মাছকে শেষ পর্যন্ত জলে ছাড়লে যা হয়, তেমনই অবস্থা ভারতীয় পেসারদের। ওয়ান্ডারার্সের উইকেট যেমন গতি ও বাউন্সে ভরা বলে আগাম জানিয়েছেন সেখানকার কিউরেটর, মূল স্টেডিয়ামের লাগোয়া প্র্যাকটিস এরিনার উইকেটও তেমনই। এমন উইকেটে বল করতে নেমে শামি, উমেশ, ভুবনেশ্বররা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন না?
নেটে কিছুক্ষণ ব্যাট করার পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বেরোতে দেখা গেল। উমেশের একটা বল গোলার মতো এসে তাঁর পায়ে লাগায় এই হাল ভারত অধিনায়কের। যদিও কোনও মারাত্মক চোট হয়নি ধোনির, কিছুক্ষণ পরেই ফের ঢুকলেন নেটে। কিন্তু সম্ভবত বুঝে গেলেন স্টেইন, ফিল্যান্ডার, মর্কেলদের সামলাতে গেলে আরও সতর্ক হতে হবে তাঁকে। কিন্তু প্র্যাকটিসের শেষে হঠাৎ লাল কোকাবুরা বলে তাঁর নকিং করার দৃশ্যটা চমকে দেওয়ার মতো। নেটের পিছনে তখন কোচ ডানকান ফ্লেচার ও ধোনির উল্টোদিকে একাধিক লাল বল হাতে ফিল্ডিং কোচ ট্রেভর পেনি ও ভিডিও অ্যানালিস্ট ধনঞ্জয়। নেটের পিছন থেকে সমানে ক্যাপ্টেনকে পরামর্শ দিয়ে গেলেন ফ্লেচার। তাঁর পাশে খাড়া করা ভিডিও ক্যামেরা। লাল বলে বাড়তি ‘মুভমেন্ট’ হয় বলেই কি ধোনির এই বিশেষ অনুশীলন? নাকি তাঁর মাথায় এখন থেকেই টেস্ট সিরিজ? প্রশ্নগুলো রয়েই গেল।
ধোনির চোট পাওয়া দেখে পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা অনেক সতর্ক। বোলারদের কোচ জো ডসকে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল এক পেসার থেকে আর এক পেসারের কাছে। |
অশ্বিন, জাডেজারা ব্যাট হাতে নেটে যতটা সময় কাটালেন, বল হাতে অতক্ষণ হাত ঘোরালেন কি না, তা নিয়ে উপস্থিত গুটিকয়েক ভারত সমর্থকের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারত। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের দাপটে তাঁদেরও যে ব্যাট হাতে নামতেই হবে, সেই ভেবেই বোধহয় অশ্বিনদের ব্যাট হাতে নেটে এতটা সময় কাটানো। যদিও সম্প্রতি ওয়ান ডে ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার পারফরম্যান্স বেশ শোচনীয় (শেষ আটটির মধ্যে সাতটি ম্যাচেই হার), তা সত্ত্বেও ভারতীয়রা এতটা সতর্ক আবহাওয়ার ধরন ও উইকেটের অবস্থা দেখে। ধোনিরা জো’বার্গে পা রাখার পর থেকে যেমন হাল্কা ঠান্ডা টের পাচ্ছেন (এটাই ওদের গ্রীষ্ম) তেমন সঙ্গে ঝড়-বৃষ্টিও চলছে থেকে থেকেই। মঙ্গলবার ধোনিরা প্র্যাকটিস সেরে হোটেলে ফেরার কিছুক্ষণ পরই শুরু হল ঝড়-বৃষ্টি।
দক্ষিণ আফ্রিকা যে এমনই, তা দলের ছেলেদের জানিয়ে দিয়েছেন ডানকান ফ্লেচার। যাঁরা এই প্রথম ভারতীয় দলের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এসেছেন, তাঁদের কোচ বললেন, “পরিবেশ, উইকেট যেমনই থাকুক, যে যার স্বাভাবিক খেলাটা খেলো। তবে আবহাওয়াকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে সবাইকে।” দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার পর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে আগের দিনই ফ্লেচার বলেছেন, “এটা ঠিকই যে এটাই ভারতের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ বিদেশ সফরকারী দল। কিন্তু সম্প্রতি ওরা যে রকম খেলেছে, তাতে এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না। ওরা চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি এবং নিজেদের উপর যথেষ্ট আস্থা আছে ওদের। এটা একটা বড় অ্যাডভান্টেজ।” গত অগস্টেই তিনি ভারত ‘এ’-র সফরের সময় দলের সঙ্গে ছিলেন দু’টি চার দিনের ম্যাচে। কিন্তু তখনকার ঠান্ডা আবহাওয়া ও ধীরগতির উইকেটের সঙ্গে এই সিরিজের তাপমাত্রা বা পিচের কোনও মিল নেই। তবু সেই দলের সঙ্গে যে ছ’জন ক্রিকেটার ছিলেন, এই সফরে তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলেই মনে করেন ফ্লেচার। ধোনি অবশ্য একটু এগিয়েই সোজা ব্যাটে খেললেন। বললেন, “অবস্থা যে রকম, সেই অনুযায়ীই খেলতে হবে আমাদের। ওয়ান ডে দিয়ে সফর শুরু করাটা এক দিক থেকে ভাল, কারণ নিজেদের মধ্যে থাকা যাবতীয় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব টেস্ট সিরিজের আগেই কেটে যাবে। তাড়াতাড়ি উইকেট পড়ে গেলেও ৩৪-৩৫ ওভার থেকে নিজেদের বড় শট খেলতে হবে, উইকেটের বাউন্সের সঙ্গে ততক্ষণে মানিয়ে নিতে পারা যাবে। খেলার মধ্যে পজিটিভ ব্যাপারগুলো চলে আসবে।”
এই তত্ত্ব তাঁরা মাঠে কার্যকর করতে পারলে স্টেইনদের দেশেও ধোনি-ধামাকা দেখা যেতে পারে।
|