আড়াই মাস শীতঘুম দেওয়ার পর অবশেষে পিঠ বাঁচাতে জেগে উঠেছেন মোহনবাগানের বড় কর্তারা।
এক ম্যাচের এয়ারলাইন্স কাপ ছাড়া তিন বছর কোনও ট্রফি নেই বাগানে। তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছেন সদস্য-সমর্থকরা। পাড়ায় পাড়ায় তা ছড়িয়ে পড়ছে। যে কোনও সময় তা ক্লাব তাঁবুতে আছড়ে পড়বে আন্দাজ করে, দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতে বাজারে নেমে পড়লেন মোহন-কর্তারা। মঙ্গলবার এক দিকে ওকোলি ওডাফা, কাতসুমি, ইচেকে বাড়িতে ডেকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখানো হল। করা হল সতর্ক। অন্য দিকে এরিক মুরান্ডাকে বাদ দিয়ে কলকাতা লিগের নীচের দিকের ক্লাব পিয়ারলেস থেকে ক্রিস্টোফার বলে একজন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারকে নেওয়া হল। যিনি আবার টাকা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় নিয়মিত ‘খেপ’ খেলে বেড়ানোয় ওস্তাদ।
মহমেডান, শিলং লাজং থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর গত বার ক্রিস্টোফার সই করেছিলেন কালীঘাট মিলন সঙ্ঘে। কিন্তু নিয়মিত পাড়ায় পাড়ায় ‘খেপ’ খেলেন বলে তাঁকে তাড়িয়ে দেন কর্তারা। কালীঘাটের প্রেসিডেন্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “নিয়মিত টাকা নিয়ে খেপ খেলে বেড়াত ক্রিস্টোফার। তারপর চোট পেয়ে বসে থাকত। ওর জন্যই গত বার ডুবেছি আমরা। কলকাতা লিগ চলছে। তা সত্ত্বেও গত রবিবারও নিয়ম ভেঙে নাম বদলে শিলিগুড়িতে একটা টুর্নামেন্টে ‘খেপ’ খেলেছে ও। আজও খেলার কথা ছিল ওখানেই। কিন্তু শুনলাম মোহনবাগানের ডাক পেয়ে দুপুরে তড়িঘড়ি বিমানে করে এসে চুক্তি করেছে।”
এ বছর কলকাতা লিগে পিয়ারলেসের হয়ে অবশ্য ভালই খেলছেন ক্রিস্টোফার। গোলও পেয়েছেন বড় দলের বিরুদ্ধে। কিন্তু আই লিগে তিনি কতটা সফল হবেন তা বোঝা যাবে শুক্রবার ইউনাইটেড ম্যাচ থেকেই। আজ বুধবার থেকেই মাঠে নেমে পড়ছেন ক্রিস্টোফার। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে অন্য জায়গায়, হাতের কাছে থাকা ক্রিস্টোফারকেই যদি চতুর্থ বিদেশি হিসাবে নেওয়া হবে, তা হলে বিস্তর নাটকের পর নাইজিরিয়া থেকে এত টাকা খরচ করে কেন উড়িয়ে আনা হল এরিককে? কর্তারা অবশ্য দেখাচ্ছেন কোচ করিমকে।
মোহনবাগানের পক্ষ থেকে এরিককে তাড়িয়ে ক্রিস্টোফারকে নেওয়ার যে মেল পাঠানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমে, সেটিও বেশ চমকপ্রদ। শেষ তিনটি লাইনে লেখা হয়েছে, কোচ করিম বেঞ্চারিফার পরামর্শেই নেওয়া হচ্ছে ক্রিস্টোফারকে। আজ পর্যন্ত কখনও যা হয়নি। যা শুনে মনে হল মোহন-কোচ করিম বেশ ক্ষুব্ধ। বললেন, “আমি কাল অনুশীলনের পর কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। তার পর এ ব্যাপারে যা বলার বলব।” মরক্কান করিম বুদ্ধিমান। তিনি বুঝে গিয়েছেন এ সব করে ব্যর্থতার দায়ভার তার উপর চাপানোর রাস্তা পরিষ্কার করছেন কর্তারা। ক্লাব সূত্রের খবর আজ বুধবার প্রেসিডেন্ট টুটু বসু-সহ কয়েক জন কর্তা অনুশীলনের পর কোচ ও ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলবেন।
তার আগে অবশ্য এ দিন নিজের বাড়িতে ডেকে অধিনায়ক ওডাফাকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখালেন টুটুবাবু। পাশাপাশি অন্য দুই বিদেশি কাতসুমি আর ইচেকে বাড়িতে ডেকে পারফরম্যান্স খারাপ হলে তাদেরও এরিকের মতো অবস্থা হবে বলে জানিয়ে দেন সচিব অঞ্জন মিত্র। ওডাফা-সহ তিন ফুটবলারই নাকি ক্ষমা চেয়ে নেন কর্তাদের কাছে। প্রতিশ্রুতি দেন, ভাল খেলার।
এ দিকে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়লেন মেয়র পারিষদ ও কর্মসমিতির সদস্য অতীন ঘোষ। কার্যত শুনশান, অন্ধকারাচ্ছন্ন বাগান তাঁবুর লনে সুব্রত ভট্টাচার্যের পাশে বসে তিনি ফুটবল টিম নিয়ে নানা প্রশ্ন তুললেন। সুব্রতর মতোই। ঘিরে ধরা চ্যানেলের বুম দেখে অতীন প্রশ্ন তুললেন, ওডাফার সুস্থতা নিয়ে। চিঠি জমা দিলেন কর্মসমিতির সভা ডাকার জন্য। তার আগেই অবশ্য সচিব অঞ্জন মিত্র সভা ডেকে দিয়েছেন নিজের বাড়িতে। সোমবার হবে সভা। দেখার সেখানে আবার কী নাটক হয়?
|