নালিশের বয়ান ফাঁসে চক্রান্ত দেখছেন অশোক
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগের বয়ান ফাঁস হল কী ভাবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টের ওই প্রাক্তন বিচারপতি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, এক মহিলা ইনটার্নের করা অভিযোগটি বর্তমানে শীর্ষ আদালতের বিবেচনাধীন এবং তারই সুবাদে সেটি পুরোপুরি গোপন থাকার কথা। অথচ অভিযোগপত্রের পুঙ্খনাপুঙ্খ বয়ান কী করে সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেল, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এখন সেই প্রশ্ন তুলছেন।
আর এখানেই তিনি ষড়যন্ত্রের আঁচ পাচ্ছেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। চক্রান্তের তদন্ত চেয়ে তিনি কি সুপ্রিম কোর্টের কাছে আর্জি জানাবেন?
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রবিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি শুধু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমি আর কিছুই বলব না।”
তৃণমূল নেতা তথা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বলেছেন, নৈতিকতার কারণেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উচিত মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দেওয়া। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক অধিকাররক্ষা সমিতি এ দিন এক বিবৃতিতে বলেছে, তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই পদে থাকা অনুচিত নয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য শনিবারই জানিয়ে দিয়েছেন, পদত্যাগ সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত তিনি নেননি।
এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের অফিসে যাবেন। কমিশন সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তাঁর কী করণীয়, সে ব্যাপারে কমিশনের অন্যান্য সদস্য ও পদাধিকারীর মত চাইবেন চেয়ারম্যান।
প্রসঙ্গত, তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ সংক্রান্ত রিপোর্ট যে দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে জমা পড়ে, অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ভবানী ভবনে কমিশনের দফতরে এসেছিলেন। সে দিন তিনি বেশ কিছুক্ষণ ওখানে নিজের ঘরে বিশ্রাম নেন। তার পর দিন, শুক্রবারও তিনি সকালের দিকে কমিশন অফিসে আসেন। বেলা তিনটে নাগাদ বেরিয়ে যান।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে কমিশনের চেয়ারম্যান পদে রাখা না-রাখার বিষয়ে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে?
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা: আইন অনুযায়ী রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতে নেই। তবে তাঁকে অপসারণের জন্য রাজ্য সরকার রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করতে পারে।
১৯৯৪-এর মানবাধিকার আইনের ২৩ নম্বর ধারায় এই সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যের সেই সুপারিশ রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টে পাঠাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে, যেখানে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা থাকবেন। সওয়াল-জবাবের পরে শীর্ষ আদালত যদি মনে করে সুপারিশটি ন্যায্য, তা হলে তারা অভিযুক্তকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দিতে পারে রাজ্য সরকারকে।
তবে মানসিক সমস্যা বা অনৈতিক কাজকর্মের প্রমাণ পেলে রাষ্ট্রপতি সরাসরি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে পদচ্যুত করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াবেই না।
মানবাধিকার আইন মোতাবেক, কমিশনের চেয়ারম্যান পদে এক জনের মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে পাঁচ বছর ফুরনোর আগে তাঁর বয়স ৭০ হয়ে গেলে তখনই পদ ছাড়তে হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ২০১২-র এপ্রিলে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন। তাঁর জন্ম ১৯৪৭-এর ৩ ফেব্রুয়ারি।
সেই হিসেবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৭০ পূর্ণ করবেন ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। সাধারণ ভাবে কমিশনের চেয়ারম্যান পদে সে দিন পর্যন্ত তাঁর থাকার কথা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.