মুম্বই ক্রিকেট সংস্থা তাঁকে ভারতের ক্রিকেট রাজধানীর ‘লেজেন্ড ক্লাব’-এ অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মঞ্চেই এমসিএ-কে সচিন তেন্ডুলকরের প্রস্তাব “মুম্বই স্কুল ক্রিকেটে প্রত্যেক দলে এগারোর বদলে পনেরো জনকে খেলার সুযোগ দিন। অনেক সময় হয়, দু’জন সমান দক্ষতার প্লেয়ারের মধ্যে এক জন খেলার সুযোগ পায় না। তাতে উনিশ-বিশ প্রতিভার প্লেয়ারের মধ্যে এক জনকে অপচয় করে ফেলা হয়। কিন্তু প্রত্যেক প্লেয়ারের অন্তত তিনটে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া উচিত। এটা হলে নির্বাচকেরা বেশি ক্রিকেটারকে দেখার সুযোগ পাবেন। আরও বেশি নতুন প্রতিভার খোঁজের জন্য আমাদের নতুন কিছু নিয়ম চালু করা উচিত।”
তার পর বরাবর বিতর্কের থেকে শত যোজন দূরে থাকা সচিনের অবাক করা মন্তব্য, “আমি এ ব্যাপারে মুম্বইকে সাহায্য করব। কেউ কেউ বলতে পারেন, অর্জুন ক্রিকেট খেলে বলেই আমি এ রকম প্রস্তাব দিচ্ছি। কিন্তু সে রকম কোনও ব্যাপার আদৌ নয়।” |
অবসরোত্তর সচিনকে এটাই প্রথম এমসিএ-র সংবর্ধনা। মঙ্গল-সন্ধেয় যে অনুষ্ঠানে বিজয় মার্চেন্ট, বিজয় হাজারে, বিনু মাঁকড়, সুনীল গাওস্করের পর ‘লেজেন্ড ক্লাব’-এর পঞ্চম সদস্য হলেন তেন্ডুলকর। এ দিনই রমাকান্ত আচরেকরের ৮১তম জন্মদিন ছিল। এই অনুষ্ঠানেই সচিন তাঁর ‘আচরেকর স্যার’-কে কেক খাওয়ান। এমসিএ প্রধান শরদ পওয়ার গুরু-শিষ্য দু’জনকেই শাল আর স্মারক দিয়ে পুরস্কৃত করেন। দু’জনেরই কথা বলতে উঠে অজিত ওয়াড়েকর বললেন, “আচরেকরের সঙ্গে শিবাজি পার্কে টেনিস বল ক্রিকেট অনেক খেলেছি। টেনিস বল ক্রিকেটে আচরেকর ছিলেন ডন ব্র্যাডম্যান। ওঁর টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচে আমরা ভয়-ভয় থাকতাম। এখন মনে হয়, ইস! তখন যদি আচরেকরকে বলতাম আমাকে আপনার সহকারী কোচ নিন, তা হলে আমিও একজন ভারতরত্ন তৈরির কারিগর হয়ে থাকতাম।”
এর পর অতীতে ফিরে গিয়ে ওয়াড়েকর বলেন, “ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেই হিরো কাপ সেমিফাইনালে ঠিক ছিল, ওদের ইনিংস শেষ ওভার অবধি গড়ালে সেটা কপিল করবে। কিন্তু ঊনপঞ্চাশ ওভারের শেষে কপিল জানাল ওর হাতের পেশিতে টান লাগছে। আজহার দেখি অসহায় মুখে মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি কিছু ইঙ্গিত করার আগেই দেখি, আজহারের হাত থেকে সচিন বলটা কেড়ে নিল। পরে শুনেছিলাম, ও বলেছিল, ক্যাপ্টেন, আমাকে ফিল্ডিংটা শুধু ঠিকঠাক সাজিয়ে দাও। শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ছ’রান বাকি ছিল জিততে। সচিন ওদের জিততে দেয়নি।” তার পর যোগ করেন, “অকল্যান্ডেও একই ব্যাপার দেখেছিলাম। সেই ওয়ান ডে ম্যাচে টসের মাত্র কুড়ি মিনিট আগে সিধু শরীর খারাপের জন্য সরে দাঁড়াল। কে ওপেন করবে ভাবছি। সচিনের দিকে চোখ পড়তেই ও বলল, স্যার, আমি কি ওপেন করতে পারি? ওকে বলেছিলাম, আমার তো কোনও বিকল্প নেই। ঠিক আছে তুমিই যাও। নিউজিল্যান্ড বোলারদের সে দিন ও যা পিটিয়েছিল, ভাবা যায় না!”
উদ্বোধনী বক্তৃতায় এমসিএ কর্তা রবি সবন্তের মন্তব্য, “ব্রায়ান লারা বলেছেন, ওঁর ছেলেকে বলবেন সচিনের মতো ব্যাট করতে। কিন্তু মিস্টার লারা, আপনি রমাকান্ত আচরেকর কোথায় পাবেন?” এ দিন সচিন মঞ্চে দু’হাতে দু’দিকে পৃথ্বী শ আর মুশির খানকে জড়িয়ে ছবি তুললেন। চোদ্দো আর আট বছরের দুই নতুন মুম্বই-ক্রিকেট প্রতিভার সঙ্গে কথা বললেন। প্রথম জন যদি হ্যারিস শিল্ডে এক ইনিংসে ৫৪৬ করে থাকে দিনকয়েক আগে, তা হলে দ্বিতীয় খুদে কাঙ্গা লিগে এই বয়সেই নেমে পড়েছে। ক্রিকেট-ঈশ্বরের ছোঁয়ায় কি নতুন সচিন হবেন পৃথ্বীরা? |