|
|
|
|
ভগবান আছেন, ছেলের মুক্তিতে কেঁদে বললেন বৃদ্ধা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দু’দিন ধরে থানা-আদালতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বৃদ্ধা। দিনশেষে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কাঁদতে কাঁদতে। শুক্রবার ফিরলেন ছেলে জ্যোতির্ময়কে সঙ্গে নিয়ে, হাসিমুখে।
পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে থাকার পরে এ দিন ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি পেলেন মহাকরণের কেরোসিন কাণ্ডে ধৃত জ্যোতির্ময় নন্দী। ব্যাঙ্কশাল আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অভ্রনীল নিয়োগী একশো টাকার ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দিয়েছেন জ্যোতির্ময়বাবুকে।
এ দিনও শ্রীরামপুর থেকে আদালতে এসে বসে ছিলেন মা চিত্রাদেবী। ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে শুনে এজলাসের মধ্যেই মেয়ে সুমিতা দাসের কাঁধে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেললেন। উদ্বেগমুক্তির কান্না। বলেন, “ভগবান আছেন।” বেলা সওয়া ৩টেয় ব্যাঙ্কশাল আদালতের লক-আপ থেকে বেরিয়ে একই কথা বললেন জ্যোতির্ময়, “ঈশ্বর রয়েছেন।” |
|
ছাড়া পাওয়ার পর মায়ের কাছে। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী। |
এ দিন বেলা সওয়া ১১টার মধ্যেই ব্যাঙ্কশাল আদালতে ঢুকেছিলেন ৭৩ বছরের চিত্রাদেবী। দোতলার এজলাসে উঠতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন হৃদ্রোগী বৃদ্ধা। বেশ কয়েক বার সিঁড়িতে দাঁড় করিয়ে তার পরে
তাঁকে দোতলার এজলাসে নিয়ে যান মেয়ে সুমিতাদেবী। প্রতিবেশী দুই যুবকও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। পরে আদালতে হাজির হন জ্যোতির্ময়ের ছোট ভাই জয়ন্ত।
জ্যোতির্ময়কে আদালতে তোলা হবে বলে বৃহস্পতিবারে তিন ঘণ্টা ঠায় আদালতের বেঞ্চে বসে ছিলেন চিত্রাদেবী। এ দিনও জ্যোতির্ময়কে শেষ পর্যন্ত আদালতে তোলা হবে কি না, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে ছিলেন তিনি। এজলাসের বেঞ্চে বসে মেয়ের কাছে বৃদ্ধা বারবার জানতে চাইছিলেন, হেয়ার স্ট্রিট থানা থেকে জ্যোতির্ময়কে আদালতে পাঠানো হয়েছে কি না। পৌনে ১২টা নাগাদ পুলিশ জ্যোতির্ময়কে থানা থেকে এনে আদালতের লক-আপে ঢোকায়। তা জেনে কিছুটা নিশ্চিন্ত হন মা।
বেলা আড়াইটে নাগাদ জ্যোতির্ময়ের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশের দায়ের করা মামলাটি আদালতে ওঠে। মুখ্য সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস বিচারককে জানান, পুলিশ প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মহাকরণে আগুন লাগানোর চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছে। আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে দীর্ঘ জেরাও করেছে তারা। অভিযুক্তকে আর জেরা করার দরকার নেই। অভিযুক্তকে জেল-হাজতে পাঠাতে চেয়ে পুলিশ আদালতে আবেদন জানিয়েছে। সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, এই মামলায় পুলিশ যে-সব জিনিস (কেরোসিন মাখানো চটের বস্তা ইত্যাদি) বাজেয়াপ্ত করেছে, সেগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তার রিপোর্ট পেতে সময় লাগবে। কৃষ্ণবাবু এর পরে বলেন, “অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হবে, নাকি তাঁকে জেল-হাজতে পাঠানো হবে, তা বিচারকই ঠিক করুন।”
জ্যোতির্ময়ের আইনজীবী শাহিদ ইমাম আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির যে-সব ধারায় অভিযোগ এনেছে, তার একটিও ধোপে টেকে না। তাঁর দাবি, পুলিশ আগুন লাগানোর চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছে, অথচ আগুনের কোনও চিহ্ন বা প্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি। তিনি আদালতে বলেন, জেরায় পুলিশ এমন কোনও তথ্য পায়নি, যার সূত্র ধরে এই মামলার আরও তদন্ত হতে পারে। তিনি জানান, পুলিশ অভিযুক্তকে জেল-হাজতে পাঠানোর আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু তাঁর মক্কেল দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা এবং স্ত্রী আছেন। সব দিক বিচার করেই অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন জানান ওই আইনজীবী।
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক জানান, অভিযুক্তকে একশো টাকার ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী শুনানি হবে ২০ ডিসেম্বর। |
|
|
|
|
|