রেলকে তাদের ঘরের মাঠেই বেলাইন করার সম্ভাবনা ছিল। ৩৩ রানে যদি কোনও টিমের তিন উইকেট উড়ে যায়, বিপক্ষের তখন অতি জরুরি ছ’পয়েন্টের স্বপ্ন না দেখাই বোধহয় আশ্চর্যের। কিন্তু টিমটার নাম যে বাংলা! চলতি রঞ্জি মরসুমের আগের ম্যাচগুলোর মতো শুক্রবারও প্রতিপক্ষের ঘাড়ে চেপে বসার সুযোগ হাতছাড়া করতে হল। বিপর্যয়ের মুখেও ঠিক নিয়ম মেনে বাংলা শিবিরে পাল্টা দিয়ে রাখল রেলওয়েজ এবং প্রথম দিনের শেষে ম্যাচ ঢুকে পড়ল এমন সরণিতে, যেখানে অ্যাডভান্টেজ বাংলা বলার উপায় নেই।
বলার উপায় নেই, দু’টো কারণে।
এক— তিনটে ক্যাচ ফেলা।
দুই— অরিন্দম ঘোষ নামের এক বাঙালির প্রতিরোধের ‘দেওয়াল’ তৈরির অক্লান্ত প্রচেষ্টা।
যত দিন বাংলার হয়ে খেলতেন, তত দিন অরিন্দম ঘোষকে এমন রানের ‘ডিপার্টমেন্টাল স্টোর’ খুলে বসতে দেখা যায়নি! এ বারের রঞ্জি মরসুমে যা চলছে। রঞ্জির পঞ্চম ম্যাচটা খেলছেন, রান এখন পর্যন্ত ৩৯৮! গড় ৯৯.৯৫! একটা ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। বাংলার বিরুদ্ধে আপাতত দশ বাউন্ডারি সমেত ৮৮ ব্যাটিং। অশোক দিন্দা-শিবশঙ্কর পালদের আগুন সামলে। প্রায় ‘খড়কুটো’-সম রেল-ব্যাটিংকে একা বাঁচিয়ে।
|
অরিন্দম: এখন গড় ৯৯.৫ |
এবং অরিন্দম বলে দিচ্ছেন, বাংলার বিরুদ্ধে শনিবার সকালে তাঁর প্রথম টার্গেট আর বারোটা রান, মানে সেঞ্চুরি। তার পর সম্ভব হলে দেড়শো। সেটাও হয়ে গেলে সারা দিন ব্যাট করে আরও একটা ডাবল সেঞ্চুরি! “চারশোর টার্গেট বাংলাকে দিতে চাই। যা পিচ তাতে চারশো তুলে প্রথম ইনিংস লিড নেওয়া সহজ হবে না,” পরে ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন রেলের বাঙালি-যোদ্ধা। সঙ্গে আরও যোগ করলেন, “চেষ্টা করব শনিবার সারা দিন ব্যাট করতে। সেঞ্চুরিটা আগে টার্গেট। তার পর দেড়শো, ডাবল সেঞ্চুরি, সবই করার চেষ্টা করব। ভাল লাগছে বাংলার বিরুদ্ধে ইনিংসটা খেলতে পেরে। তবে আজ ওদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে আলাদা কিছু মনে হয়নি।”
অথচ একটা সময় এই রেলওয়েজই আড়াই ঘণ্টা নিয়ে ফেলে ৩৩ তুলতে! তিন উইকেটও চলে যায়। পরে অরিন্দম খেলাটা ধরে নেন। তাঁকে দিন্দারা বিশেষ বিব্রত করতে না পারলেও বাকিদের করা যেত। কিন্তু সন্দীপন দাস ও গীতিময় বসু দু’টো করে আবার ক্যাচ ছাড়লেন। যার সুযোগ নিয়ে নিতিন ভিল্লে অরিন্দমের সঙ্গে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করে গেলেন। আর বাংলা অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লকে বলতে হল, “টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে ঠিকই করেছিলাম। কিন্তু তিনটে ক্যাচ ফেলে ম্যাচটা ওদের হাতে তুলে দিয়েছি। এত ক্যাচ পড়লে যা হওয়ার তাই হয়েছে।”
লক্ষ্মীর টেনশনের কারণ আছে। সাড়ে তিনশো-চারশো উঠে গেলে, ঝামেলা আছে। মেরুদণ্ডে যন্ত্রণার চোটে ম্যাচ শুরুর আগে তো আবার নিজেকে সরিয়ে নিলেন বঙ্গ ওপেনার রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। |
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রেলওয়েজ ২১০-৪ (অরিন্দম ৮৮ ব্যাটিং, দিন্দা ২-৬৩, শিবশঙ্কর ২-৩০)। |