অশোককে সরান, রাষ্ট্রপতিকে ফের চিঠি মমতার
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে যত দ্রুত সম্ভব অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণ দাবি করে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীই এ কথা জানান। এর আগে বৃহস্পতিবারও রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় শুক্রবার বলেছেন, “আমি ইস্তফা দেওয়ার কথা এখনই ভাবছি না।” এ দিনই অভিযোগকারিণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে বিবৃতি দিতে অনুরোধ করেছে দিল্লি পুলিশ। ইতিমধ্যে কেন্দ্রে শাসক দল কংগ্রেস বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চাপ বাড়িয়েছে। আর তাতে সুর মিলিয়েছে বিরোধী বিজেপি।
অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট বৃহস্পতিবারই জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির তদন্তকারী কমিটি। তাতে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে মনে করার কারণ আছে যে, প্রাক্তন বিচারপতি তাঁর কাছে ইনটার্ন হিসেবে কাজ করা যুবতীর সঙ্গে ‘অবাঞ্ছিত’ ব্যবহার করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মমতা ফেসবুকে লেখেন, ‘অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় যে উচ্চ পদে আসীন, মানুষের কাছে তার আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গাটা অটুট রাখতে কড়া ব্যবস্থা প্রয়োজন।’
শুক্রবার সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে ফেসবুকেই মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘সংবাদমাধ্যমে দেখলাম সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির প্যানেল প্রাথমিক তদন্তের পরে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তার ভিত্তিতে অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আমি আজ মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে আরও একটি চিঠি লিখেছি, যাতে তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়।’
তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, রাজ্য সরকার আশা করেছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজে থেকেই ইস্তফা দেবেন। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি ওই পদ থেকে সরে আসার কোনও ইঙ্গিত দেননি। তাই রাষ্ট্রপতিকে ফের চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।
তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের ব্যাখ্যা, “মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে সরাতে গেলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন। তাই রাজ্যের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে। তা ছাড়া নৈতিক কারণেই ওঁর ইস্তফা দেওয়া উচিত।”
তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, পিছু হটে ইস্তফার পথে হাঁটতে চাইছেন না তিনি। সর্বোচ্চ আদালতের কমিটির পর্যবেক্ষণ শোনার পরেও কেন তিনি চেয়ারম্যানের পদ আঁকড়ে থাকবেন, তাঁর ঘনিষ্ঠরাই সেই প্রশ্ন করেছিলেন তাঁকে। এর উত্তরে তিনি বলেছেন, কাজ করতে তিনি ভালবাসেন। কাজ থেকে বসে যাওয়ার কথা কখনও ভাবেননি।
তদন্ত কমিটির রিপোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে যাওয়ার পর থেকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বা পরিচিত ছাড়া কারও টেলিফোন ধরছেন না বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, দেখাও করছেন না। এ দিন তিনি অফিসেও যাননি। যদিও কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত জানিয়েছেন, আগে থেকেই বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চেয়ারম্যান ছুটি নিয়েছেন। তাই এ দিন আসেননি। আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে পূর্ব ঘোষিত অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য কমিশনের কেউ হলফ করে বলতে পারছেন না।
তবে পরিস্থিতি যা, কলকাতা থেকে দিল্লি চাপ ক্রমশ বাড়ছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর। সে চাপ যেমন রাজনৈতিক, তেমন প্রশাসনিক।
তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছিল, ঘটনার সময়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে হেতু আর শীর্ষ আদালতে কর্মরত ছিলেন না, তাই এ ব্যাপারে তাদের নিজেদের কিছু করার নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যে অন্য রকম ভাবছে, শুক্রবার তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল। সুপ্রিম কোর্টের মনোভাব নিয়েই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, “যখন সুপ্রিম কোর্ট প্রাক্তন বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করতে পারবে না, তা হলে আর কমিটি গড়ার কী মানে ছিল?” আইন মন্ত্রকের কর্তাদের কেউ কেউ মনে করেন, বিচার ব্যবস্থার একাংশ অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি সহানভূতিশীল। তারা বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে তৎপর। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সিব্বল বলেছেন, “এমন বিষয় ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব নয়।”
কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে দিল্লি পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল। তার পরেই অভিযোগকারিণীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করে পুলিশ। তাঁকে ই-মেলও করা হয়। পুলিশের ব্যাখ্যা, ওই মহিলা এখনও নিজে থেকে অভিযোগ নথিভুক্ত করেননি। তাই সরকারি ভাবে তারা তদন্তে নামতে পারছে না। শুক্রবার দিল্লি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার এম কে মিনা জানান, “অভিযোগকারিণীকে ই-মেল করে জানতে চেয়েছি, তিনি কবে কোথায় তাঁর বিবৃতি দিতে চান। এখনও উত্তর পাইনি।” তবে এই প্রসঙ্গে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, তরুণ তেজপালের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই তদন্ত শুরু করে গোয়া পুলিশ। দিল্লি পুলিশ একই ভাবে সক্রিয় হচ্ছে না কেন?
জাতীয় মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকেও এ দিন দিল্লি পুলিশকে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছেও ব্যাখ্যা তলব করেছে মহিলা কমিশন। ঘটনাচক্রে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই কংগ্রেস নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু বিকাশ মন্ত্রী কৃষ্ণা তীরথ বলেছেন, “অভিযোগের সত্যতা যখন কমিটি খুঁজে পেয়েছে, তখন অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের উচিত নিজে থেকেই ওই পদ (রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান) থেকে ইস্তফা দেওয়া।” বিজেপির আইনজীবী-সাংসদ অরুণ জেটলি এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, আদালতের তত্ত্বাবধানে অভিযোগটির স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যাতে তাঁর কোনও প্রভাব খাটাতে না পারেন, তা নিশ্চিত করার দরকার রয়েছে বলেও মন্তব্য করে ন জেটলি।
এই পরিস্থিতিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন পাশে পেয়েছেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। শুক্রবার সোমনাথবাবু বলেছেন, “আমি ওঁর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ বিশ্বাস করি না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.