ফুটবল মহল জানে, দু’জনের সম্পর্ক সাপে-নেউলে।
মোহনবাগান কর্তারা এখনও আফশোস করেন, ওডাফার জন্যই র্যান্টিকে নিতে পারলেন না। মরসুমের শুরুতে ওডাফার আপত্তি না শুনলে এখন এই সমস্যায় পড়তে হত না।
হাতি পাঁকে পড়লে যা হয়!
এখন সেই র্যান্টি মার্টিন্সই ঘুরিয়ে ফর্মে ফেরার টোটকা বাতলাচ্ছেন ওডাফাকে!
বুধবার বিকেলে যুবভারতীতে ওডাফার নাম না করে র্যান্টি বলে দিলেন, “গোল না পেলে সব স্ট্রাইকারই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। এই সময় দলের সবার উচিত সেই ফুটবলারের পাশে দাঁড়ানো। পেছন থেকে তাঁকে উদ্দীপ্ত করা। তবে সেই স্ট্রাইকারেরও গোল-খিদে থাকা দরকার। নিজেকে নিজেই মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।” র্যান্টি যখন এ কথা বলছেন, তখন অবশ্য মোহনবাগান মাঠে অনুশীলন শেষ করে বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছেন ওডাফা। তার আগে ক্লাব তাঁবুতে মোহন অধিনায়ককে শুনতে হয়েছে, কর্তাদের সতর্কবার্তা।
আই লিগ ও কলকাতা লিগ মিলিয়ে এখনও কোনও গোল নেই ওডাফার। উল্টো দিকে র্যান্টির নামের পাশে রয়েছে চারটি গোল। আই লিগে ইউনাইটেড ১১টি ম্যাচ খেলে ফেললেও, র্যান্টি গোল পেয়েছেন মাত্র তিন ম্যাচে (রাংদাজিদ, স্পোর্টিং, চার্চিল-২)। তিনি নিজেও মনে করছেন নিজের পুরনো ফর্মে নেই। “আমিও এখনও প্রতিবারের মতো গোল করতে পারিনি। আরও গোল করা উচিত ছিল আমার। কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মনঃসংযোগ করছি। ফর্মে আমি ফিরবই,” বলে দিলেন র্যান্টি।
আর এই হার না মানা মনোভাব নিয়েই শুক্রবার মাঠে নামতে চাইছেন র্যান্টি। মোহনবাগান ম্যাচকেই ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ করতে চাইছেন ইউনাইটেডের গোলমেশিন। বললেন, “মোহনবাগান ম্যাচ থেকেই হয়তো ঘুরে দাঁড়াব। এই ম্যাচে গোল করে দলকে জেতানোর জন্য আমি মানসিক ভাবে তৈরি হচ্ছি।” র্যান্টির বডি ল্যাঙ্গোয়েজে যখন আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া, তখন অনেকটাই গুটিয়ে ওডাফা। অনুশীলনের পর সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে প্রায় দৌড়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। অনুশীলনেও কিং কোবরার পুরনো সেই জেদ চোখে পড়ল না। সব কিছু থেকেই যেন পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন মোহন অধিনায়ক। |
যেটা আবার সমর্থন করছেন না র্যান্টি। ওডাফার নাম না করে তিনি বললেন, “এই পরিস্থিতিতে লড়াই থেকে সরে যাওয়ার কোনও মানে নেই। গোল করার জন্য আমি যেমন খুব খাটছি। নিজের তাগিদ থাকারও দরকার রয়েছে।” এ দিন ইউনাইটেড অনুশীলন শেষ হয়ে যাওয়ার পর দেখা গেল, সব ফুটবলার যখন জার্সি বদলে বাড়ি ফেরার পথ ধরেছেন, র্যান্টি তখনও কয়েক জন সতীর্থকে নিয়ে একের পর এক বল গোলে মারছেন।
র্যান্টির মতো ইউনাইটেড ফুটবলারদের এই দায়বদ্ধতাই এখন বেগুনি ব্রিগেডের প্রধান ইউএসপি। তবে এলকো সাতোরিকে চিন্তায় রাখছে ফুটবলারদের বকেয়া পেমেন্ট। তাঁর দাবি, নিয়মিত বেতন না হওয়ার কারণেই নাকি প্রথমার্ধে দল ভাল খেললেও, দ্বিতীয়ার্ধে একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার মতো তাগিদ পাচ্ছেন না ফুটবলাররা। “বেতন না পাওয়াটা বড় সমস্যা। সে জন্য হয়তো ফুটবলাররা মানসিক ভাবে কিছুটা সমস্যায়। আমি কর্তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলব।” তবে এ দিন অনুশীলনে নামার আগে দলকে তাতানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন অধিনায়ক দীপক মণ্ডল। তাঁর পেপ টকে অবশ্য পুরো চাঙ্গা শৌভিক, রফিক, বেলোরা।
বেতন সমস্যা নিয়ে অনুশীলনের পর কোচের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন ক্লাবের অন্যতম কর্তা নবাব ভট্টাচার্য। পরে বললেন, “কোচ, ফুটবলারসবাই অনেক সহযোগিতা করছে আমাদের। জানি, ঠিক করে বেতন না পাওয়ায় ওদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমি ১৫ দিন সময় চেয়েছি ফুটবলারদের থেকে। আশা করি, কিছু একটা ব্যবস্থা করে ফেলব।”
মোহনবাগান ম্যাচের আগে অবশ্য ইউনাইটেডের জন্য খারাপ খবর, এ দিন অনুশীলনে নাক ভাঙল আসিফের। অনুশীলনের সময় গৌর নস্করের সঙ্গে সংঘর্ষে নাকে চোট পান আসিফ। কোনও মতে রক্ত বন্ধ করে তাঁকে এক্স-রে করতে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। দলীয় সূত্রের খবর, তাঁর নাকের হাড়ে চিড় ধরেছে। |