সারদা কাণ্ডে কুণাল ঘোষের গোপন জবানবন্দি নেওয়ার কাজ আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতুবি রাখার নির্দেশ দিল বিধাননগর আদালত। ওই সময়ের সরকার পক্ষ উচ্চতর আদালত থেকে জবানবন্দি নেওয়ার উপর স্থগিতাদেশ না নিয়ে এলে ১৩ তারিখ এ বিষয়ে নতুন নির্দেশিকা জারি করা হবে। তবে সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। আজ এ নিয়ে কলকাতা ও দিল্লিতে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও বাম দলগুলি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ সকালে সংসদ ভবনের সামনের ধর্নায় সিপিএম পাশে পেয়েছে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো মুলায়ম সিংহ যাদবকে।
সারদা-কাণ্ডে ধৃত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের গোপন জবানবন্দি নেওয়ার কাজ মুলতবি থাকল। ওই সময়ের মধ্যে সরকার পক্ষকে উচ্চতর আদালতে গিয়েস্থগিতাদেশ নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছে
গত ২৯ নভেম্বর বিধাননগর আদালতে কুণালবাবু গোপন জবানবন্দি দেওয়ার আর্জি জানান। বিচারক অপূর্বকুমার ঘোষ সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। ৫ ডিসেম্বর গোপন জবানবন্দি নেওয়ার দিন স্থির হয়। সে কারণে ধৃত সাংসদকে ৪৮ ঘণ্টা আলাদা রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু ৩০ নভেম্বর কুণালবাবুকে সাঁতরাগাছি থানার একটি মামলায় কারণে হাওড়া আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে কুণালবাবুর সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়। ফলে ৫ ডিসেম্বর বিধাননগর আদালতে কুণালবাবুকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য হাজির করানো যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর ফলে বিধাননগর আদালতের নির্দেশের অবমাননা করা হয়েছে প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও।
কেন হাওড়ায় নিয়ে যাওয়ার আগে কুণালবাবুকে বিধাননগরে আদালতে হাজির করানো হয়নি, তা জানতে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের জেল সুপার বিপ্লব দাসকে শো কজ করেছেন বিচারক। ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে জেল সুপারকে তার জবাব দিতে হবে।
কুণালের জবানবন্দি কবে নেওয়া হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও, সারদা-কাণ্ডে কুণালের বিবৃতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা ও দিল্লিতে এ দিন বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস ও বিভিন্ন বামপন্থী দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাপে ফেলার চেষ্টায় শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই সারদা-কাণ্ড সিবিআই তদন্ত চেয়ে সংসদ চত্বরে ধর্নায় বসল সিপিএম। পশ্চিমবঙ্গে সারদা-সহ বিভিন্ন বেআইনি আর্থিক সংস্থার কাজকারবার নিয়ে সংসদের আলোচনারও দাবি তুলেছেন সিপিএম নেতারা। বামেরা সংসদের দুই কক্ষেই মুলতুবি প্রস্তাব আনছে। তাঁদের যুক্তি, মমতা সরকারের মতো ইউপিএ-সরকারও সারদা-কাণ্ডের তদন্তে যথেষ্ট তৎপরতা দেখাচ্ছে না।
তৃণমূল নেতৃত্ব সিপিএম নেতাদের এই দাবি খারিজ করে পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি আর্থিক সংস্থার রমরমার জন্য বাম জমানার দিকেও আঙুল তুলেছেন। কিন্তু সিপিএম নেতাদের যুক্তি, সারদা-কাণ্ডে যারা টাকা খুইয়েছেন, তাদের অধিকাংশই গরিব মানুষ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইউপিএ-সরকার কোনও পদক্ষেপ করছে না। কিন্তু যেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সিবিআই তদন্ত চাইছে না, সেখানে কেন্দ্র কী করতে পারে? পলিটব্যুরো নেতা সীতারাম ইয়েচুরির যুক্তি, “ওড়িশা ও ত্রিপুরা সরকারও সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে। এটা একটা রাজ্যের বিষয় নয়। সেই কারণেই সিবিআই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সুপারিশ প্রয়োজন নেই। সিবিআইকে আদালত তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। সিবিআই নিজেও তদন্ত শুরু করতে পারে।”
মুলায়ম বেআইনি আর্থিক সংস্থার কাজ নিয়ে মুখ না খুললেও সিপিএম তথা বাম নেতাদের সঙ্গে হাতে হাত ধরে ছবি তুলেছেন। সিপিএমের অনেক নেতাই মনে করছেন, আসলে লোকসভা নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক সমীকরণের কথা ভেবেই কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চটাতে চাইছেন না। কারণ ভোটের পরে তৃণমূলকে প্রয়োজন হতে পারে। সেই কারণেই সিবিআই নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চায় না কেন্দ্র। ইয়েচুরি বলেন, “কেন ইউপিএ কিছু করছে না, সে উত্তর তারাই দিতে পারবেন। কিন্তু বাম নেতারা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পরেও তারা কিছু করছেন না।”
|
আসন নিয়ে চিঠি ডেরেকদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বরখাস্ত হওয়া তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে দলীয় সাংসদদের চেয়ে আলাদা কোনও আসনে বসানোর দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারিকে চিঠি দিলেন ওই সভার তৃণমূলের মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি লিখেছেন, এত দিন কুণালবাবু আরও চারজন দলীয় সাংসদের সঙ্গে রাজ্যসভার শেষ সারিতে বসতেন। কিন্তু এখন তিনি দল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। তাই তাঁকে যেন আর তৃণমূলের সাংসদদের পাশে না বসানো হয়। সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া কুণালবাবু চলতি সংসদীয় অধিবেশনে আদৌ যোগ দিতে পারবেন কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। |