আই লিগের লাস্ট বয়ের কাছে হেরে টালমাটাল মোহনবাগান। এতদিন ঘুমিয়ে থাকা বড় কর্তারা হঠাৎ-ই আবার বাজারে নেমে পড়েছেন ড্যামেজ কন্ট্রোলে। যাঁদের মধ্যে তিন জনকে মাঠেই প্রায় দেখা যায় না এখন। ডার্বি ম্যাচেও ওরা ছিলেন অনুপস্থিত। ক্লাবের দুর্দশায় ক্ষোভে ফুসছেন সদস্য সমর্থকরা। সামনে যে নির্বাচন আসছে।
এরই মধ্যে আবার দলের দুর্দশায় ‘দুঃখ’ পেয়ে বিকেলে পদত্যাগ করেছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। রাতে অবশ্য তাঁর অন্য সুর। বললেন, “সবাই চিঠি ফেরাতে অনুরোধ করছে। জানি না কী করব।”
কোচ করিম বেঞ্চারিফার সঙ্গে বিকেলে চার প্রধান কর্তা টুটু-অঞ্জন-সৃঞ্জয়-দেবাশিসের বৈঠক হল। সেখানে কোচকে টিম নিয়ে নানা প্রশ্ন করার পাশাপাশি বিদেশি এরিক মুরান্ডাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল। কোচের বেছে আনা চার ফুটবলারকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়ে রাখা হল। ইউনাইটেড ম্যাচের পর তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি ঠিক হল, ওডাফার সঙ্গে কথা বলবেন কর্তারা। তার সমস্যা কোথায় তা নিয়ে। কর্তারা চিন্তিত ওকোরি চিমার সঙ্গে ওডাফার প্রতিদিন মেলামেশা নিয়েও। |
যাঁকে নিয়ে কর্তাদের চিন্তা সবথেকে বেশি সেই দু’কোটির ওডাফার অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। চূড়ান্ত ব্যর্থতার দিনে সমর্থকদের রোষানল থেকে বাঁচতে মাথায় হেলমেট চাপিয়ে স্কুটারে চড়ে পালিয়ে ছিলেন স্টেডিয়ামের পিছন দরজা দিয়ে। কিন্তু বাড়িতে এসে যে কে সেই। সোমবার সকালে অনুশীলনে বাগানের তিন বিদেশিকাতসুমি, এরিক, ইচে হাজির। কিন্তু ওডাফা কোথায়? উদাসীন ভাবে কোচ করিম বললেন, “সকালে ফোন করেছিল। বলল জ্বর এসেছে। আসতে পারবে না। এর বেশি কিছু জানি না।” নিজের দুঃসময়ে হোসে ব্যারেটো সারাদিন অনুশীলন করতেন ফিরে আসার জন্য। কিন্তু ওডাফার সেই তাগিদ কোথায়? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র ফুটবলার এ দিন বললেন, “ও যে কখন বল ছাড়বে সেটাই তো মাঠে বুঝতে পারছি না আমরা। সমস্যার সূত্রপাত যে ওখানেই। যদি ঠিকঠাক অনুশীলন করত তা হলে তো এটা বোঝা যেত। ও তো ঠিকঠাক সেটা করেই না।”
আসলে শহরে পা দেওয়ার দিন থেকেই নিজের ফিটনেস নিয়ে মাথা ঘামাননি মোহনবাগান অধিনায়ক। কাফ এবং উরুর পেশিতে চোট ছিল চার্চিলে থাকতেই। কিন্তু পেশিকে নমনীয় রাখতে গা করেননি ওডাফা। ব্যক্তিগত দক্ষতায় গায়ে-গতরে খেলে হাফ চান্স থেকে গোল করে এতদিন বেঁচেছেন। প্রি-সিজনে ফাঁকিবাজি মারার ফল এখন ভুগছেন। ফিটনেস হারিয়েছেন। বল দখলের লড়াইতে মন চাইলেও শরীর যাচ্ছে না। গতিও কমেছে আগের চেয়ে।
ওডাফাকে নিয়ে আলোচনার প্রধান কারণ সব থেকে বেশি টাকা নেওয়ার জন্য। কিন্তু কাতসুমি। তিনিও তো ফ্লপ প্রায় প্রতি ম্যাচেই। কেন তাকে নেওয়া হল তা নিয়েও প্রশ্ন সর্বত্র। এ দিন অনুশীলন শেষে ওডাফার বিরুদ্ধে নাম না করে তোপ দেগে দিয়েছেন কাতসুমিও। বলছেন, “রাঙ্গদাজিদ ম্যাচেও তো আমার বাড়ানো গোটা পাঁচেক বলে পা ছোঁয়ালেই তো গোল হয়ে যেত। সেটা যদি না করতে পারে কী বলব।”
বাগানের এই ব্যর্থতার পিছনে কাতসুমিকেও বাইরে রাখা যায় না। তাঁর বিরুদ্ধে কান পাতলেও অনেক অভিযোগ। ফোকাসড নন। তিনিও বল পেলে ছাড়তে চান না। ড্রিবলের কার্যকারিতা কম।
ওডাফা-এরিক-কাতসুমিতিন বিদেশিই ব্যর্থ। স্বদেশীদেরও একই হাল। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে কর্তারা বিদেশ থেকে ফিরে বাজারে নেমেছেন। কিন্তু তাতে করিমের ব্রিগেড কি ফর্মে ফিরবে। দেখার সেটাই।
|