গত তিন বছর ট্রফি খরা বা বিশ্রী ফলের পর বাগান সদস্য-সমর্থকরা বারবার দেখেছেন যে দৃশ্য— সেই নাটকের পুনরাবৃত্তি হল বুধবার সকালে।
কর্তারা এসে ক্লাব তাঁবুতে সভা করলেন কোচ-ফুটবলারদের সঙ্গে। উদ্বুদ্ধ করলেন। কোচ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন। খারাপ ফলের জন্য নানা অজুহাতও খাড়া করলেন। ফুটবলাররা মুখ গম্ভীর করে কপালে চিন্তার বলিরেখা তৈরি করে গাড়িতে উঠে বাড়ির পথ ধরলেন। এরপর মিডিয়া এবং ক্যামেরার সামনে কর্তারা নানা হিসেবি বা বেহিসেবি কথা বলে বাড়ি চলে গেলেন। আবার কবে তাদের একসঙ্গে মাঠে দেখা যাবে? কেউ জানে না।
এ দিন অবশ্য অন্য বারের মতোই অর্থ সচিব দেবাশিস দত্তকে পাশে বসিয়ে প্রেসিডেন্ট টুটু বসু বলে দিলেন, “আরে ইস্টবেঙ্গল হারলে তো এত হইচই হয় না। ওরাও তো হারছে। আমরা হারলেই কেন এ রকম হয়? ওডাফা তো সবে চোট সারিয়ে ফিরেছে। ওকে তো সময় দিতে হবে।” কিন্তু কে তাকে বোঝাবে, লাল-হলুদ তাঁবুতে গত তিন বছরে ফেড কাপ এসেছে, কলকাতা লিগ এসেছে, এ এফ সি কাপের শেষ চারে খেলার সম্মান জুটেছে। আই লিগে রানার্সও হয়েছে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু আপনার টিম কী পেয়েছে? কেন কোনও ট্রফি পায়নি? একটা ম্যাচ নয়, ধারাবাহিক জঘন্য পারফরম্যান্সের জন্যই যে বাগান অন্ধকার নেমে এসেছে সেটা যে তিনি জানেন না তা-ও নয়। তা সত্ত্বেও.....। |
প্রথম প্র্যাকটিসে বাগানের নতুন বিদেশি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
টুটুবাবু আসা মানেই হইচই শুরু হয়ে যায় বাগান চত্ত্বরে। তার ছিঁটেফোটাও অবশ্য অবশিষ্ট নেই এখন। কিন্তু ওডাফার সঙ্গী হয়ে আসা নতুন বিদেশি ক্রিস্টোফারকে দেখতেও তো কেউ আসেননি! আসলে হোসে ব্যারোটোর মতো হতাশ মোহনবাগান জনতা ধরেই নিয়েছে, এই টিম নিয়ে আই লিগে অবনমন হয়তো বাঁচবে, চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব নয়। এরিকের জায়গায় আসা ‘খেপুড়ে’ ক্রিস্টোফার এ দিন থেকেই অবশ্য মাঠে নেমে পড়েছেন। পিয়ারলেসের হয়ে কলকাতার তিন প্রধানের বিরুদ্ধেই এ বার কলকাতা লিগে গোল করেছেন নাইজিরিয়ান ফুটবলারটি। ১৮ ম্যাচে ১২ গোল। তার উপর পাড়ায় পাড়ায় কুড়ি-তিরিশ হাজার টাকা নিয়ে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেপ খেলে বেড়ান। ওডাফার পাশে এ দিন ক্রিস্টোফার নজর কাড়লেন। ফিটনেস থেকে গোল করার ইচ্ছে— সবেতেই। আর ক্লাবের দুর্দিনে সেই ফুটবলারকে খড়কুটোর মতো আকড়ে বাঁচতে চাইছেন করিম বেঞ্চারিফা। “ক্রিস্টোফার খুব ভাল ফর্মে আছে। তিন প্রধানের বিরুদ্ধে গোলও করেছে। ম্যাচ ফিট। আশা করব আমাদের চাহিদা ও মেটাবে,” বলে দিয়েছেন চাপে থাকা করিম। পাশাপাশি অবশ্য তাঁর সতর্ক মন্তব্য, “কলকাতা লিগে ক্রিস্টোফার প্রচুর গোল করেছে ঠিক। আই লিগে ও ভাল খেলবে কি না সেটা ঈশ্বরই জানেন। এরিকও তো যথেষ্ট পরিশ্রম করত। কিন্তু গোল করতে পারেনি। এ রকম হয়।”
লিয়েনে আসা ক্রিস্টোফারের সবুজ-মেরুনে নথিভুক্তি হয়ে গেলে তিনি শুক্রবার ইউনাইটেড ম্যাচে খেলবেন। অনুশীলনের পর নাইজিরীয় ফুটবলারটি অবশ্য জোর গলায় জানিয়ে গেলেন, সফল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। “ওডাফার সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু হয়তো সময় লাগবে। তবে আমি আশাবাদী সফল হবই। ক্লাবের দুঃসময়ে গোল করে ম্যাচ জেতাতে চাই,” ঘিরে ধরা মিডিয়াকে বললেন ক্রিস্টোফার। কিন্তু নতুন বিদেশি বাছল কে? ক্লাব থেকে জানানো হয় কোচই বেছেছেন। কিন্তু করিম বললেন, “আমি টেকনিক্যাল পরামর্শ দিয়েছি। ক্লাব কর্তারা বাজেট ও অন্যান্য ব্যাপার ঠিক করেছে। সবাই মিলে বাছা হয়েছে ক্রিস্টোফারকে।”
করিম অবশ্য ক্রিস্টোফারকে রেখেই টিম সাজাচ্ছেন। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার পজিশনে কাকে খেলাবেন তা এখনও ঠিক হয়নি। ডেনসনের সামান্য চোট আছে। করিম বললেন, “ওকে খেলাব কি না তা কাল অনুশীলনে ঠিক করব।” |