর সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনেই প্রথম সাক্ষীর এ-হেন সাক্ষ্যে সারদা কাণ্ডের তদন্তকারীরা রীতিমতো বিব্রত।
সারদা কাণ্ডের প্রথম মামলার চার্জশিটে প্রথম সাক্ষী হলেন বিমল গিরি। তিনি ওড়িশার বাসিন্দা। সল্টলেকে সারদার মূল অফিস মিডল্যান্ড পার্কে তিনি বেয়ারার কাজ করতেন। সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী শেখর চক্রবর্তী ছাড়াও অভিযুক্তদের তরফে আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা, সৌম্যজিৎ রাহা সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন। এজলাসে হাজির সুদীপ্ত এবং অন্য অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেন বিমলবাবু। কিন্তু সাক্ষ্য দেওয়ার সময় দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই লিখিত বয়ানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষ্যের বক্তব্য মিলছে না।
সারদার কাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ মিডল্যান্ড পার্ক থেকে বিভিন্ন নথি বাজেয়াপ্ত করার সময় বিমলবাবু সাক্ষী ছিলেন এবং সেই সময় পুলিশকে একটি বয়ানও দেন তিনি। সেখানে তিনি বলেছিলেন, অভিযোগটি করা হয়েছিল দেবকৃপা ব্যাপার লিমিটেডের তরফে। বিমলবাবু তাঁর সাক্ষ্যে বলেন, তিনি ওই সংস্থা সম্পর্কে অবগতই নন। তিনি সারদার অন্য একটি সংস্থার তরফে বেতন পেতেন। বিমলবাবু জানান, তিনি চলতি বছরের শুরুতেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। যে-মাসে চাকরি ছাড়েন, বেতন না-পাওয়ার অভিযোগ তার পরবর্তী মাসের। যত দিন তিনি চাকরি করেছেন, তত দিন নিয়মিত বেতন পেয়েছেন বলেও দাবি করেন বিমলবাবু।
এখানেই শেষ নয়। সরকার পক্ষের দাবি, বিমলবাবু তাদের কাছে বয়ান দিয়েছিলেন। সেই বয়ান আদালতেও পেশ করেছে পুলিশ। অথচ এ দিন বিমলবাবু জানান, সারদার বিষয়ে তিনি কখনও কাউকে কিছু জানাননি। বিমলবাবু কেন এ ভাবে সাক্ষ্য দিলেন, সেই ব্যাপারে সরকারি আইনজীবী শেখর চক্রবর্তী আদালতের বাইরে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার আদালতের বাইরে বলেন, সরকার পক্ষের প্রথম সাক্ষীই সরকারি বয়ানে যা জানিয়েছিলেন, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে তিনি তা স্বীকার করেননি। এ থেকে পরিষ্কার যে, সরকার পক্ষ এই মামলায় যা দাবি করছে, তা অসত্য। |