চেন্নাইয়ের হোটেলে বসে গত রাতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রথম ম্যাচটা দেখছিলাম। দেখতে দেখতে হঠাৎই অ্যালান ডোনাল্ডের একটা ফোনের কথা মনে পড়ে গেল।
কয়েক মাস আগের কথা। ভারত ‘এ’ টিম সাউথ আফ্রিকা ট্যুর করছে। শিখর ধবন যেখানে ২৪৮ করল, সেই সফরটা। ধবনের ওই ইনিংসটার পর ডোনাল্ডের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল। ওকে বলেছিলাম, ‘দেখেছ তো, তোমাদের দেশে খেলাও আমরা এখন শিখে গিয়েছি। ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানরা খারাপ করছে, আর বলতে পারবে না।’ ডোনাল্ড শুধু একচোট হেসে সে দিন উত্তর দিয়েছিল, ‘আসল সাউথ আফ্রিকা সফরটা আসতে দাও। তার পর এটা বোলো!’
কাল বুঝলাম, দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং কোচ সে দিন ফাঁকা আওয়াজ দেয়নি। বিশ্রী ভাবে ধোনিরা প্রথম ম্যাচটা হারল। অনেকে দেখছি একটা ম্যাচ দেখেই বাকি সিরিজটা নিয়ে আতঙ্কে ভুগতে শুরু করে দিয়েছেন। আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই। একটা ম্যাচ দেখে এত গালাগাল করছেন কেন? ওয়ান ডে সিরিজের এখনও দু’টো ম্যাচ বাকি। টেস্ট সিরিজটা আছে। তা ছাড়া কী ভেবেছিলেন? গত দু’মাসে চুটিয়ে উপমহাদেশে খেলে অনায়াসে জো’বার্গে গিয়ে ডেল স্টেইন-মর্নি মর্কেলদের সামলে দেওয়া যাবে? একটাও প্র্যাকটিস ম্যাচ না খেলে, মাত্র দু’দিন নেট করে?
আমি বলছি না যে, ভারত বাকি সিরিজে পাল্টা দেবেই। বলছি না, ওয়ান ডে সিরিজের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত টেস্ট সিরিজটাও জিতবে। বরং বলব, ওয়ান ডে সিরিজ আমাদের হয়তো হারতে হবে। কারণ— অন্তত দু’টো ম্যাচ খেলার দরকার পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পিচ বুঝতে। সে দিক থেকে দেখলে ভারতকে সব বুঝতে বুঝতে হয়তো রবিবারের ম্যাচটাও পেরিয়ে যাবে। টেস্ট সিরিজটা জেতা আবার কঠিন নয়, ভয়ঙ্কর কঠিন। ওখানে স্টেইন-মর্কেলদের কারও দশ ওভারের কোটা নেই। মাঝে মাঝেই এক একটা স্পেলে বল করে যাবে। তা ছাড়া আমাদের কুড়িটা উইকেট নেওয়ার মতো বোলার আছে?
তাই বলছি, ফলাফল নিয়ে বিশেষ না ভেবে ট্রানজিশন পিরিয়ডে টিমটা কী রকম করল, সেটা দেখুন। আমি তো তাই করব। দেখব, সচিন-দ্রাবিড়-ভিভিএস বাদে নতুন টিমটা টেস্টে কী করে। দেখব, শামি-ভুবনেশ্বরদের মধ্যে কতটা ক্ষমতা আছে জাহিরদের ব্যাটনটা নেওয়ার।
|
ওয়ান ডে সিরিজটা নিয়ে আমি ভাবছিই না। দেখুন, ভারতের নতুন করে ওয়ান ডে-তে প্রমাণ করার কিছু নেই। উপমহাদেশে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনেকে বলেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন তো হয়েছে ভারতে। কিন্তু পরে ধোনিরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে ইংল্যান্ডে। বৃহস্পতিবারের হার একটা ‘ওয়েক আপ কল’ নিশ্চয়ই। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সদ্য ওড়ানোর পর ভারতীয় টিম বুঝে গেল, বিদেশে মহাশক্তিধরদের সামনে পড়লে কী হতে পারে। যারা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুগছিল, তারাও এ বার বাস্তবে ফিরবে। কিন্তু ওয়ান ডে সিরিজটা ০-৩ হারলেও ভারত ওয়ান ডে-তে বিশ্বের অন্যতম সেরাই থাকবে। আমার কাছে তাই টেস্ট সিরিজটাই আসল।
বিদেশে শেষ দু’টো টেস্ট সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ধোনিরা। তার উপর প্রায় অনভিজ্ঞ একটা টিম নিয়ে নামা। ভারতীয়দের কাউকে কাউকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, ওরা এখন থেকে টেস্ট সিরিজটা নিয়ে বেশি ভাবছে। কোথায় একটা পড়লাম যে, জো’বার্গ ম্যাচের আগে নেটে ওরা সাদা বল তো বটেই, লাল বলেও প্র্যাকটিস করেছে। কয়েকটা ব্যাপার ভারত কী ভাবে ‘ফাইন টিউন’ করে, দেখতে আগ্রহ হচ্ছে। যেমন, স্টেইন-মর্কেলদের লেংথ তো বটেই, লাইনের বলও ছাড়া। অন দ্য রাইজ খেলা ভুলে শরীরের কাছ থেকে খেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে বাউন্স সামলাতে সমস্যা হয় যেমন, তেমন আবার বল নিশ্চিন্তে ছাড়াও যায়। উইকেটের বলও। তেমনই ভারতীয় পেস বোলিংকেও বুঝতে হবে, সুবিধেজনক পিচ পেলেই চলে না। ঠিক লেংথটাও বার করা দরকার। যে লেংথে উপমহাদেশে বল করলে চলে, সাউথ আফ্রিকায় সেটা চলবে না। অন্য কিছু ভাবতে হবে।
আশা করছি, কিছু কিছু পাল্টা ওষুধ বার করবে ধোনিরা। যদি বার হয়, হারা-জেতা বাদ রেখে পাল্টা যুদ্ধটা ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে বলতে হবে ভারতের নতুন টিম তৈরি হচ্ছে। ঠিক দিকে এগোচ্ছে। আর না পারলে? বৃহস্পতিবার থেকে যে আশঙ্কাটা তৈরি হচ্ছে, সেটা আরও ভয়াবহ চেহারা নেবে। |