অবাঞ্ছিত আচরণ করেন অশোক, মানল কমিটি
৫ ডিসেম্বর
প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিক ভাবে মেনে নিল শীর্ষ আদালতের তদন্তকারী কমিটি। তবে যে হেতু ঘটনার সময় অশোকবাবু আর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন না, তাই এ ব্যাপারে শীর্ষ আদালতের নিজের কিছু করণীয় নেই বলে মত দিয়েছে ওই কমিটি। বৃহস্পতিবারই রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোকবাবুর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ দাবি করে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে ইনটার্ন হিসেবে কাজ করা এক যুবতী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। তাঁর বক্তব্য প্রথমে প্রকাশিত হয় আইন সংক্রান্ত একটি ব্লগে। পরে সেই ব্লগের অংশ ছাপা হয় সংবাদপত্রে। গত ১২ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিচারপতি আর এম লোঢা, বিচারপতি এইচ এল দাত্তু এবং বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে কমিটি তৈরি করেন।
বৃহস্পতিবার ওই কমিটি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে সরাসরি যৌন নিগ্রহ শব্দটি এড়িয়ে গেলেও বলা হয়েছে প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে এটা মনে করার কারণ আছে যে, প্রাক্তন বিচারপতি ওই ইনটার্নের সঙ্গে অবাঞ্ছিত আচরণ এবং যৌনগন্ধী ব্যবহার করেছেন।
কমিটির রিপোর্টের একাংশ উদ্ধৃত করে এ দিন প্রধান বিচারপতি বলেন, “ইনটার্নের লিখিত এবং মৌখিক দু’রকম বিবৃতিই মনোযোগ দিয়ে দেখেছি। ইনটার্নের দেওয়া তিন জন সাক্ষী ও অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের বিবৃতিও খতিয়ে দেখেছি। সব দেখে কমিটির মনে হয়েছে, গত বছর ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওই ইনটার্ন অশোকবাবুর কাজে সাহায্য করতে হোটেল লে মেরিডিয়নে গিয়েছিলেন। এ কথা অশোকবাবু নিজেও স্বীকার করেছেন... প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণে উঠে আসছে, হোটেলের ঘরে রাত আটটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে অবাঞ্ছিত আচরণ (অবাঞ্ছিত মৌখিক/ শারীরিক যৌন অভিব্যক্তি) করেছেন।”
পাশাপাশি কমিটির বক্তব্য, ঘটনার দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বরই ছিল সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের শেষ কর্মদিবস। ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে অবসর নেন তিনি। ওই ইনটার্ন সুপ্রিম কোর্টের হয়ে কাজ করেননি। এই দুয়ে মিলিয়ে এই ঘটনাটির ব্যাপারে শীর্ষ আদালতের কিছু করণীয় নেই বলে জানিয়েছে কমিটি। প্রধান বিচারপতিও বলেছেন, এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের কোনও পদক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। কমিটির রিপোর্ট অভিযোগকারিণী এবং অশোকবাবু দু’জনকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এক দিকে কমিটির রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় অশোকবাবুর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঢেউ উঠেছে দেশ জুড়ে। অন্য দিকে নিজে থেকে পদক্ষেপ করবে না বলে জানানোয় সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধেও জনমত তৈরি হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্ট ইদানীং কালে কয়লা বণ্টন থেকে শুরু করে একাধিক মামলায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের সক্রিয়তার সীমা বাড়িয়ে নিয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রুখতে বিশাখা নির্দেশিকা তৈরি করেছে। ফলে তারা চাইলে এই অভিযোগের নিরিখে প্রশাসনিক পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়ে কড়া বার্তা দিতেই পারত বলে অনেকের মত।
এখন প্রশ্ন, এই অভিযোগের পরিণতি কী হবে? অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয়সিংহ বলেন, “পুলিশ নিজে থেকে এফআইআর করতেই পারে। এফআইআর করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে।” প্রবীণ আইনজীবী কে টি এস তুলসী বা বেণুগোপালরা বলছেন, “মেয়েটি অক্ষম নন। তিনি যদি পুলিশের কাছে না যান, পুলিশ নিজে থেকে পদক্ষেপ করবে কেন?” পাল্টা যুক্তিতে অনেকে তেজপাল মামলার প্রসঙ্গ তুলছেন। সেখানে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এফআইআর করেছে। আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগকারিণী যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও অভিযোগ করেন, ফৌজদারি বিধির ১৫৬ (৩) ধারায় তার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তবে মেয়েটি এর পর যা-ই করুন, কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান পদ থেকে অশোকবাবু যাতে ইস্তফা দেন, তার জন্য চাপ বাড়ছে। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, অশোকবাবু নিজেই সরে দাঁড়াবেন বলে আশা করা হয়েছিল। তিনি তা না-করায় সরকার অন্য পন্থা খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে। এ দিনই রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন নিজের ফেসবুক পেজেও তিনি লিখেছেন, “অশোকবাবু যে উচ্চপদে আসীন, মানুষের কাছে তার আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গাটা অটুট রাখতে কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
অশোকবাবু নিজে এ দিন কমিটির রিপোর্ট সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছু বলব না।” তিনি কি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেবেন? অশোকবাবু বলেন, “এখনও কিছু চিন্তা করিনি।”
যদিও দেশের আইনজীবী মহলের অনেকেই মনে করছেন, অশোকবাবুর পদত্যাগ করাই উচিত। প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল সোলি সোরাবজির কথায়, “সুপ্রিম কোর্ট এর বেশি কিছু করতে পারত না। কিন্তু অশোকবাবু আর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান থাকতে পারেন না।” কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “সংবিধান প্রধান বিচারপতিকে এমন অভিযোগের তদন্তের ক্ষমতা দেয়নি। মনে হচ্ছে, নেপথ্যে বিশেষ উদ্দেশ্য আছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.