সারদার টাকা গেল কোথায়, তথ্য চায় দিল্লি
রাজ্যের পুলিশের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি। তাই সারদা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থা বাজার থেকে যে টাকা তুলেছিল, তার সর্বশেষ উপভোক্তাদের তালিকা চেয়ে এ বার খোদ রাজ্য সরকারকেই চিঠি দিল কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রক। নয়াদিল্লির বক্তব্য: আমানতের টাকা শেষমেশ কোথায়, কী ভাবে গিয়েছে, তা জানার জন্য এই তালিকাটি খুবই জরুরি। কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের সচিবের লেখা চিঠিটি সপ্তাহখানেক আগে রাজ্যের হাতে পৌঁছালেও বিষয়টি নিয়ে রাজ্য প্রশাসন এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি। সারদা-কাণ্ড নিয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্তার বক্তব্য, ফরেন্সিক অডিটের রিপোর্ট হাতে না-আসা পর্যন্ত সারদার টাকা শেষমেশ কাদের হাতে গিয়েছে, তা বলা সম্ভব নয়।
কেন্দ্রের কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের অধীন সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও) সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গের আরও কয়েকটি অর্থ লগ্নি সংস্থার আমানত সংগ্রহের খুঁটিনাটিও তারা খতিয়ে দেখছে। এ প্রসঙ্গে তাদের তদন্ত করার এক্তিয়ার ব্যাখ্যা করে মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, মূলত কোম্পানি-আইন গুরুতর ভাবে লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে এসএফআইও তদন্তে নামে। সারদা-কাণ্ডে তেমনই অভিযোগ মিলেছে। সারদা গোষ্ঠী অজস্র কোম্পানি খুলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টাকা তো তুলেইছে, উপরন্তু এ ক্ষেত্রে সংস্থাটি কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম (সিআইএস) মডেল অনুসরণ করায় তা সেবি-আইনও লঙ্ঘন করেছে বলে মন্ত্রক-সূত্রের দাবি।
পাশাপাশি সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের কিছু মামলা রুজু হয়েছে, যেগুলো নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে রাজ্য পুলিশ। এমতাবস্থায় মন্ত্রকের যুক্তি: কোম্পানি-আইনের অপব্যবহার নিয়ে তদন্ত করতে নেমে এসএফআইও দেখছে, সারদা-আমানতের সর্বশেষ ব্যবহারকারীদের হদিস মেলা একান্ত জরুরি। “তা হলেই আন্দাজ মিলবে, কী পরিমাণ টাকা বাজার থেকে তুলে অন্যত্র সরানো হয়েছে।”—বলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের ওই কর্তা।
তাঁদের মতে, তথ্যটা জোগাতে পারে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
কিন্তু দিল্লির বক্তব্য, বারবার বলা সত্ত্বেও এ রাজ্যের তদন্তকারী পুলিশ সারদা-অর্থের অন্তিম উপভোক্তাদের নাম-ধাম এসএফআইও-কে দেয়নি। মন্ত্রক-সূত্রের দাবি: বাজার থেকে তোলা টাকার পরিমাণ এবং তার ব্যবহার প্রসঙ্গে সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তাঁর একদা ‘ছায়াসঙ্গিনী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেরা করেছে এসএফআইও। তৃণমূলের দুই সাংসদ— কুণাল ঘোষ ও সৃঞ্জয় বসুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেই সূত্রে সারদার টাকা শেষমেশ কাদের হাতে গিয়ে থাকতে পারে, তার কিছু ইঙ্গিতও মিলেছে। তবে সে সম্পর্কে প্রামাণ্য নথি (বিস্তারিত হিসেব পরীক্ষার কাগজপত্র ইত্যাদি) হাতে পেতে হলে পুলিশই ভরসা। অথচ তদন্তকারী বিধাননগর কমিশনারেট বা সারদা-তদন্তে গঠিত রাজ্যের বিশেষ সংস্থার (সিট) তরফে সরকারি ভাবে তেমন সহযোগিতা মেলেনি বলে এসএফআইও-র দাবি।
মন্ত্রকের খবর, এসএফআইও-র কাছ থেকে এ হেন ‘অসহযোগিতা’র কথা শুনে কোম্পানি মন্ত্রক নড়েচড়ে বসে। চিঠি দেওয়া হয় রাজ্যকে। রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে লেখা মন্ত্রকের সচিব নাভেদ মাসুদের চিঠি (ডিও নম্বর: ৮/৯/২০১১-সিএল-II) নবান্নে পৌঁছেছে ২১ নভেম্বর। তাতে কী বলা হয়েছে?
চিঠিতে কেন্দ্রীয় সচিব লিখেছেন, ‘আমাদের জানা জরুরি যে, সারদা-তদন্তে রাজ্য পুলিশ কত দূর এগোল। বিশেষত আমজনতার থেকে সারদা গোষ্ঠীর তোলা টাকা কী ভাবে খরচ হয়েছে বা শেষ পর্যন্ত কাদের হাতে গিয়েছে, সেই তথ্য একান্ত প্রয়োজন। তাই জানতে চাই, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এ ব্যাপারে কতটা অবহিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা, পুলিশের কাছে বারবার তথ্য চেয়েও পাওয়া যায়নি।’
মুখ্যসচিব পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন বলে চিঠিতে আশা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় সচিব। কিন্তু স্বরাষ্ট্র দফতরের খবর, সপ্তাহ ঘুরতে চললেও এখনও পদক্ষেপ করা হয়নি। দিল্লির আর্জি মানা হবে, এমন কোনও ইঙ্গিতও নেই। বরং রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, “পুলিশের পাওয়া তথ্য কেন্দ্রকে জানাতে রাজ্য বাধ্য নয়। যতটুকু সম্ভব জানানো হয়েছে। সারদার সম্পত্তি ও টাকার খোঁজেই পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে! বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনও সারদার সম্পত্তি বেচে আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে তৎপর।”
তাই এসএফআইও-কে কিছু জানানোর আগে পুলিশি তদন্ত শেষ হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন নবান্নের ওই পদস্থ আমলা। সারদা-মামলার তদন্তরত বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের চিঠির ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। “তবে সারদার টাকা শেষমেশ কাদের হাতে গিয়েছে, তা জানার জন্যই ফরেন্সিক অডিট চলছে। তার রিপোর্ট না-এলে কিছু বলা যাবে না।”—মঙ্গলবার বলেন অর্ণববাবু। স্বরাষ্ট্র-সূত্রের খবর, এ ধরনের আর্থিক কারচুপি হলে হিসেবের খাতা ফরেন্সিক অডিটেই পাঠানো হয়। কেননা একমাত্র ওতেই বোঝা সম্ভব, কী ভাবে জালিয়াতিটা হয়েছে। ক’বছর আগে হায়দরাবাদে সত্যম কেলেঙ্কারির পরে ফরেন্সিক অডিটের মাধ্যমেই যাবতীয় তথ্য তদন্তকারীদের হাতে আসে। সারদার ক্ষেত্রে তা কত দূর ফলপ্রসূ হবে, তারই প্রতীক্ষা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.