স্টেডিয়াম থেকে পাড়ায় পাড়ায় যখন তাঁকে ঘিরে মোহনবাগান সমর্থকদের আলোচনা, তখন বাজারের থলি নিয়ে চিকেন কিনতে বেরিয়ে পড়েছেন শুক্রবারের জোড়া গোলের নায়ক।
কিছুক্ষণ পর হাতা-খুন্তি নিয়ে নেমে পড়লেন রাতের খাবার তৈরি করতেচিকেন আর ভাত। বাগানে আলো জ্বালিয়ে তিনি ফের দৈনন্দিন জীবনে। ক্লাবকে নতুন ঠিকানায় পৌঁছে দিলেও বাগান এখনও তাঁকে নতুন ঠিকানার ফ্ল্যাটই দিতে পারেনি!
ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে গোল আর জয় সেলিব্রেট করার জন্য কী বিশেষ কোনও ডিশ থাকছে? প্রশ্ন শুনেই হেসে উঠলেন ক্রিস্টোফার। কসবার পুরনো ফ্ল্যাট থেকে ফোনে বললেন, “সে রকম কিছু ভাবিনি। রোজই নিজে রান্না করে খাই। ডিনারের জন্য আজও রাইস আর চিকেন কারি রান্না করছি। খেয়েই শুয়ে পড়ব। কাল সকালে আবার প্র্যাকটিস আছে।”
ম্যাচের পর তাঁর নামের শব্দব্রহ্মে সল্টলেক স্টেডিয়াম তখন উত্তাল। কলকাতা লিগে এ বারই ১৮ গোল করেছেন। কিন্তু তাঁকে ঘিরে এমন উন্মাদনা প্রথম বার দেখলেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। এত দিন গোল করে দলকে জেতানোর পর হয়তো দলের কোচ-ফুটবলার বা ক্লাবের কর্তারা এসে বড় জোর পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। আর দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছেন স্বদেশীয় ওডাফা-চিডিদের নিয়ে সমর্থকদের মাতামাতি। সে জন্যই সম্ভবত গাড়িতে ওঠার আগে বলছিলেন, “বড় ক্লাবে খেলার সার্থকতা তো এটাই। এত লোকের মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম। যে কোনও ফুটবলারের কাছে এটাই তো বড় তৃপ্তি।”
বড় দলের জার্সিতে প্রথম ম্যাচেই জোড়া গোল। তা সত্ত্বেও উচ্ছ্বাসে ভাসতে চান না। কারণ জানেন এটা ক্ষণিকের। পরের ম্যাচে গোল না পেলেই ইউ এস পি পড়ে যাবে। সম্ভবত সে জন্যই ক্রিস্টোফারের মাথায় ঘুরছে পরের মুম্বই এফসি ম্যাচ। বললেন, “একটু তো চাপ ছিলই। কোচ-সতীর্থরা সবাই খুব উৎসাহ দিয়েছে। খারাপ সময়ে টিমকে জেতাতে পেরে মনে হচ্ছে কিছু করতে পারলাম। পরের ম্যাচেও গোল করে দলকে জেতাতে চাই।”
এ দিনের জয়ের আর এক নায়ক রাম মালিকও ঘোর বাস্তববাদী। ম্যাচের পর যুবভারতীর টানেল থেকে বেরিয়ে যখন স্টেডিয়ামের লম্বা করিডর দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে ড্রেসিংরুমে যাচ্ছিলেন রাম, তখন উচ্ছ্বাসের ছিটেফোঁটাও ছিল না তাঁর চোখে-মুখে। ম্যাচের পর করিম তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে আলাদা ভাবে আদর করছিলেন। মোহন-মিডিও বলছিলেন, “আই লিগের প্রথম গোল পেলাম। গোলটা কোচকেই উৎসর্গ করছি।” আর ওডাফাকে দিয়ে গোল করানোটা? এ বার উত্তর এল চট জলদি। “সবার মতো আমিও চেয়েছিলাম ওডাফা গোল করুক। ও গোলে ফেরা মানে দলের ঘুরে দাঁড়ানোটা অনেক সহজ হয়।” জো গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলের খেলায় খুশি কোচ থেকে ওকোলি ওডাফা প্রত্যেকে। মোহন-অধিনায়ক তো বলেই ফেললেন, “ট্যালেন্টেড বয়। মাঠেও খুব খাটে। এ দিনও খুব ভাল খেলেছে।”
বড় ব্যবধানে জেতায় বহু দিন বাদে বাগানে স্বস্তির হাওয়া। ফুরফুরে মেজাজে কাতসুমি-সন্দীপরা। এক দিন আগে পর্যন্ত গুম মেরে থাকা ওডাফাও চনমনে। গাড়িতে ওঠার আগে মনে করিয়ে দিতে ভুললেন না, “ক্রিস্টোফারের গোল দু’টি কিন্তু আমার পাসেই। আমিই করিয়েছি।” করিম আবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে চোট পাওয়া ইউনাইটেড কিপার ঈশান দেবনাথকে দেখে এলেন। ঈশানের অস্ত্রোপচার আজ।
উল্টো দিকে ইউনাইটেড শিবিরে শুধুই অন্ধকার। কোচ এলকো সাতোরির মন্তব্য যেন তা আরও গাঢ় করে দিল। ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে এলকো বলে দিলেন, “ফুটবলারদের বেতন না পাওয়াটা এ দিনের ম্যাচে কিছুটা প্রভাব তো ফেলেছেই। আমি জানতাম আস্তে আস্তে এটা হবে। অন্যরা টাকা পাচ্ছে, আমরা পাচ্ছি না, কত দিন আর মোটিভশেন ঠিক রাখা যায়?” সঙ্গে তোপও দেগে দিলেন র্যান্টিদের বিরুদ্ধে, “বিদেশিদের কোনও মোটিভেশনই ছিল না। এ ভাবে আর কত দিন চলতে পারে।” এলকো কি তবে ইউনাইটেড ছেড়ে দিতে চান? ডাচ কোচের ভাব-ভঙ্গিতে যেন সে রকমই ইঙ্গিত। |