|
|
|
|
|
এই পিচে বোলারদের
ব্যর্থতাই ডুবিয়ে দিল
অশোক মলহোত্র |
|
জোহানেসবার্গের ম্যাচটা টিভিতে দেখতে দেখতে রাগই হচ্ছিল। রাগটা হচ্ছিল কোচ ডানকান ফ্লেচার আর টিম ম্যানেজমেন্টের উপরে।
ভারতীয় ব্যাটিংকে আমি খুব দোষ দেব না। ঘরের মাঠে শাসন আর বিদেশের মাঠে শাসিত হওয়া আমাদের আজকের ট্র্যাডিশন নয়। বহু দিন ধরে চলছে। সচিন-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণরাও যখন ছিল, সাউথ আফ্রিকাতে গিয়ে ওদের বিরুদ্ধে দু’টো-একটা টেস্টে ভাল খেলা বাদ দিলে বিশেষ কিছু করতে পারিনি। আর এ বার যারা গিয়েছে, তাদের আমি বলব ‘ফ্ল্যাট ট্র্যাক বুলিজ’। মানে, দেশের মাঠে পাটা উইকেটে যে কোনও বোলিংকে এরা ছিড়ে ফেলবে। স্টেইন আনুন, মর্কেল আনুন যে কোনও ফাস্ট বোলারকে মাঠের বাইরে ফেলে দেবে। কিন্তু বিদেশের বাউন্সি, সিমিং ট্র্যাকে গিয়ে দুর্ধর্ষ ব্যাটিং করবে ভাবাটা ঠিক নয়। যাঁরা সেটা ভেবেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বৃহস্পতিবারের ওয়ান ডে-টা দেখার পর আন্দাজ পেয়ে গেলেন, এখানে রোজ রোজ সাড়ে তিনশো তোলাও যাবে না, বলে-বলে সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরিও হবে না। তবু আমি বলব, ব্যাটিং নয়। ভারতকে যদি বৃহস্পতিবার কোনও কিছু ডুবিয়ে থাকে, সেটা স্লগ ওভার বোলিং। |
|
বাউন্সে এ ভাবেই বেসামাল ভারতীয় ব্যাটিং। |
স্লগ ওভার বোলিং নিয়ে কয়েক দিন আগেও ধোনিকে অনেক কথা বলতে শুনেছি। ও যে টেনশনে ছিল ব্যাপারটা নিয়ে, সেটা বারবার বেরিয়ে পড়েছে। কিন্তু বুঝে পাচ্ছি না ফ্লেচার-সহ টিমের কোচিং স্টাফ তা হলে কী করল? কোনও নির্দিষ্ট একটা ব্যাপার যদি টিমকে বারবার ভুগিয়ে চলে, তা হলে তার ওষুধ তো কোচকে বার করতে হবে। তুমি তো ওই জন্যই মাইনে পাচ্ছ। বিরাট, ধোনিকে তো আর ক্রিকেট শেখানোর জন্য তোমাকে ডাকা হয়নি। জো ডস বলে এক জন আছে বোলিং কোচ হিসাবে। যার এগুলো দেখার কথা। স্বয়ং ফ্লেচার আছেন। যিনি কি না ভারতের মাঠেও দেখলেন কী ভাবে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্লগ ওভারে ভারতীয় বোলিংকে নিয়ে ছেলেখেলা করে গেল। আমার প্রশ্নএত কিছু দেখার পরেও কি আপনাদের ঘুম ভাঙল না? মনে হল না, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে স্লগ ওভার বোলিংয়ের রোগটা শুধরে নেওয়া উচিত?
বদলে ওয়ান্ডারার্সে কী দেখলাম? দেখলাম শেষ দশ ওভারে ১৩৫ উঠছে! যা অমার্জনীয়। ক্ষমার অযোগ্য।
দেখুন, একটা কথা পরিষ্কার বলে রাখি। জো’বাগের্র পিচ এ দিন মোটেও ভয়ঙ্কর ছিল না। উইকেটে বাউন্স আছে। সুইং করেছে। মনে রাখতে হবে, অতীতে কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাতে ভারতীয় ব্যাটিং আক্রান্ত হলেও বোলাররা সে ভাবে হয়নি। শ্রীনাথের ভাল বল করার রেকর্ড আছে। জাহির খুবই ভাল করেছে। মুনাফ পর্যন্ত চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছে। সেখানে বৃহস্পতিবার শামি ছাড়া আর কাউকে দেখে মনে হল না, কারও বলে কিছু হওয়া সম্ভব। ভুবনেশ্বর এত ভাল সুইং বোলার। কিন্তু এ দিন ওকে খুবই অগোছালো মনে হল। মোহিত শর্মারও একই সমস্যা। ভারতীয় পেসাররা আরও একটা ভুল করছিল। বাউন্সার মারতে গিয়ে। আরে, দক্ষিণ আফ্রিকানরা পেসার খেলে-খেলে নিজেদের তৈরি করে। সেখানে ওদের শর্ট করে কী হবে? সুইংয়ে বরং লাভ আছে।
|
লড়লেন তিনি
একা।
জো’বার্গে শামি। |
আমি বলছি না, এরা পারবে না। প্রথম ম্যাচ, বাউন্সি পিচ দেখে উত্তেজনার চোটে পেসাররা এ রকম ভুল করে। তবে জো’বার্গের মতো পিচ যদি বাকি মাঠে হয়, উন্নতি কতটা কী হবে বলতে পারছি না। আসলে এখানে মিডিয়াম পেস করে লাভ নেই। বল ভাল ব্যাটে আসবে, ওটা অনায়াসে খেলে দেওয়া যাবে। দরকার ঘণ্টায় একশো চল্লিশ বা তারও বেশিতে বল করা। যেটা একমাত্র শামি পারে। তিনটে উইকেট তোলা তারই প্রমাণ। আর স্লগ ওভারে যা দেখলাম, আতঙ্কিত হওয়ার মতো। ডে’ভিলিয়ার্স, ডি’কক, দুমিনিরা তো মোটামুটি পাড়ার বোলিং করে ছাড়ল! প্রথম দেড়শো রানেও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ব্যাটিং লাইনের একটাও উইকেট ফেলতে না পারলে, শেষ দশ ওভারে ১৩৫ উঠলে, ম্যাচ জেতা কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। তার উপর ভারতীয় টপ অর্ডারের যা ব্যাটিং হল, তাতে সম্মানজনক স্কোরে শেষ করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জেতা তো অনেক পরের ব্যাপার।
রোহিত শর্মাকে (১৮) দেখে মনে হল, ও দেশের মাঠে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারে। কিন্তু সুইং বোলিং কী ভাবে খেলতে হয়, এখনও পুরোপুরি জানে না। ভাবতে পারেন, স্টেইনের প্রথম পনেরো-ষোলটা বল ও ব্যাটেই ছোঁয়াতে পারেনি! যুবরাজ সিংহ-র (০) অবস্থাও খুব খারাপ। বলই বুঝতে পারছে না। প্রথম বলটা হেলমেটে খেল, পরের বলে বোল্ড। যুবরাজ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও যদি না পারে, তা হলে ওর টিমে থাকা-না থাকা কিন্তু পুরোপুরি নির্ভর করবে ধোনির ইচ্ছের উপর। এমন সিমিং উইকেটে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উচিত ছিল শরীরের কাছে-কাছে খেলা। স্টেইন-মর্কেলদের দেখে ‘প্যানিক’ না করা। ভারতীয়দের বুঝতে হবে, পুরো সিরিজে মর্কেলের এমন ভয়াবহ শর্ট ডেলিভারির সামনে ওদের পড়তে হবে। চিন মিউজিক, হেলমেটে বাউন্সার খাওয়া সবই সহ্য করতে হবে। বুঝতে হবে, ডেল স্টেইন এ ভাবেই মারাত্মক আউটসুইঙ্গারগুলো করে যাবে আরও এক মাস। টেকনিক না বাঁচাতে পারলে, কাউন্টার অ্যাটাকের রাস্তাটা নিতে হবে। বিরাট কোহলির যে ব্যাপারটা আমার ভাল লাগল। ধোনিরও। ওরা অনেক বার ‘বিট’ হয়েছে, বল বুঝতে পারেনি, ক্যাচ তুলেছে, কিন্তু যতক্ষণ ছিল মাঝেমাঝে পাল্টাও দিয়েছে। ধোনি তো হাফসেঞ্চুরিও করল। কিন্তু সেইটুকু দিয়ে কী আর সাড়ে তিনশো পেরনো যায়!
তবু ভাগ্য ভাল, জো’বার্গের উইকেটে প্রথমে ব্যাট করতে হয়নি ভারতকে। একেবারে ‘ফ্রেশ’ উইকেটে স্টেইন-মর্কেল-ম্যাকলারেনদের সামনে পড়লে কী হত কে জানে! |
ছবি: এএফপি।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দঃ আফ্রিকা ৩৫৮-৪ (ডি’কক ১৩৫, ডে’ভিলিয়ার্স ৭৭, আমলা ৬৫, শামি ৩-৬৮)
ভারত ২১৭ (ধোনি ৬৫, বিরাট ৩১, স্টেইন ৩-২৫।)
|
|
|
পুরনো খবর: স্টেইনদের বিরুদ্ধে আজ ভয়ডরহীন ব্যাটিং চাই |
|
|
|
|
|